ভোট নিয়ে আওয়ামী লীগের দুশ্চিন্তা ‘দ্বন্দ্ব’

তানিম আহমেদ, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ০৯ জুলাই ২০১৮, ০৮:৩৭ | প্রকাশিত : ০৯ জুলাই ২০১৮, ০৮:০৮
আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভায় বক্তব্য রাখছেন শেখ হাসিনা

‘অংশগ্রহণমূলক’ এবং ‘কঠিন’ জাতীয় নির্বাচন নিয়ে যখন আলোচনা চলছে, তখন আওয়ামী লীগ চিন্তিত দলীয় কোন্দল, অনৈক্য আর অনুপ্রবেশ নিয়ে।

আগামী জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে দলের উপজেলা এবং ইউনিয়ন পর্যায়ের নেতাদেরকে ঢাকায় ডেকে এনে এই বার্তাই দেয়া হয়েছে।

দলের সভাপতি শেখ হাসিনা আর সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের যেমন দ্বন্দ্বের বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছেন, তেমনি তৃণমূলের নেতারাও জানিয়ে দিয়েছেন কীভাবে ভুগছেন তারা।

ভোট এলে আওয়ামী লীগ যেন আওয়ামী লীগের শত্রু না হয়ে যায়, সে জন্য উদ্যোগী হওয়ারও আকুতি জানানো হয়েছে তৃণমূলের পক্ষ থেকে।

চলতি বছরের ডিসেম্বরেই জাতীয় নির্বাচন ধরে আগাচ্ছে আওয়ামী লীগ। আর দশম সংসদ নির্বাচন বিএনপি-জামায়াত জোট বর্জন করলেও এবার অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন ধরে নিয়েই আগাচ্ছে আওয়ামী লীগ।

আর অংশগ্রহণমূলক ভোট হলে সেটি যে কঠিন হবে, সেটি ভালো করেই জানেন শেখ হাসিনা। আর এই কথাটিই ‍তিনি জানিয়েছেন তৃণমূলকে।

ক্ষমতাসীন দলের নেতারা বলছেন, আগামী নির্বাচনকে ঘিরে তাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি শঙ্কা আছে দলের ভেতরের এই বিরোধ। আর গত পাঁচ বছর ধরেই বিভিন্ন স্থানীয় নির্বাচনে এই বিরোধের কারণে কয়েক উপজেলা, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদে নিয়ন্ত্রণ হারাতে হয়েছে এ কারণে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই বিরোধ ঠেকাতে না পারলে পরিণতি যে শুভ হবে না, এটা দলের শীর্ষ পর্যায় থেকে তৃণমূল-সব জায়গায় বুঝতে পারছেন নেতারা।

গত ৩০ জুন জেলা ও উপজেলা এবং ৩০ জুন আর ৭ জুলাই ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এবং জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে সভা করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি।

তিন দিনই শেখ হাসিনা দ্বন্দ্ব মেটানোর কথা বলেছেন। একই কথা বলেছেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরও। বলেছেন, আওয়ামী লীগ এক থাকলে কেউ হারাতে পারবে না। কিন্তু এক না থাকলে পরিণতি ভালো হবে না।

কেন্দ্রীয় নেতাদের পাশাপাশি দ্বন্দ্ব নিয়ে সতর্কতা এসেছে তৃণমূলের নেতাদের পক্ষ থেকেও।

ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বেনজীর আহমেদ বলেন, ‘ভোটের মাঠে আওয়ামী লীগের কোনও সমস্যা আছে বলে মনে হয় না। কিন্তু আমাদের সমস্যা হচ্ছে দলের কোন্দল। তৃণমূলে একইসঙ্গে কর্মসূচি পালনের কোনও পরিবেশ নেই।’

সুনামগঞ্জের মোহনপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হেমন্ত তালুকদার বলেন, ‘আওয়ামী লীগের শত্রু আর কেউ নাই। নির্বাচন আসলেই আওয়ামী লীগের শত্রু আওয়ামী লীগ হয়ে যায়।’

সেই সঙ্গে অনুপ্রবেশ নিয়েও সতর্কতা এসেছে নেতাদের পক্ষ থেকে। আওয়ামী লীগের সভাপতি বাকি বিল্লাহ অনুপ্রবেশ ঠেকাতে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানিয়ে বলেন, ‘নতুন করে অনেকে নৌকায় ওঠার কারণে আমাদের পেছনে ভিজে যাচ্ছে। এটা অব্যাহত থাকলে নৌকার সলিল সমাধি হবে। নৌকা তীর খুঁজে পাবে না।’

আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা মনে করেন, ঢাকায় ডেকে এনে শেখ হাসিনা তৃণমূলের নেতাদেরকে এই কথাগুলো বলে দেয়ার ইতিবাচক প্রভাব পড়তে বাধ্য। আর এই সভা শেষে তৃণমূলের নেতারও অঙ্গীকার করেছেন সব দ্বন্দ্ব ভুলে এক হয়ে কাজ করার।

দলের সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, নেত্রীর সঙ্গে তৃণমূলের নেতাদের যে সংযুক্তি হলো এটাই উদ্দীপনা সৃষ্টি হয়েছে। এ উদ্দীপনা আমাদের আগামী নির্বাচনে কাজে দেবে।’

যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ বলেন, ‘সভায় নেতাদের দুইটি গাইডলাইন দেয়া হয়েছে। প্রথমত. দ্বিধাদ্বন্দ্ব দূর করে কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত সংগঠনকে শক্তিশালী করা। যাতে নৌকার বিজয় সুনিশ্চিত হয়।’

‘দ্বিতীয়ত, ‘সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের সকল তথ্য উপাত্ত সাধারণ জনগণের কাছে পৌঁছানো যাতে তারা আমাদের মনোনীত প্রার্থীকে ভোট দিয়ে বিজয়ী করে।’

হানিফ বলেন, ‘বিশেষ বর্ধিত সভার কারণে তৃণমূল নেতা-কর্মীরা অত্যন্ত উজ্জীবিত ও খুশি যে তারা সরাসরি আমাদের দলের সভাপতি শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক করতে পেরেছেন এবং নির্দেশনা পেয়েছেন। আবার কয়েকজন নেতা বক্তব্য দেয়ার সুযোগও পেয়েছেন। যা আগামী নির্বাচনে জয়লাভে ভূমিকা রাখবে বলে আমি মনে করি।’

দলের স্বার্থে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার অঙ্গীকার তৃণমূলের নেতাদের

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলের কালিকচ্ছ ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক ছলিম উদ্দিন গণভবনে এসে যারপরনাই খুশি। ঢাকাটাইমসকে তিনি বলেন, ‘নেত্রী আমরারে গণভবনে দাওয়াত দিছে, এহানো আইয়্যা আমরার ভালা লাগতাছে। নেত্রী আমরারে যেইতা (যা) করনের (করার) লাইগ্যা কইছে, আমরা হেইতাই (তাই) করাম (করব)। আমরা যেন (যে) গেছি এই হুশিতে (খুশি) অহন সব কাম আগে থিক্কা (থেকে) বালা (ভালো) অইব।’

নোয়াখালীর সুবর্ণচর উপজেলার চরবাটা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মোস্তফা পারভেজ বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী আ্যাঁঙ্গোরে (আমাদের) ইঁয়ানে (গণভবনে) ডাকি যে মূল্যায়ন কঁইচ্চে, এতে আমরা গর্ববোধ কঁইচ্ছি। হেঁতেন (তিনি) যি নির্দেশ দিবেন, তা আমরা অক্ষরে অক্ষরে পালন করুম।’

নোয়াখালীর সুবর্ণচর উপজেলার চরবাটা ইউনিয়ের সভাপতি মোস্তফা পারভেজ বলেন, ‘নেত্রী যে আমাদের মতো তৃণমূল নেতাদের গণভবনে ডেকেছেন এতে আমরা কৃতজ্ঞ। নেত্রী আমাদের কথা শুনেছেন, নির্দেশনা দিয়েছেন। আমাদের যে মূল্যায়ন নেত্রী করেছেন আগামী নির্বাচনে শুধু নয় সব সময় নেত্রীর মূল্যায়নের প্রতিদান দিতে আমরা প্রস্তুত।’

মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার ৮নং দক্ষিণবাগ ইউনিয়ের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল জলিল বলেন, ‘নেত্রী আমাদের গণভবনে যেকে যে দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। আমরা সেই অনুযায়ী আগামী নির্বাচনে নৌকার প্রার্থীকে বিজয়ী করতে আমরা কাজ করব।’

চট্টগ্রাম দক্ষিণ শাখা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোসলেম উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আমাদের আসল শক্তি হলো তৃণমূল। আমরা যখন সরকারি দলে থাকি তখন কিছু সমন্নয়হীনতা হয়ে যায় আমাদের দলে কিন্তু এ বর্ধিত সভায় প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে নেতারা আশ্বস্ত হয়েছে এবং সবাই মিলে এক সঙ্গে আগামী নির্বাচনে নৌকার বিজয়ে কাজ করবে।’

‘প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে তৃণমূলের নেতারা গতি পেয়েছে। কিছু কিছু জায়গায় স্থানীয় সংসদের সঙ্গে বিরোধ থাকলেও দলের স্বার্থে আগামীতে তা মিটে যাবে বলে আমি মনে করি।’

সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শফিকুর রহমান চৌধুরী বলেন, ‘তৃণমূলে নেতাদের গণভবনে ডেকেছেন তাতে দলের সর্বনিম্ন স্তরের নেতাকর্মীদের সাংগঠনিক কাজের গতি বাড়বে। তারা আগামী নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর পক্ষে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করবে।’

কুষ্টিয়া জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সদর উদ্দিন খান বলেন, ‘বর্ধিত সভার কারণে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা খুশি। তারা সকল দ্বিধাদ্বন্দ্ব ভুলে নৌকার বিজয়ে কাজ করবেন বলে শেখ হাসিনাকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।’

ঢাকাটাইমস/০৯জুলাই/টিএ/ডব্লিউবি

সংবাদটি শেয়ার করুন

রাজনীতি বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

রাজনীতি এর সর্বশেষ

প্রতিমা পোড়ানোর মিথ্যা অভিযোগে হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের শাস্তি দিতে হবে: ছাত্রশিবির সভাপতি

আল্লামা ইকবালের ৮৫তম মৃত্যুবার্ষিকীতে মুসলিম লীগের আলোচনা সভা

সীমান্তে বাংলাদেশি হত্যার প্রতিবাদ জানাল রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন

ভারতীয় পণ্য বর্জন চলবে: ফারুক

যুবদলের নতুন কমিটির দাবিতে সাবেক নেতাদের  মিছিল 

খুলনায় গির্জায় অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে বিএনপি নেতা বকুলের সহায়তা

শ্রমিকদের হত্যাকাণ্ডের বিচারে সময়ক্ষেপণ দেশবাসী মেনে নেবে না: খেলাফত মজলিস

আওয়ামী লীগের যৌথসভা মঙ্গলবার

ট্রেন দুর্ঘটনায় আহত আনু মুহাম্মদের সুস্থতা কামনা মির্জা ফখরুলের

আসুন সিদ্ধান্ত নিয়ে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের ডাক দেই: ড. কামাল হোসেন

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :