ছাত্রলীগ নেতার হাতুড়িপেটা তরিকুলকে ‘দেখে রাখছে’ পুলিশ

রিমন রহমান, রাজশাহী
| আপডেট : ০৫ জুলাই ২০১৮, ২০:১৩ | প্রকাশিত : ০৫ জুলাই ২০১৮, ১৭:৫৪

ঢাকায় কোটা সংস্কারের আন্দোলনকারী সংগঠনের নেতাদের পিটুনির প্রতিবাদে গিয়ে হাতুড়ি পেটায় পায়ের হাড় ভেঙে যাওয়া রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তরিকুল ইসলামকে হাসপাতালে তিন দিন ধরে ঘিরে রেখেছে পুলিশ। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীটি বলছে, তারা তরিকুলকে ‘দেখে রাখছে’। তবে এই দেখে রাখায় অস্তস্তিতে তরিকুল ও তার স্বজনর।

কৃষকের সন্তান এই ছাত্রকে গত ২ জুলাই পেটানো হলেও গণমাধ্যমে তার অবস্থা নিয়ে প্রতিবেদন সেভাবে আসেনি। তবে গত দিন দিনে কিছুটা সামলে নিলেও এখনও তার শারীরিক অবস্থা করুণ।

বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ৩১ নম্বর ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা যায়, পুলিশি পাহারায় বিছানায় শুয়ে আছেন তরিকুল। পাশে ছোট বোন ফাতেমা খাতুন। বিছানার ওপর হাসপাতালের ছাড়পত্র পড়ে। ফাতেমা জানালেন, তারা হাসপাতাল থেকে বের হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তরিকুলকে তারা বেসরকারি কোনো হাসপাতালে ভর্তি করবেন। তরিকুলের বন্ধুরা সব ব্যবস্থা করছেন।

দুপুরে ওয়ার্ডের সামনে কয়েকজন পুলিশ সদস্যকে দেখা যায়। একজন পুলিশ সদস্য জানালেন, তারা পুলিশ লাইন থেকে এসেছেন। তরিকুলকে দেখে রাখতে তাদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তরিকুল বলেন, পুলিশ তাকে সারাক্ষণ ঘিরে রাখে। বন্ধু কিংবা সহপাঠীদের তার কাছে ভিড়তে দেয় না।

এই ‘দেখে রাখার কারণ’ অর্থ কী বা কারণ কী, জানতে চাইলে রাজশাহী মহানগর পুলিশের মুখপাত্র সিনিয়র সহকারী কমিশনার ইফতেখায়ের আলম ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে আহত রোগীদের আমরা সব সময় নিরাপত্তা দেই। সে জন্য তরিকুলকেও নিরাপত্তা দেওয়া হচ্ছে, যাতে আর কোনো অঘটন না ঘটে।’

তরিকুলকে ‘দেখে রাখলেও’ তার ওপর হামলাকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার কোনো উদ্যোগ নেই পুলিশে। এই ছাত্রের ওপর হামলাকারীদের সবার ছবি ভিডিও ও ছবিতে স্পষ্ট। এ নিয়ে আইনি কোনো ব্যবস্থাও নেওয়া হয়নি।

জানতে চাইলে নগরীর মতিহার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহাদত হোসেন খান ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের ব্যাপার। তারা যেভাবে চাইবে সেভাবেই আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক লুৎফর রহমান, হামলায় কে বা কারা জড়িত সে ব্যাপারে আমরা খোঁজখবর নিচ্ছি। অবশ্যই জড়িতদের ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ব্যবস্থা নেবে। তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থাও গ্রহণ করা হবে।’

গত সোমবার বিকেলে কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে পতাকা মিছিল বের করলে রামদা, লোহার রড, হাতুড়ি ও বাঁশের লাঠি দিয়ে হামলা করে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী। তখনই মাটিতে ফেলে লাঠি ও হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে আহত করা হয় তরিকুলকে।

এই পিটুনির একটি ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়েছে। তাতে দেখা যায়, মাটিতে ফেলে তাকে চারপাশ থেকে ঘিরে লাঠি দিয়ে দিয়ে পেটাচ্ছে কয়েকজন। এর মধ্যে হলুদ গেঞ্জি পরা একটি ছেলে এসে তার কোমড়ে হাতুড়ি জাতীয় একটি বস্তু দিয়ে মারছে। পরে জানা যায় এই হাতুরির আঘাতেই তরিকুলের পায়ের দুটি হাড়ই ভেঙে গেছে।

হাসপাতাল থেকে দ্রুত ছাড়পত্র দেয়া নিয়ে প্রশ্ন গত সোমবার আহতের পর রাজশাহী মেডিকেলে ভর্তি করা হয় তরিকুলকে। শারীরিক অবস্থা শোচনীয় হলেও তাকে বুধবারই তাকে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে।

অথচ তরিকুল বলছেন, তিনি সুস্থ নন। হাতুড়িপেটায় ডান পায়ের হাড় ভেঙে যাওয়ায় তিন-চারজন না ধরলে তিনি বিছানা ছেড়ে উঠতেই পারেন না। সারাক্ষণ মাথায় আছে নয়টি সেলাইয়ের টনটনে ব্যাথা। তারপরেও হাসপাতাল থেকে তাকে কেন ছুটি দেওয়া হয়েছে, তা তিনি নিজেই বুঝতে পারছেন না।

এক্স-রে রিপোর্টে দেখা যায়, তরিকুলের ডান পায়ের হাড় ভেঙে গেছে। তাই ওই পা প্লাস্টার করে দিয়েছেন চিকিৎসকরা। কিন্তু দুই দিনের মধ্যে তাকে ছাড়পত্র দেওয়ায় বিস্মিত তরিকুলের স্বজন ও সহপাঠীরা। তারা তাকে একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার উদ্যোগ নিয়েছেন।

তরিকুল জানান, তার মাথার ব্যাথাটা একটু কমছে। কিন্তু পায়ের হাড়ভাঙা ব্যাথা সব সময় আছে। তিন-চারজন না ধরলে তিনি নড়াচড়া করতে পারেন না। বুধবার সকালে ওয়ার্ডের চিকিৎসক সুব্রত কুমার প্রামানিক তাকে দেখতে গেলে তিনি এসব কথা জানিয়েছিলেন। কিন্তু দুপুরেই তাকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে। এখন তারা হাসপাতাল ছাড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

তরিকুলকে কেন এত দ্রুত ছাড়পত্র দেয়া হয়েছে, জানতে চাইলে কথা বলতে চিকিৎসক সুব্রত কুমার প্রামাণিককে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি।

হাসপাতালের অর্থোপেডিক বিভাগের প্রধান এম এ কে শামস উদ্দিন বলেন, তিনি বগুড়ায় আছেন। তাই বিস্তারিত বলতে পারবেন না। তবে তিনি শুনেছেন যে, তরিকুলের এই মুহূর্তে যা যা চিকিৎসা প্রয়োজন তা দেওয়া হয়েছে। আগামী দুই সপ্তাহ হাসপাতালে তেমন কোনো কাজ নেই। এই সময়টা বাড়িতে থাকাই ভালো। তাই তাকে ছুটি দেওয়া হয়েছে।

তবে তরিকুল বলেন, সোমবার রাতেই তাকে চিকিৎসক জানিয়েছেন, ভাঙা হাড় জোড়া লাগতে অন্তত তিন মাস সময় লাগবে। চার সপ্তাহ পায়ের প্লাস্টার রাখা হবে। এখন সম্পূর্ণ বিশ্রাম দরকার। অন্তত ১৫ দিন হাসপাতালে থাকার পর তিনি বাড়ি যেতে পারবেন। এর আগে নড়াচড়া করলেও পায়ের ভাঙা হাড় জোড়া লাগতে সমস্যা হবে। কিন্তু পরদিনই ছুটি দেওয়াটা তার কাছে রহস্যজনক মনে হচ্ছে।

তরিকুল ইসলাম রাবির ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী। বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের রাবি শাখার যুগ্ম-আহ্বায়কও তিনি। গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার সুন্দরখোল উত্তরপাড়া গ্রামে তার বাড়ি। তার বাবা খোরশেদ আলম একজন কৃষক। তিন ভাই বোনের মধ্যে তরিকুল মেজ।

তরিকুলের বোন ফাতেমা জানান, তার ভাইকে পেটানোর খবর পেয়ে তার বাবা খোরশেদ আলম ও মা তহমিনা বেগম অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তাই অসুস্থ ছেলেকে দেখতে তারা এখনও রাজশাহী আসতে পারেননি। বাবা-মা ছাড়াই তরিকুলের চিকিৎসা নিয়ে তিনি এখন চরম বেকায়দায় পড়েছেন।

ঢাকাটাইমস/০৫জুলাই/আরআর/ডব্লিউবি

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বাংলাদেশ এর সর্বশেষ

ফেনীতে অনাবাদি জমিতে শতকোটি টাকার তরমুজ চাষ

মাগুরায় চোরাই মোটরসাইকেলসহ তিন চোর আটক

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে গাড়ির ধাক্কায় মোটরসাইকেল চালকের মৃত্যু 

ফেসবুক আইডি ক্লোন করে প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ আত্মসাৎ, যুবক গ্রেপ্তার

ফরিদপুর প্রেসক্লাবের নবনির্বাচিত নেতৃবৃন্দের সঙ্গে পুলিশ সুপারের মতবিনিময়

পতেঙ্গায় ফিশিং বোটের ইঞ্জিন বিস্ফোরণে ৪ জন দগ্ধ

চট্টগ্রামে ঈদকে সামনে রেখে জালনোট চক্রের ৩ সদস্য গ্রেপ্তার

বরিশালে নামাজের সময় মসজিদের এসি বিস্ফোরণ

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে দ্রুতগতির লেনে যাত্রী নামানোর অপরাধে ৩৩ যানবাহনকে মামলা 

বরগুনা প্রেসক্লাব দখলের মামলায় ৭ জন কারাগারে  

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :