রাজশাহীর উন্নয়ন বিবেচনায় ভোট দিতে চান ভোটাররা

রিমন রহমান, রাজশাহী
 | প্রকাশিত : ০৫ জুলাই ২০১৮, ০৮:০৯

ঘনিয়ে আসছে রাজশাহী সিটি করপোরেশন (রাসিক) নির্বাচন। মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই শেষ। প্রকাশ হয়েছে চূড়ান্ত প্রার্থীদের তালিকা। এখন অপেক্ষা প্রতীক বরাদ্দের। যদিও মেয়র পদে দলীয় প্রতীকে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ায় হেভিওয়েট দুই প্রার্থীর প্রতীক সবার আগাম জানা।

তবে ভোটাররা বলছেন, প্রতীক নয়; উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখবে এমন সৎ ও যোগ্য প্রার্থীকে নগর পিতা নির্বাচিত করতে চান তারা। এক্ষেত্রে দল-মতের ঊর্ধ্বে যাওয়ার কথাও জানান ভোটাররা। যোগ্য প্রার্থীকে ভোট দিয়েই তারা তাদের নাগরিক সেবা নিশ্চিত করতে চান। ভোটারদের এমন কথা ঠিক থাকলে এগিয়ে থাকবেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনই।

কেননা, ২০০৮ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত তিনি মেয়র থাকাকালে নগরীতে যে দৃশ্যমান উন্নয়ন করেন, তা পারেননি বিএনপি মনোনীত প্রার্থী ও সদ্য সাবেক মেয়র মোহাম্মদ মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল। অবশ্য পাঁচ বছরের মধ্যে মেয়র হিসেবে বুলবুল অনেকটা সময় দায়িত্ব পালন করতে পারেননি। ফৌজদারি মামলায় দু’দফায় জেল খেটেছেন প্রায় ৬ মাস। সাময়িক বরখাস্ত হয়েছেন একাধিকবার।

মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলের মেয়াদের শেষ দিকে ১৭৩ কোটি টাকার প্রকল্প পায় সিটি করপোরেশন। তবে এটি স্থানীয় সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশার বরাদ্দ। তিনি প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেন সিটি করপোরেশনকে। এর বাইরে উল্লেখযোগ্য তেমন কাজ করতে পারেনি নগর সংস্থা।

এদিকে ঈদের আগে নগর ভবনের কর্মচারীদের বেতন-ভাতা বাকি পড়ে গেলে তারা আন্দোলন শুরু করেন। মানবিক কারণে সেই ১৭৩ কোটি টাকা থেকে কর্মচারীদের বেতনের ব্যবস্থা করে দেন সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা ও সাবেক মেয়র খায়রুজ্জামান লিটন।

২০১৩ সালের ১৫ জুন অনুষ্ঠিত সিটি নির্বাচনে মেয়র হয়েছিলেন বুলবুল। ওই নির্বাচনের আগে চার বছর আট মাস মেয়রের দায়িত্ব পালন করেন জাতীয় চার নেতার অন্যতম শহীদ এএইচএম কামারুজ্জামানের ছেলে এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন। এ সময়ের মধ্যে তিনি নগরীতে প্রায় ৮৫০ কোটি টাকার উন্নয়ন কাজ করেন। সমালোচকরাও এজন্য তার প্রশংসা করেন। এত উন্নয়নের পরও তার এ পরাজয়ের পেছনে আওয়ামী লীগ কর্মীদের একটি অংশের নিস্কৃয়তা, হেফাজতে ইসলামের অপপ্রচার, জামায়াতের টাকায় বিএনপি প্রার্থীর ভোট কেনা এবং নারী ভোটারদের ওপর আস্থা অর্জন না করাকে দায়ী করেন আওয়ামী লীগ নেতারা।

তাই আগামী ৩০ জুলাইয়ের সিটি করপোরেশন নির্বাচনে জয়ী হতে এবার অনেক আগে থেকেই প্রতিটি ওয়ার্ড, পাড়া-মহল্লা চষে বেড়িয়েছেন লিটন। মহানগর বিএনপির সভাপতি বুলবুলও নানা কৌশলে এখন নির্বাচনি প্রচার চালাচ্ছেন।

সাবেক মেয়র খায়রুজ্জামান লিটন বলছেন, আবার নির্বাচিত হলে তিনি উন্নয়নের ধারা ফিরিয়ে আনবেন। আর বুলবুল চাইছেন আরেকবার সুযোগ।

তবে নগরীর তেরোখাদিয়া মহল্লার বাসিন্দা আলফাজ কবির বলছেন, আগের দুই মেয়াদে দুদলের দুই প্রার্থীই মেয়র ছিলেন। রাজশাহীর জন্য কে কী করেছেন, সেটি বিবেচনা করেই তিনি ভোট দেবেন। এক্ষেত্রে দল কিংবা প্রতীক তার কাছে বড় বিষয় নয়। একই কথা বলেছেন কাদিরগঞ্জের বাসিন্দা সুমন শেখ। তার বক্তব্য, যিনি মেয়র হয়ে মশাও মারতে পারবেন না, তাকে ভোট দেয়ার প্রশ্নই ওঠে না। সবার আগে বড় কথা নাগরিকসেবা। আর কে নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করতে পারবেন তা তিনি ভালো করেই জানেন।

মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও দলটির মনোনীত মেয়র প্রার্থী এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, আমি মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর যে উন্নয়ন কাজগুলো করে রেখেছিলাম। সেগুলো বর্তমানে ধ্বংসের পথে। রাজশাহীতে একটি শিল্পনগরীর গড়ে তোলার আশা আমার দীর্ঘ দিনের। রাজশাহীকে ঘিরে আরও অনেক পরিকল্পনা আমার আছে। নগরীর মানুষ সেগুলো জানেন। তাই এবার নির্বাচনে তারা আমাকে ভোট দিয়ে সেই সুযোগ করে দেবে।

বিএনপি মনোনীত মেয়র প্রার্থী মোহাম্মদ মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল বলেন, আমি অনেক দিনই মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে পারিনি। এসব ভোটাররা জানে। সুতরাং, তারা আমাকে আরেকটা সুযোগ দেবে। আর একটা যুদ্ধে নামার জন্য যে কৌশল, প্রক্রিয়া দরকার তা আমরা ইতিমধ্যে নির্ধারণ করেছি। আলাপ-আলোচনার মধ্যে দিয়ে তা বাস্তবে রূপ নেবে।

আওয়ামী লীগ ও বিএনপির দুই প্রার্থী ছাড়াও রাজশাহী সিটি নির্বাচনে মেয়র পদে লড়বেন আরও চার প্রার্থী। তারা হলেন- জাতীয় পার্টির ওয়াসিউর রহমান দোলন, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির হাবিবুর রহমান, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের শফিকুল ইসলাম ও বামপন্থি সংগঠন গণসংহতি আন্দোলন সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থী মুরাদ মোর্শেদ। নির্বাচনে জয়ী হতে তারাও নানাভাবে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে সবচেয়ে যোগ্য প্রার্থীকেই নির্বাচিত করার কথা জানিয়েছেন ভোটাররা।

এদিকে, সুষ্ঠু নির্বাচনের লক্ষ্যে সব ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণের কথা জানিয়েছেন আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা ও সিটি নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা সৈয়দ আমিরুল ইসলাম। তিনি জানান, অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। খুব সুন্দরভাবেই ভোট হবে। নগরীর ৩০টি ওয়ার্ডে এবার ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ১৮ হাজার ১৩৮জন। ভোটকেন্দ্র ১৩৮টি।

(ঢাকাটাইমস/৫জুলাই/ব্যুরো প্রধান/এলএ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :