অপহরণ আতঙ্কে স্কুলছাত্রী জমজ বোন

ফরিদপুরের চরভদ্রাসনে ইভটিজিংয়ের শিকার হয়ে অপহরণ আতঙ্কে দিন কাটছে স্কুল পড়ুয়া জমজ দুই বোনের। দুই বোনের স্কুলে যাওয়া বন্ধ রয়েছে। বখাটেদের হাত থেকে বাঁচতে বুধবার দুপুরে জমজ দুই বোন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছে।

অপহরন আতঙ্কে থাকা চরভদ্রাসন উপজেলার গাজীরটেক ইউনিয়নের চরহাজীগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণিতে পড়ুয়া দুই জমজ বোন কাজল (১৩) ও রেখা (১৩) চরসুলতানপুর গ্রামের শহিদুল ইসলাম মণ্ডলের মেয়ে।

উপজেলার গাজীরটেক ইউনিয়নের বেপারী ডাঙ্গী গ্রামের বখাটে মিজান, তামেল, আকমাল, রাজু, রনি, রাশেদ, ইমরান বেপারী ও আইয়ুব খালাসী কিছুদিন যাবত ওই দুই জমজ কিশোরীকে স্কুলে যাওয়া-আসার পথে উত্ত্যক্ত করে আসছিল। দু’দিন আগে কাজল তার ভাইয়ের মোটরসাইকেলে চড়ে স্কুল থেকে বাড়ি ফেরার পথে বখাটেরা তাকে টেনে হিচরে অপহরণ করার চেষ্টা করে। এসময় কাজলের ভাই রাকিব হোসেন বাধা দিলে তাকে পিটিয়ে আহত করে বখাটেরা। রাকিব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

এ ঘটনার জেরে বুধবার বেলা ১১টার দিকে ওই বখাটে দল জমজ কিশোরীর বাড়িতে এসে হামলা চালায়। কিশোরীর চাচাতো ভাই বাসার মন্ডল ও তুষার মন্ডলকে হাতুরি পেটা করে গুরুতর আহত করে তারা। তাদেরও চরভদ্রাসন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। এসময় বাড়িতে থাকা দুই বোন কাজল ও রেখা পালিয়ে গিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ দেয়।

জমজ দুই বোন কাজল ও রেখা স্থানীয় সাংবাদিকদের জানায়, গত ডিসেম্বর থেকে ওই বখাটে গ্রুপ তাদের পিছু লেগেছে। তারা স্কুলে ও প্রাইভেট পড়তে যাওয়া-আসার সময় প্রতিনিয়ত কুপ্রস্তাব দিয়ে আসছিল। কিছুদিন আগে টিফিন আওয়ারে ওই বিদ্যালয়ের পাশ থেকে দুই বোনকে কুপ্রস্তাব দিয়ে হাত ধরে টানাটানি করে ব্যর্থ হয়।

গত শনিবার স্কুল থেকে বাড়ি ফেরার জন্য ভাইয়ের মোটরসাইকেলে উঠলে বখাটে গ্রুপ ভাইয়ের সামনে মোটরসাইকেল থেকে টেনে হিচড়ে নামিয়ে অপহরণের চেষ্টা চালায়। এ সময় ভাই রাকিব হোসেন বাঁধা দিতে গেলে বখাটেরা তাকে এলোপাথারি কিলঘুষি ও লাথি মেরে গুরুতর আহত করে।

তারা জানায়, স্থানীয় গ্রাম্য মাতুব্বররা বিষয়টি নিয়ে মীমাংসার বৈঠক করার অজুহাত দেখিয়ে আইনের আশ্রয় নিতে দেয় নাই বলে কিশোরীরা জানায়। বখাটেদের ভয়ে তারা স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দিয়ে বাড়িতেই ছিল। বুধবার তাদের বাড়িতে হামলার চালানোর পর তারা বাড়ি থেকে পালিয়ে গিয়ে ইউএনওর কাছে অভিযোগ দেয়।

চরভদ্রাসন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কামরুন নাহার বলেন, অভিযোগ পেয়েছি। দ্রুত ওই এলাকায় ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান চালানো হবে এবং বখাটেদের পেলেই মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে জেল দিয়ে দেব।

গাজীরটেক ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. ইয়াকুব আলী জানান, ওই নেশাখোর বখাটে গ্রুপটি এলাকায় অতিরিক্ত অন্যায় করে চলেছে। প্রকাশ্য স্কুলছাত্রী অপহরণ করার চেষ্টা চালানোর পরও তারা অস্ত্র নিয়ে এলাকায় ঘুরে বেড়ায় এবং স্থানীয় কোনো মুরুব্বির কথাও বখাটেরা মানে না। তাই আইনের শাসন ছাড়া আর কোনো পথ নেই বলেও তিনি জানান।

চরভদ্রাসন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রাম প্রসাদ ভক্ত বলেন, ইভটিজিংয়ের ঘটনায় কিশোরীর পরিবারের কেউ আমার কাছে আসে নাই। তবে বুধবার আবার বখাটেরা হামলা চালিয়েছে বলে খবর পেয়ে সরেজমিনে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। বখাটেরা গাঁ ঢাকা দিয়েছে। তাদের আটকে অভিযান চলছে।

(ঢাকাটাইমস/৪জুলাই/প্রতিনিধি/এলএ)