সঠিক প্রার্থী মনোনয়ন চ্যালেঞ্জিং বিষয়

অনলাইন ডেস্ক
| আপডেট : ০৮ জুলাই ২০১৮, ০৮:২৭ | প্রকাশিত : ০৮ জুলাই ২০১৮, ০৮:২৩

ড. শান্তনু মজুমদার―ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক। রাজনীতি, ধর্মনিরপেক্ষতা, গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও আন্তর্জাতিক বিষয়াদি নিয়ে গবেষণা ও লেখালেখি করেন। আওয়ামী লীগের রাজনীতির একজন নিবিড় পর্যবেক্ষক। দলটি সদ্যই ৬৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন করেছে। তারা টানা ৯ বছর ধরে রাষ্ট্র পরিচালনায় আছে। আওয়ামী লীগের জনসম্পৃক্ততার বর্তমান পর্যায় নিয়ে কথা বলেছেন ড. শান্তনু মজুমদার। এই সময় থেকে তার সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মহিউদ্দিন মাহী শেখ সাইফ

আওয়ামী লীগ ৬৯ বছর পার করে ৭০ বছরে পা রাখলো। ঐতিহ্যবাহী এই দল নিয়ে কী বলবেন?

আওয়ামী লীগ ৭০ বছরে পড়লো এটা শুধু যে বাংলাদেশের জন্য তাৎপর্যবাহী তা কিন্তু নয়, আমি কিন্তু আর একটা জায়গা থেকেও দেখি। সেটা হচ্ছে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী বলেন সেখানেও আওয়ামী লীগ। এই দলের নেতা ছিলেন স্বাধীনতার স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। সুতরাং এই দলটি বাংলাদেশের জাতীয় ইতিহাসের অংশ, অবিচ্ছেদ্য অংশ। আমি আর একটা জায়গা থেকে ইদানীং ভাবতে শুরু করেছি। এটা নিয়ে গবেষণা করা যায় কি না সেটাও মাথার ভেতর আছে। আমার একটা অনুমান হচ্ছে আমাদের উপমহাদেশের যে প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো, পুরনো রাজনৈতিক দলগুলো সেক্ষেত্রে পাকিস্তানের পিপলস পার্টিকে ধরি, মুসলিম লীগকে ধরি। ভারতের ক্ষেত্রে পুরনো দল হিসেবে যদি কংগ্রেসকে ধরি; এমনকি যদি কমিউনিস্ট পার্টিকে ধরি; আমরা দেখব এই দলগুলো ক্রমাগত সংকুচিত হচ্ছে। ভোটের দিক থেকে, জনসমর্থনের দিক থেকে। মজার বিষয় হচ্ছে, আওয়ামী লীগ গত এক-দেড় দশকে প্রসারিত হয়েছে।

এর কারণ আসলে কী?

আওয়ামী লীগের নিন্দা, আলোচনা-সমালোচনা অনেক আছে, ব্যর্থতা আছে। কিন্তু রাষ্ট্রবিজ্ঞানের মানুষ হিসেবে আমার কাছে যেটা মনে হয় একটু গবেষকের দৃষ্টিতে দেখতে পারি। দেখা দরকার। আমার মনে হয় এই ফাইন্ডিংস ইন্টারেস্টিং হবে। এটা কেন? ভালো ভালো কাজ করাতে নাকি আওয়ামী লীগ এমন কোনো ট্যাকটিস অবলম্বনে সক্ষম হয়েছে যেখানে এই পথটা করে নিতে পেরেছে। আর একটু যদি এগিয়ে বলি, গত ৮-১০ বছর যাবৎ যদি আমরা দেখি, যখন থেকে বিশ্বে মন্দা পরিস্থিতি শুরু হলো। ২০০৮ সালের দিক থেকে। তারপর থেকেই আমরা দেখি যে, বিশ্বব্যাপী উদার যে গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলগুলো, সেগুলোর অবস্থা বেশ খারাপ।

উন্নত দেশগুলোর পরিস্থিতি কী একই রকম?

প্রায় সব দেশেই। ব্রিটেনে লেবার পার্টির স্ট্রাগল করেছে। ইদানীং অবস্থা একটু ভালো হয়েছে। ফ্রান্সে ক্ষমতা থেকে বিদায় হয়েছে। হাঙ্গেরি থেকে বিদায় হয়েছে। জার্মানিতে আমরা দেখব ক্রিস্টান ডেমোক্রেটিক আসলে যে একটা উদারনৈতিক দল। মার্কেলের যে দল তারাও কিন্তু স্ট্রাগল করছে। আমরা আমেরিকাতে দেখেছি কিভাবে ডোনাল্ট ট্রাম্প নামের একজন লোক রিপাবলিকান পার্টির ক্ষমতায় চলে আসছে। এগুলো পশ্চিমা উদারনৈতিক গণতান্ত্রিক দেশগুলোর কথা যদি বাদ দেই এর বাইরে কি দেখব? আমরা দেখব যে আদৌ গণতান্ত্রিক মতাদর্শ বহন করে না। এমন রাজনৈতিক দল ক্ষমতায়। পুতিনের কথা যদি বলি, এরদোগানের কথা যদি বলি। উদার রাজনৈতিক দলগুলো ক্রমাগত সংকুচিত হচ্ছে। এর বিপরীতে কাদের জয় জয়কার? উগ্র জাতীয়তাবাদী, ইউরোপ আমেরিকার ক্ষেত্রে অভিবাসন বিরোধী যাদেরকে বলছি। পপুলিস্ট যারা জনপ্রিয়তাবাদী যাদেরকে বলছি। সেসব রাজনৈতিক দল ভালো করছে।

আওয়ামী লীগ তো তাদের বিপরীতধর্মী দল, উদারনৈতিক-প্রগতিশীল বলা হয়ে থাকে।

এই বিবেচনা থেকেই আমার কাছে আওয়ামী লীগ একটা ইন্টারেস্টিং দল। খুবই ইন্টারেস্টিং দল মনে হয়। আমরা অফিসিয়াল গঠনতন্ত্র যদি দেখি। কয়েকদিন আগেও আমি আর একবার দেখার চেষ্টা করেছি। সেখানে তার অনেক সীমাবদ্ধতা আছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে এসব সীমাবদ্ধতা ধরে রেখেও এক ধরনের প্রসারণ ঘটছে। এটা আমার কাছে খুবই ইন্টারেস্টিং ব্যাপার। আওয়ামী লীগ বিষয়ে এটা আমার বর্তমান সময়ের ভাবনা। আমি আসলে স্পিরিটের জায়গাটার কথা বলছি। সাংগঠনিক জায়গা থেকে বলছি। আমরা মোট ভোট দিয়ে দেখব না। আসলে মোট জনসংখ্যা বাড়লে, মোট ভোটও বাড়ে। দক্ষিণ এশিয়ার প্রধান দেশগুলোর রাজনীতির কথা যদি বলি এই বিবেচনায় একমাত্র আওয়ামী লীগ প্রসারণ ঘটছে।

আর একটু বিস্তারিত বলবেন?

একেক সময় আমার মনে হয়, বিশ্বরাজনীতি এবং আঞ্চলিক রাজনীতিতে যেগুলো এখন ফ্যাক্টর হয়ে উঠেছেÑ উগ্র জাতীয়তাবাদ, সাম্প্রদায়িকতা, মৌলবাদের মতো বিষয়, জঙ্গিবাদের মতো বিষয়ে আওয়ামী লীগ উড়ে যাওয়ার কথা। লিটারারি উড়ে যাওয়ার কথা। পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গায় এসব ঘটনা ঘটেছে। ভারতের কংগ্রেসের দুরবস্থা দেখেন। এটা শুধু গান্ধী পরিবারের দুর্বলতা দিয়ে দেখলে হবে না। ইনফ্যাক্ট কংগ্রেস নামের যে ম্যাজিক, সে ম্যাজিকটা সম্পূর্ণভাবে বিলীন হয়ে গেছে। পাকিস্তানে সামরিক বাহিনী, উগ্রবাদীদের চাপে বা পারিবারিক দুর্নীতির কথা যদি বলি। এক সময় পাকিস্তান পিপলস পার্টি এক নম্বর দল। প্রায় বলতে গেলে এর ভাগ্য এখন সুতোর উপরে ঝুলছে। এমনকি মুসলিম লীগেরও প্রায় একই অবস্থা। ওই জায়গা থেকে আওয়ামী লীগ আমার কাছে ব্যতিক্রম মনে হচ্ছে। আমি আরো বলতে চাই, আওয়ামী লীগ গত এক-দেড় দশকে মতাদর্শের জায়গায় তারা বাস্তবতাকে অনুসরণ করেছে। ফলে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে প্রচ- রকমের যে অস্ত্র সেটা এখন আর খুব একটা কাজে লাগছে না। এটা আওয়ামী লীগকে হেল্প করেছে।

আওয়ামী লীগ তাহলে সময়ের সঙ্গে নিজে এখন পরিবর্তন করছে?

আওয়ামী লীগের পরিবর্তনের সূচনা আসলে ১৯৯১ সালে জাতীয় নির্বাচনের পরাজয়ে। এরপর তারা উল্লেখযোগ্য পরিমাণে ব্যবসায়ী, অবসরপ্রাপ্ত সামরিক কর্মকর্তা ও আমলাদেরকে তারা নমিনেশন দিয়েছে। দ্বিতীয়ত ধর্মীয় রাজনীতিকে স্মার্টলি হ্যান্ডেল করাÑ এসব নিয়ে আমি ভালো-মন্দের সিদ্ধান্তে যাচ্ছি না। তৃতীয়ত, ২০০৮ সালের নির্বাচন পূর্ববর্তী যে সময়টা, সেই সময়টাতে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের চেতনার যে একটা ফ্লো তৈরি হয়েছে। সেক্টর কমান্ডাররা বলি, ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি বলি, মিডিয়া বলিÑ সবমিলিয়ে প্রচ-ভাবে একটা মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষে হাওয়া তৈরি হয়েছে। এর সুবিধা গেছে আওয়ামী লীগের ঘরে। তারা রাজনৈতিক দল হিসেবে এসব ক্ষেত্রে বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিতে সক্ষম হয়েছে।

তারা টানা ১০ বছর ধরে ক্ষমতায়। আপনার মূল্যায়ন কী?

আমি মূল্যায়নের ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের যে সাফল্যগুলো দেখি তার মধ্যে প্রথমেই যুদ্ধাপরাধীদের বিচারটা নিষ্পন্ন করতে পারা। আর একটা হচ্ছেÑ সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতাকে পুনরায় প্রবিষ্ট করানো। তৃতীয় হচ্ছেÑ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মতো একটা ভয়াবহ জিনিস বাতিল করা। তারা হয়তো দলীয় দৃষ্টিভঙ্গির জায়গা থেকে এটা বাতিল করেছে। কিন্তু আমি মনে করি এর মধ্য দিয়ে জাতির বড় একটা লাভ হয়েছে। এ কথা কেন বলছি? কারণ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কথা বলে বলে আমরা একদল অনির্বাচিত লোকের হাতে তিন মাস রাষ্ট্রক্ষমতা দিয়ে দিচ্ছি। অথচ গণতন্ত্রের একটা রুট আছে। রাষ্ট্র পরিচালনা শুধু জ্ঞানী লোক বা বিচক্ষণ লোক, ইংরেজি জানা লোকদের তা কিন্তু নয়। উপরোক্ত তিনটা কারণে আওয়ামী লীদের চিন্তার জায়গা থেকে সাফল্য পেয়েছে। আর অর্থনৈতিক জায়গা থেকেও এখন বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টি আকর্ষণে সমর্থ হয়েছে।

আওয়ামী লীগ তো আগামী নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত হচ্ছে। কীভাবে দেখছেন?

বাংলাদেশে ভোটের বাদ্যটা বেজে গেছে। ভোটের ঢাকে কাঠি পড়ে গেছে বলা চলে। ঈদ গেল। এখন এটা আস্তে ধীরে আরো চাঙ্গা হবে। কোরবানির ঈদের পর এটা সম্পূর্ণভাবে শুরু হয়ে যাবে। আমরা সবার অংশগ্রহণে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠিত হোক সেই আশা করি। আমরা দেখেছি, ক্ষমতাসীন দলের প্রধান হিসেবে শেখ হাসিনা দলের সবাইকে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে আহ্বান জানিয়েছেন। এটা খুবই স্বাভাবিক। তিনি তাঁর কাজ এগিয়ে রাখতে চাচ্ছেন। আমার মনে হয় এবার বিএনপিকে নির্বাচনে আনার চেয়েও আওয়ামী লীগের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হবে গত ৮-১০ বছরে যারা নিন্দনীয় হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে, এই রকম প্রার্থীরা যদি থেকে থাকে তাদেরকে বাদ দিয়ে নতুন লোকজনকে দেয়ার বিষয়টি। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী অবশ্য এই ইঙ্গিত দিয়েছেন। তারপরও এই সাহস তারা অর্জন করবেন কি নাÑ এটা আমার কাছে মনে হয় খুব একটা বড় চ্যালেঞ্জ। এখানে অনেক বিচার-বিবেচনার বিষয় আছে। আওয়ামী লীগ কি নতুনদের মনোনয়ন দেবে? এখানে একটা বিষয় হচ্ছে, মনোনয়ন একবার দেওয়া হয়ে গেলে দলের ভেতরে সব পক্ষ একাট্টা হয়ে প্রার্থীর পক্ষে কাজ করবেন কি না। এগুলো অনেক চ্যালেঞ্জিং বিষয়।

আপনাকে ধন্যবাদ।

এই সময় পরিবারের সবাইকে শুভেচ্ছা।

(ঢাকাটাইমস/০৭জুলাই/জেবি)

সংবাদটি শেয়ার করুন

সাক্ষাৎকার বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

সাক্ষাৎকার এর সর্বশেষ

‘স্থিতিশীল সামষ্টিক অর্থনীতির স্বার্থে সরকারকে ভারসাম্যমূলক নীতি-উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে’: ড. আতিউর রহমান

প্রতি মুহূর্তেই মনে হচ্ছিল আর্মিরা ধরে নিয়ে যাবে: ফরিদা খানম সাকি

দাম বাড়ালে এতক্ষণে কার্যকর হয়ে যেত: ক্যাব সহ-সভাপতি নাজের হোসাইন

জন্ম থেকেই নারীদের যুদ্ধ শুরু হয়: নারী উদ্যোক্তা ফরিদা আশা

নারীরা এখন আর পিছিয়ে নেই

ভবন নির্মাণে সিটি করপোরেশনের ছাড়পত্র নেওয়ার নিয়ম করা উচিত: কাউন্সিলর আবুল বাশার

তদারকি সংস্থা এবং ভবন নির্মাতাদের দায়িত্বশীল হতে হবে: অধ্যাপক আদিল মুহাম্মদ খান

বেইলি রোডের আগুনে রাজউকের ঘাটতি রয়েছে: মো. আশরাফুল ইসলাম

নতুন করে পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে নিশ্চিত হয়ে ভবন অনুমোদন দিতে হবে: ইকবাল হাবিব

বীমা খাতে আস্থা ফেরাতে কাজ করছি: আইডিআরএ চেয়ারম্যান জয়নুল বারী

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :