প্রধানমন্ত্রীর দেয়া বাড়ি পেলেন কাপাসিয়ার গৃহহীনরা

শ্রীপুর (গাজীপুর) প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ০৫ জুলাই ২০১৮, ১৮:৫০

বিধবা আমেনা, কাপাসিয়া উপজেলার ফেটালিয়া গ্রামের বাসিন্দা। নয় বছর আগে স্বামী সামশুদ্দিন মারা যান। পাতার ছাউনী আর বেড়ার তৈরি একমাত্র ছোট্ট একটি ঘরেই চার মেয়েকে নিয়ে ছিল তাদের বসবাস। নিরপত্তাহীনতা আর আতঙ্কে তাদের প্রতিটি মুহূর্ত কাটত। দিনে যেনতেন- রাতে কুকুর, বেড়াল, শিয়াল, সাপ ঢুকে পড়ত ওই ঘরে থাকা খাবার খাওয়ার জন্য। তাই খাবার রক্ষায়, জীবন রক্ষায় কেউ ঘুমাতেন আর কেউবা জেগে থেকে পালা করে ওই ঘর পাহারা দিত। এলাকাবাসীর সহযোগিতায় কয়েক বছরের মধ্যে তার চার মেয়েরই বিয়ে হয়ে যায়, প্রকৃতির নিয়মেই মাকে রেখে তাদের চলে যেতে হয় যার যার শ্বশুরবাড়িতে। সেখান থেকেই যতটুকু সম্ভব মেয়েরা মায়ের খোঁজ-খবর রাখেন, সহযোগিতা করেন। তার কোন ছেলে সন্তান নেই।

স্থানীয় তারাগড়ঞ্জ এলাকার ব্যবসায়ী মো. ওসমান গনি জানান, স্বামীর মৃত্যুর পর থেকে এ বাড়ি ও বাড়ি ঝিঁয়ের কাজ করে যা পেতেন তা দিয়েই তার প্রতিদিনের খাবারের চাহিদা মিটলেও অন্য মৌলিক চাহিদাগুলো পূরণ করা সম্ভব হতো না তার পক্ষে। আমেনা এখন বয়সের ভারে নূয্য। তার বয়স প্রায় ৭৫ বছর হলেও জাতীয় পরিচয়পত্রে কারো ভুলে তার বয়স কম উঠায় তিনি বয়স্ক ভাতাও পান না। বিধবা ভাতাও পান না বলে জানান আমেনা।

মানুষের বাড়ি কাজ করারও তেমন শক্তিও তার এখন নেই। এমন সময় স্থানীয় আশরাফুল আলম খোকন (যিনি প্রধানমন্ত্রীর উপ-প্রেস সচিব) প্রধানমন্ত্রীর এক প্রকল্পে ঘর পাবার জন্য যার জমি আছে, ঘর নেই, তার নিজ জমিতে গৃহ নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় আমেনার নামটি তালিকাভুক্ত করেন। এর কিছুদিন পরই সরকারি লোকজন কাঠ, ইট, টিন, সিমেন্টসহ নানা গৃহ নির্মাণের সামগ্রী ও মিস্ত্রি তার বাড়িতে পৌঁছে দেয়। দ্রুত তৈরি হয়ে গেল তার এক কামরার পাকা ফ্লোর আর টিনের বেড়া, চৌচালা টিনের ঘর এবং একটি উন্নত টয়লেট। এর জন্য তার একটি টাকাও দিতে হয়নি। শুধু দিতে হয়েছে জমির দলিল আর জাতীয় পরিচয়পত্র ও জন্ম নিবন্ধের ছবি। তবে প্রধানমন্ত্রীর কাছে তিনি ঘরের সঙ্গে বিশুদ্ধ পানির জন্য একটি টিউবওয়েল স্থাপনের জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন।

আমেনা ঘরের কথা বলতে গিয়ে আবেগ জড়িত কন্ঠে বলেন, শেখের বেটিরে যেন আল্লাহ আমার চাইতে বেশি সুখ-শান্তি দেন। সারাজীবন যেন সব দুঃখীদের পাশে থাইকা শান্তিতে দেশ চালাইতে পারেন।

দ্বিতীয় প্রকল্পের দ্বিতীয় তালিকায় একই রকম ঘর পেলেন কাপাসিয়া উপজেলার একঢালা গ্রামের ঝালমুড়ি বিক্রেতা আব্দুল আজিজ। তারও বাবা-মা কেউ নেই। নানির দেয়া এক খণ্ড জমিতে খুপড়ি ঘর তুলে স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে বাস করছেন। তিনি বলেন, আগে জানতাম না শেখ হাসিনা বিনা পয়সায় ঘর তুলে দেন। খবর পেয়ে স্থানীয় ওসমান গনির সঙ্গে দেখা করি। তিনি পরে আমার নামটি তালিকায় নামটি তুলে দেন। এখন আমি টিনের ঘরে শান্তিতে বাস করছি। দোয়া করি, আল্লাহ যেন শেখ হাসিনারে পরপার ও এইপারে শান্তি দেন।

একই উপজেলার ঘিঘাট গ্রামের বাসিন্দা বিধবা পারভীন জানান, ১০ মাস আগে (গেল কোরবানি ঈদের দিন বিকালে) স্বামী স্ট্রোক করে মারা যান। তারও একটি ছাপড়া ঘর ছিল। বৃষ্টি হলেই ঘরের মেঝেতে পানি জমত, ব্যাঙ্গ মাছ ঢুকে পড়ত। মাচা টানিয়ে তাতে সন্তানদের নিয়ে ঘুমোতাম। বড় ছেলে পারভেজ বাসে হেল্পারি করে। তার আয়ে চলে পাঁচজনের সংসার। কিন্তু ঘর বানানোর সামর্থ্য ছিল না। পরে কয়েক মাস আগে শেখ হাসিনা আমাকে সেমি পাকা ঘর এবং উন্নত টয়লেট করে দিয়েছেন। এখন পাকা ঘরে সুখেই আছি, ভাল আছি।

একই অনুভূতির কথা জানালেন একঢালা গ্রামের বিধবা হালিমা খাতুন, আব্দুল রশিদসহ অনেকে।

কাপাসিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাকছুদুল ইসলাম জানান, তার উপজেলায় ২০১৬-২০১৭ অর্থ বছরে ওই প্রকল্পের পাকা মেঝসহ ২৪টি বারান্দাসহ টিনের ঘর ও টয়লেট নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে এ উপজেলায় এ প্রকল্পের আওতায় একই ধরনের ৩৭২টি টিনের ঘর ও টয়লেট নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে।

কাপাসিয়া উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. বাকি বিল্লাহ জানান, প্রতিটি ঘরের দৈর্ঘ্য সাড়ে ১৬ ফুট, প্রস্থ সাড়ে ১০ ফুট, বারান্দার প্রস্থ সাড়ে ৫ ফুট। প্রতিটি ঘর পাকা ভিটি, চৌচালা টিনের ঘর ও টয়লেটের জন্য নির্মাণ খরচ ধরা হয়েছে এক লাখ টাকা।

গাজীপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রেবেকা সুলতানা জানান, তিনি ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে তার উপজেলায় এ ধরনের দেড়শ’র মত ঘর-টয়লেট নির্মাণের প্রকল্প পেয়েছেন। তবে বর্তমানে নির্মাণ সামগ্রীর মূল্য বেড়ে যাওয়ায় একলাখ টাকায় ঘর-টয়লেট নির্মাণ কাজ কষ্ট সাধ্য হচ্ছে। এধরনের প্রকল্প গাজীপুরের বিভিন্ন উপজেলায় চলমান রয়েছে।

প্রকল্প পরিচালক মো. আবুল কালাম সামশুদ্দিন জানান, সারাদেশে এ ধরনের প্রকল্প চলছে। এ প্রকল্প ২০১৯ সালের জুন পর্যন্ত চলবে।

তিনি আরো জানান, প্রধানমন্ত্রী ‘গৃহহীন সকলকে ঘর দেবেন’ মর্মে যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন- সে মোতাবেক আশ্রায়ন প্রকল্প থেকে কার্যক্রম চলছে। এ আশ্রায়ন প্রকল্পের (দ্বিতীয় পর্যায়ের) আওতায় সারাদেশে এক লাখ ঘর-টয়লেট নির্মাণ করা হবে।

(ঢাকাটাইমস/৫জুলাই/প্রতিনিধি/এলএ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :