‘খালেদাকে কারাগারে রেখে কোনো নির্বাচন নয়’

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ০৯ জুলাই ২০১৮, ১৯:৪৯ | প্রকাশিত : ০৯ জুলাই ২০১৮, ১৮:৪৯

দলীয় চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে কারাগারে রেখে কোনো জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যাবে না বিএনপি। আর এই অবস্থায় কোনো নির্বাচন হতেও দেবে না দলটি-এমনটাই ঘোষণা দিয়েছেন বিএনপির শীর্ষ নেতারা।

সোমবার কারাবন্দি দলীয় চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ও সুচিকিৎসার দাবিতে মহানগর নাট্যমঞ্চে প্রতীকী অনশনে তারা এই ঘোষণা দেন।

সকাল নয়টা থেকে শুরু হয়ে প্রতীকী অনশন চলে বিকাল চারটায়। গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বিএনপি নেতাদের পানি পান করিয়ে অনশন ভাঙান।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অনশন কর্মসূচিতে সভাপতিত্ব করেন।

সমাপনী বক্তব্যে ফখরুল বলেন, ‘সরকার অন্যায়ভাবে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে বেগম খালেদা জিয়াকে কারাগারে রেখেছে। তাকে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে না। তাকে তার ন্যূনতম প্রাপ্যটুকুও দেয়া হচ্ছে না। সরকার ইচ্ছাকৃতভাবে সবকিছু থেকে, নির্বাচন থেকে দূরে সরিয়ে রাখার ষড়যন্ত্র করছে।’

অনেক দিন পর খোলা জায়গায় রাজধানীতে কর্মসূচি পালন করলো বিএনপি। সকাল নয়টা থেকে কর্মসূচি শুরু হওয়ার কথা থাকলেও আটটার পর থেকেই রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে নেতাকর্মীরা নাট্যমঞ্চে এসে জড়ো হয়। পরে আনুষ্ঠানিকভাবে পবিত্র কোরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে শুরু হয়।

কর্মসূচিতে বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের শীর্ষ নেতারা বক্তব্য দেন। বিএনপি জোটের শরিক দলগুলোর নেতারাও বক্তব্য দেন।

বেলা ১১টার দিকে হঠাৎ বৃষ্টি নামায় দুর্ভোগে পড়েন অনশনে আসা নেতাকর্মীরা। তবে এরমধ্যে অনশন চালিয়ে যায় বিএনপি।

সারাদেশে বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে এমন অভিযোগ করে ফখরুল বলেন, ‘ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক ইসহাক সরকারকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। উদ্দেশ্য একটা বিএনপিকে রাজনীতি থেকে, নির্বাচন থেকে দূরে সরিয়ে রাখা। এজন্যই চেয়ারপারসন কারাগারে যাওয়ার আগে বলে গেছেন আপনারা সবাই ঐক্যবদ্ধ থাকবেন এবং শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের মধ্য দিয়ে আমাদের বিজয় অর্জন করতে হবে।’

তিনি অবিলম্বে বেগম খালেদা জিয়ার ‍মুক্তি দিয়ে সুচিকিৎসার দাবি জানান।

নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে ফখরুল বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন ভেঙে দিয়ে নতুন করে কমিশনকে পুনর্গঠন করতে হবে। সংসদ ভেঙে দিতে হবে, সেনাবাহিনী মোতায়েন করতে হবে তাহলেই নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি হবে। তাহলেই এদেশে নির্বাচন হবে, অন্যথায় কোনো নির্বাচন হবে না।’

তিনি দলমত নির্বিশেষে সব রাজনৈতিক দল, সংগঠন, পেশাজীবী সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘শুধুবেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য নয়, দেশের ১৬ কোটি মানুষের মুক্তির জন্য, গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে দেয়ার জন্য আমাদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।’

কর্মীদের প্রস্তুতি নিতে বললেন নেতারা

স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন তার বক্তব্যে বলেন, আজকে এখানে সকাল থেকে যে বক্তব্য উঠে এসেছে তার সারাংশ করলে কয়েকটি পয়েন্ট পাওয়া যায়। তা হলো- বেগম খালেদা জিয়াকে ছাড়া কোনো নির্বাচন হবে না, নির্বাচন হতে দেয়া হবে না বক্তব্যে সবাই এই কথা বলেছেন।

দ্বিতীয়ত, সরকার ২০১৪ সালের মতো আবারো পাতানো নির্বাচন করার ষড়যন্ত্র করছে। সব বক্তা বলেছেন, ৫ জানুয়ারির মতো পাতানো নির্বাচন, প্রতারণার নির্বাচন করতে দেবে না। কারণ ওই সময় জনগণ প্রতারণার শিকার হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী তখন বলেছিলেন এটা নিয়ম রক্ষার নির্বাচন। কিন্তু তিনি সে কথা রাখেননি।

তৃতীয়ত, সবাই বলেছেন,আন্দোলনের মাধ্যমে চেয়ারপারসনকে মুক্ত করতে হবে। সরকার বেআইনিভাবে তাকে কারাবন্দি করে রেখেছে। আন্দোলনের মাধ্যমে খালেদা জিয়াকে মুক্ত করে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার প্রতিষ্ঠা করে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনবে। সেই আন্দোলনে অংশ নেয়ার আহ্বান জানাই। আপনারা প্রস্তুতি গ্রহণ করুন।

সরকার আদালতকে ব্যবহার করে বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি বিলম্বিত করছে এমন অভিযোগ করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, ‘যতই কৌশল করা হোক না কেন তাকে মুক্তি দিতে হবে। কোনো এক পর্যায়ে এসে তাকে মুক্তি দিতে বাধ্য হবে।’

আইনি প্রক্রিয়ায় বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি না হলে রাজপথে আন্দোলনের মাধ্যমে তাকে মুক্ত করা হবে এমন দাবি করেন মওদুদ।

তিনি নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘আপনারা আন্দোলনে থাকবেন তো?’ তখন সবাই হাত তুলে সম্মতি জানান। তখন তিনি বলেন, হাত তো দেখেন, সময় মতো তো থাকেন না।

তখন সবাই সমস্বরে বলে উঠেন, থাকবো স্যার। এ সময় পেছন থেকে একজন বলে উঠেন, আমরা থাকবো, আপনারা থাকবেন তো!

অনশনে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমান, চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ, এজেডএম জাহিদ হোসেন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবদিন ফারুক, কবির মুরাদ, আতাউর রহমান ঢালী, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, গাজী মাজহারুল ইসলাম, কেন্দ্রীয় নেতা নাজিমউদ্দিন আলম, শিরিন সুলতানা, আবদুস সালাম আজাদ, তাইফুল ইসলাম টিপু, নিপুণ রায় চৌধুরীসহ কেন্দ্রীয় ও অঙ্গসংগঠনের শীর্ষ নেতারা বক্তব্য দেন।

২০ দলীয় জোট নেতাদের মধ্যে জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির অধ্যাপক মজিবুর রহমান, জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) মহাসচিব মোস্তফা জামাল হায়দার, লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, জাগপার খন্দকার লুৎফর রহমান, জাগপার আসাদুর রহমান খান আসাদ ও পিপলস লীগের সৈয়দ মাহবুব হোসেন অনশনস্থলে এসে সংহতি জানান।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক এমাজউদ্দিন আহমেদ, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না সংহতি জানিয়ে অনশনে বক্তব্য দেন।

(ঢাকাটাইমস/০৯জুলাই/বিইউ/জেবি)

সংবাদটি শেয়ার করুন

রাজনীতি বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

রাজনীতি এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :