বরিশালে ‘দানের টাকায়’ ভোটে সাত প্রার্থী
গাজী নইমুল হোসেন লিটু। বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ১৯নং ওয়ার্ড থেকে পরপর দুইবার জিতেছেন মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। এবারও প্রার্থী হয়েছেন। ভোটে নিজের একটি টাকাও খরচ করবেন না তিনি। নির্বাচন কমিশনে দেয়া হলফনামায় অনুযায়ী, যে খরচ হবে তার পুরোটাই দান হিসেবে পাবেন।
হলফনামায় লিটু তার নির্বাচনী ব্যয় ধরেছেন এক লক্ষ টাকা। এর মধ্যে ৫০ হাজার টাকা তার বন্ধু সৈয়দ ওবায়েদউল্লাহ সাজু দান করেছেন এবং ২৫ হাজার টাকা করে দান করেছেন নতুনবাজারের আবদুল কাদের সুমন ও সুবল দাস নামে দুই ব্যক্তি।
লিটু যে খরচ ধরেছে তার মধ্যে তার কর্মী সমর্থক ২০ জনের পেছনে ২৭ হাজার টাকা, দেড় হাজার পোস্টারে পাঁচ হাজার, নির্বাচনী অফিস বাবদ ১২ হাজার, কেন্দ্রীয় ক্যাম্পে ১৩ হাজার, যাতায়াত খরচ আট হাজার, ঘরোয়া বৈঠক, হ্যান্ডবিলে ও লিফলেটে আড়াই হাজার করে, ডিজিটাল ব্যানারে চার হাজার, পথসভায় দেড় হাজার, মাইকিং খরচ আট হাজার টাকা ও আপ্যায়ন খরচ ধরা হয়েছে তিন হাজার ছয়শ টাকা।
দুই নং (৪, ৫, ৬) সংরক্ষিত ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদপ্রার্থী মোর্শেদা বেগম কাজলও নির্বাচন করছেন দানের টাকায়। হলফনামায় দেয়া নির্বাচনী আয় ব্যয় সূত্রে জানা গেছে, কাজল তার ভাই চিকিৎসক হুমায়ন কবিরের কাছ থেকে দেড় লাখ টাকা ধার নিয়েছেন আর মেয়ে নিশাত আমানের কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকা দান পেয়েছেন।
মোর্শেদার তিনটি নির্বাচনী ক্যাম্পের খরচ দেখানো হয়েছে ছয় হাজার টাকা, এজেন্টের মোট খরচ ১০ হাজার ও কর্মীদের খরচ দেয়া হয়েছে পাঁচ হাজার টাকা। লিফটলেটের পেছনে ১০ হাজার টাকা এবং তিন নির্বাচনী অফিসে আপ্যায়ন খরচ ধরা হয়েছে ১৫ হাজার টাকা।
১০ নং (২৮, ২৯, ৩০) সংরক্ষিত ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী রাশিদা পারভীন তার নির্বাচনী ব্যয় তুলে ধরেছেন দেড় লাখ টাকা। এর পুরোটাই তার আত্মীয় সাইদুর রহমান দান করেছেন।
রাশিদা পোস্টারের খরচ দেখিয়েছেন ৩০ হাজার টাকা, নির্বাচনী অফিসের খরচ ধরেছেন ১৫ হাজার টাকা এবং নির্বাচনী এজেন্ট ও কর্মীদের মোট খরচ ২৫ হাজার টাকা, ডিজিটাল ব্যানার ১৮ হাজার টাকা ও মাইকিংয়ে ২০ হাজার টাকা।
আট নং ওয়ার্ডে কাউন্সিলর প্রার্থী আওয়ামী লীগ নেতা সুরঞ্জিৎ দত্ত লিটু তার মায়ের কাছ থেকে পাওয়া এক লাখ টাকা নির্বাচনী ব্যয় হিসেবে উল্লেখ করেছেন। এই বাদে নিজের আয় বা ধার করে কোনো টাকা দিয়ে নির্বাচনী ব্যয়ে তিনি উল্লেখ করেননি।
হলফনামায় লিটু জানান, তার পোস্টার খরচ ৫ হাজার টাকা, নির্বাচনী অফিসের খরচ ১৫ হাজার টাকা, নির্বাচনী এজেন্ট এবং ২০ জন কর্মীর খরচ দেয়া হয়েছে ২০ হাজার টাকা, এছাড়া ব্যানার, মাইকিং ও অফিস আপ্যায়ন খরচ দেয়া হয়েছে ৩৫ হাজার টাকা।
একই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী বিএনপি নেতা আল-আমিন তার স্ত্রী রোকসানা বেগমের দান করা ৫০ হাজার টাকা ও ভাই জসিম উদ্দিনের দান করা ৪৫ হাজার টাকা দিয়েই নির্বাচন করবেন।
আল আমিন পোস্টার বাবদ খরচ দেখিয়েছেন ১৪ হাজার টাকা। পাশাপাশি নির্বাচনী ক্যাম্প, নির্বাচনী এজেন্ট ও কর্মীদের খরচ ২৫ হাজার টাকা খরচ ধরা হয়েছে।
পাঁচ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী আলম বিশ্বাস তার নির্বাচনী ব্যয় দেখিয়েছেন ২২ হাজার টাকা। বোন নিলুফা বেগমের কাছ থেকে তিনি ধার নিয়েছেন ২০ হাজার টাকা এবং পলাশপুরের বাসিন্দা মো. ওলি তাকে দান করেছেন ২ হাজার টাকা।
এক নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী আওয়ামী লীগ নেতা আমির হোসেন বিশ্বাস তার নির্বাচনী ব্যয় ৭৫ হাজার টাকা দেখিয়েছেন নির্বাচন কমিশনে। এর মধ্যে এই পুরো টাকাই তার ভাই দেলোয়ার হোসেনের দানের টাকা।
দানের টাকায় নির্বাচনের বিষয়ে সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলন বরিশাল জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক কাজী এনায়েত হোসেন শিবলু বলেন, ‘দানের টাকায় নির্বাচন করছে ভালো কথা। তবে দানের টাকায় নির্বাচন করে জনগণের কতটুকু সেবা করবে সেটা প্রশ্ন।
‘আমার জানা মতে অনেক প্রার্থী হলফনামায় সঠিক তথ্য দেয় না। তারা যে খরচ দেখিয়েছেন আসলে ওই টাকায় নির্বাচন করা সম্ভব হয় না এটা সবাই বোঝে। তাই নির্বাচন কমিশনের উচিত হবে হলফনামায় ভুল তথ্য দেয়া প্রার্থীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া ও শক্তভাবে মনিটরিং করা।’
বরিশাল সাংস্কৃতিক সংগঠন সমন্বয় পরিষদের সভাপতি কাজল ঘোষ বলেন, ‘হলফনামায় তথ্য দেয়ার নামে ব্যয় সংক্রান্ত এই প্রতারণার বিষয়টি চলে আসছে যুগ যুগ ধরে। কমিশন যেহেতু একটা ভালো লক্ষ্য নিয়ে হলফনামা এবং নির্বাচনী ব্যয় বেধে দেয়ার কাজটি করেছে তাই তাদের উচিত এটি মনিটরও করা।’
ঢাকাটাইমস/১০জুলাই/টিটি/ডব্লিউবি