সাবেক বামপন্থী মন্ত্রীর প্রতি আ.লীগের সাংসদের ক্ষোভ

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ০৯ জুলাই ২০১৮, ২০:৪৮ | প্রকাশিত : ০৯ জুলাই ২০১৮, ১৯:৫৯

বামপন্থী রাজনীতি ছেড়ে আওয়ামী লীগে যোগ দেয়া একজন মন্ত্রীর প্রতি ক্ষোভ জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন। বামপন্থী যারা আওয়ামী লীগে এসেছে, তারা সন্তানদের এই রাজনৈতিক দীক্ষা দেননি কেন, সেই প্রশ্ন তুলেছেন তিনি।

সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন ক্ষমতাসীন দলের সংসদ সদস্য ও দলের সাংগঠনিক সম্পাদক। তবে কোনো মন্ত্রীর নাম বলেননি তার বক্তব্যে।

স্বপন লেখেন, ‘সবচেয়ে কষ্টের বিষয় হলো, তারা পরিবারে আওয়ামী লীগ লালন করেন না।’

‘সম্প্রতি একজন মন্ত্রী সাহেবের কন্যা সন্তানের আওয়ামী লীগ সরকারবিরোধী ফেসবুক প্রচারণা পুনরায় কমিউনিস্টদের আওয়ামী লীগ ধারণ না করার বার্তা বহন করে। কন্যার যদি আওয়ামী লীগ এতই অপছন্দ, সর্বপ্রথম পিতাকে মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগের জন্য চাপ দেওয়া উচিত। পিতা-কন্যার সম্পর্কটি কতটা দৃঢ়- কন্যা সন্তানের পিতা হওয়ার কারণে আমি তা বুঝি।’

‘গাছেরটা খাব, তলারটাও কুড়াব - অদ্ভুত আচরণ’-ক্ষোভ ঝাড়েন স্বপন।

কন্যাকে নিজের রাজনৈতিক বিশ্বাসের অনুসারী করতে না পারায়ও ক্ষোভ ঝাড়েন স্বপন। লেখেন, ‘যে পিতা তার সন্তানের মাঝে নিজের আদর্শ বিস্তার করেন না, সে পিতা হয় তার নিজের বর্তমান অবস্থানে সন্তুষ্ট নন অথবা নিজের অবস্থান ও বিশ্বাসকে তিনি মনে প্রাণে ধারণ করেন না।’

‘আমাদের সন্তানরা মা, বাবা, ভাই, বোন, দাদা, দাদি, নানা, নানি শব্দ শেখার সঙ্গে সঙ্গে জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু, শেখ হাসিনা শব্দগুলো বলতে শেখে। আমাদের রক্তে, মজ্জায়, চেতনায়, বিশ্বাসে বাংলাদেশ, বঙ্গবন্ধু আর আওয়ামী লীগ। কিন্তু তারা সন্তানকে আওয়ামী লীগ ধারণ করতে শেখান না।’

সাবেক বামপন্থী এবং এখন আওয়ামী লীগের নেতা হওয়ার পরও এই মন্ত্রীরা তার মন্ত্রণালয়ের আওয়ামী লীগ অনুসারীদের পীড়ন করছেন বলেও অভিযোগ করেন স্বপন।

‘যারা দীর্ঘদিন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা আছেন, মন্ত্রী আছেন তারা কেন সর্বান্তকরণে আওয়ামী লীগকে ধারণ করছেন না! তারা মন্ত্রী হয়ে তাদের মন্ত্রণালয়ে ছাত্রলীগ করে আসা কর্মকর্তাদের রাজাকারের চেয়ে বেশি ঘৃণা করে প্রশাসনিক, মানসিকভাবে নিপীড়ন করে চলেছেন অবিরাম।’

‘দেশের মিডিয়াগুলোতে বাম ঘরানার সাংবাদিকদের প্রাধান্যের কারণে তাদের ব্যক্তিগত ব্র্যান্ডিং বেশ চমৎকার। তাদের অধিকাংশই দলের চেয়ে নিজের ব্র্যান্ডিং করতে বেশি উৎসাহী।’

আওয়ামী লীগে যোগ দিলেও সাবেক বামপন্থীরা এখনও তাদের আগের রাজনৈতিক বিশ্বাস ধরে আছেন বলেও অনুযোগ করেন স্বপন। লেখেন, ‘কমিউনিস্টগণ আওয়ামী লীগে যোগদান করলেন। অতিথি পরায়ন বাঙালির আপন সংগঠন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ নতুন অতিথিগণকে সাদরে গ্রহণ করল। তারা আসলেন, কেন্দ্রে-জেলায় বড় বড় পদ পেলেন। নৌকায় চড়ে এমপি হলেন, মন্ত্রী হলেন।’

‘তারুণ্য থেকে ধারণ করা কমিউনিস্ট আদর্শ প্রতিষ্ঠা করতে ব্যর্থ হয়ে হতাশাগ্রস্ত কমিউনিস্টগণ বিভিন্ন দলে যোগদান করেছেন। যারা হতাশাগ্রস্ত নন, তারা এখনো তাদের আদর্শ ও বিশ্বাস ধারণ করে আছেন।’

সেই মন্ত্রী কে?

মন্ত্রিসভায় আওয়ামী লীগের সদস্য হিসেবে অন্তত তিনজন মন্ত্রী আছেন যারা আগে বামপন্থী রাজনীতি করেছেন। এরা হলেন: কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী, শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, সংস্কৃতি মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নুর।

এর বাইরে মন্ত্রিসভার সদস্য জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু ও ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন এখনও বামপন্থী রাজনীতি করেন। তারা আওয়ামী লীগে যোগ দেননি। ফলে তাদের নাম বাদ দিয়ে দেয়া যায়।

ফলে মতিয়া, নাহিদ অথবা নুর-যে কোনো একজন মন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে স্বপন এই লেখা লেখেছেন, সেটা নিশ্চিত।

এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য ঢাকাটাইমসকে বলেন, আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘আমি আমার স্ট্যাটাসে যা লিখার লিখেছি, এর বেশি বলতে পারব না। আমি কাউকে ব্যক্তিগতভাবে আক্রমণ করব না।’

তবে স্বপনের ঘনিষ্ঠ এবং তার এই স্ট্যাটাসের পর আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগর কর্মীদের চালানো ফেসবুক পেজে সংস্কৃতি মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নুরের কন্যাকে ঘিরেই আলোচনা চলছে।

কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলা নিয়ে বেশ কিছু সংবাদের লিঙ্ক শেয়ার করেছেন সাংস্কৃতিক মন্ত্রীর মেয়ে সুপ্রভা তাসনিম।

সুপ্রভার ব্যক্তিগত ফেসবুক পাতা ঘেঁটে দেখা গেছে ১ জুলাই থেকে ৬ জুলাই পর্যন্ত কোটা সংস্কার নিয়ে আন্দোলনকারীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলা নিয়ে করা চারটি পত্রিকার পাঁচটি নিউজ লিঙ্ক শেয়ার করেন।

সুপ্রভা একটি ইংরেজি দৈনিকে কাজ করেন। যদিও এ বিষয়ে তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি। আর আসাদুজ্জামান নুর বা সরকারে থাকা সাবেক বামপন্থী কোনো নেতা স্বপনের বক্তব্যে কোনো প্রতিক্রিয়া জানাননি।

সুপ্রভা তাসনিম ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘আমি পত্রিকার আর্টিকেল শেয়ার করেছিলাম দুইটি। যার মধ্যে একটিতে যেখানে মেয়েকে যৌন হয়রানির কথা বলা হয়েছে। ওই নিউজে মেয়েটা নিশ্চিত করে বলে নাই এটা কে করেছে।’

নিজের রাজনৈতিক বিশ্বাসের বিষয়ে জানতে চাইলে নুর কন্যা বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি না যারা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও শেখ হাসিনার আদর্শে বিশ্বাস করে তারা এরকম যৌন হয়রানি করবে, ভায়োলেন্সে ইনভলভ হবে। এটা কোনোভাবে সমর্থন করতে পারি না। এটার সঙ্গে কমিউনিজমের লিংক হয়েছে আমি জানি না।’

তবে তার নিজের বক্তব্যের জন্য পরিবারের কেউ কেন দায়ী হবে, সেই প্রশ্নও তুলেছেন এই সংবাদকর্মী। বলেন, ‘একজন প্রাপ্তবয়স্ক নারী হিসাবে, সাংবাদিক বক্তব্য দিলে তা আমার পরিবারের বক্তব্য হিসাবে ধরে নেয়ার কোন কারণ নেই। এটা আমার ব্যক্তিগত মতামত।’

‘আমি এও মনে করি না কোন ব্যক্তির দায়ভার পুরো ছাত্র সংগঠনকে নিতে হবে। ছাত্রলীগ অনেক ভালো ভালো কাজ করে।’

(ঢাকাটাইমস/০৯জুলাই/টিএ/ডব্লিউবি/জেবি)

সংবাদটি শেয়ার করুন

রাজনীতি বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

রাজনীতি এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :