ভোটের আগেই ফুরফুরে কামরান, চাপে আরিফুল

সিলেট ব্যুরো প্রধান, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ১০ জুলাই ২০১৮, ২২:০২ | প্রকাশিত : ১০ জুলাই ২০১৮, ২১:৩৯
ফাইল ছবি

শেষ পর্যন্ত দলের বিদ্রোহী প্রার্থী নির্বাচনে থাকলেন। গোঁদের ওপর বিষফোঁড়ার মতো আরও একজন প্রার্থী বহাল জোটসঙ্গী জামায়াত থেকে।

তারা দুজনই আজ প্রতীক পেলেন। এর মধ্য দিয়ে সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ভোটের আগেই একপ্রস্থ বেকায়দায় পড়ে গেলেন বিএনপির মেয়র প্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরী।

আর প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বীর এই গৃহদাহ ফুরফুরে নির্বাচনী যাত্রার উপলক্ষ করে দিয়েছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের একক প্রার্থী বদর উদ্দিন আহমদ কামরানকে।

গতকাল সোমবার শেষ দিনও মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার না করায় আজ মঙ্গলবার স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতীক বরাদ্দ পেয়েছেন বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক বদরুজ্জামান সেলিম (বাস) ও জামায়াতের সিলেট আমির এহসানুল মাহবুব জুবায়ের (টেবিল ঘড়ি)। দুজনই নির্বাচনে ভালো করার আশা করছেন।

বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের তিন প্রার্থীর বিপরীতে আওয়ামী লীগের মহাজোটের একক প্রার্থী কামরান। এতে ভোটের সমীকরণে বেশ সুবিধাজনক অবস্থানে আছেন দুবারের নির্বাচিত সাবেক মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের এই সভাপতি।

২০১৩ সালের নির্বাচনে ২০ দলীয় জোটের পূর্ণ সমর্থন নিয়ে বিএনপির একক প্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরী মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন আওয়ামী লীগের বদর উদ্দিন কামরানকে পরাজিত করে।

সেবার আরিফুল পান এক লাখ ৭ হাজার ৩৩০ ভোট, আর কামরান ৭২ হাজার ২৩০ ভোট পান; ৩৫ হাজার ১০০ ভোটের ব্যবধানে জয়ী হন আরিফুল ।

গতবারের ভোটে আরিফুলের জয়ের পেছনে ঐক্যবদ্ধ বিএনপি ও জোটের পাশাপাশি হেফাজত ইস্যু বড় ভূমিকা রেখেছিল বলে ওই সময় নানা বিশ্লেষণে উঠে আসে। কিন্তু এবার সবকিছু পুরো উল্টো। ঘরের শত্রু সামলাতে ব্যস্ত আরিফের জন্য আরেক পথের কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছেন জামায়াতের স্বতন্ত্র প্রার্থী। ফলে ভোটের সমীকরণে এবার ৩০ জুলাইয়ের নির্বাচনী বৈতরণী পার হওয়া আরিফুলের জন্য কঠিন হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

আরিফের নিজের ও দলীয় ভোট ব্যাংক তিন ভাগ হয়ে গেলেও কামরানের ভোট থাকছে অক্ষত। মহাজোটের আর কোনো প্রার্থী না থাকায় ভোটের হিসাবে স্পষ্টত সুবিধাজনক অবস্থানে কামরান।

ইতিপূর্বে অনুষ্ঠিত বিভিন্ন দলীয় নির্বাচনের ফল বলছে সিলেটে জামায়াতের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ভোটার রয়েছে। যদিও দলটি নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত নয় এবং রাজনৈতিক পরিচয়ে এখন আর নির্বাচন করতে পারছে না, কিন্তু জামায়াতের প্রার্থী এহসানুল মাহবুব জুবায়েরের দাবি, সিলেটে তার ও জামায়াতের জনপ্রিয়তা রয়েছে। সে ক্ষেত্রে তিনি উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ভোট টানবেন নিজের পক্ষে।

বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী বদরুজ্জামান সেলিমও ভোটের মাঠে শক্ত প্রতিপক্ষ। তৃণমূলের নেতাকর্মীদের ভোটে মহানগর বিএনপির এই সাধারণ সম্পাদককে মনোনয়ন বোর্ডে সমর্থন দিয়েছিলেন অন্য চার মনোনয়ন-প্রত্যাশী। সেলিমের দাবি, নেতাকর্মীদের চাপে তিনি প্রার্থী হয়েছেন। ভোটের মাঠেই তিনি দেখিয়ে দেবেন তার জনপ্রিয়তা।

দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে প্রার্থী হওয়ায় সেলিমকে আজ মঙ্গলবার দল থেকে বহিষ্কার করেছে বিএনপি।

তবে বিএনপির প্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরী দাবি করছেন, তিনি মেয়র হিসেবে সিলেটবাসীর জন্য যে কাজ করেছেন তার মূল্যায়ন করবেন ভোটাররা। ইসলামি দলগুলোর অনেক ভোটও তার পক্ষে রয়েছে।

আরিফুল বলেন, ‘সিলেটের উন্নয়নের স্বার্থেই গত নির্বাচনের মতো এবারও ভোটাররা আমাকে বিশাল ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী করবেন। দল-মতের ঊর্ধ্বে আমি সিলেট নগরের জন্য কাজ করেছি। আমি বিএনপি থেকে নির্বাচনে অংশ নিলেও ইসলামি দলগুলোতে আমার ভোট ব্যাংক রয়েছে।’

দুবারের মেয়র নৌকা প্রতীক নিয়ে ভোটের লড়াইয়ে নামা কামরানও দাবি করছেন একই। বলেন, তিনিও দল-মতনির্বিশেষে কাজ করেছেন। তাই ইসলামি দলগুলোসহ সিলেটের সব মানুষের ভালোবাসা তার দিকেই আছে।

কামরান বলেন, ‘দীর্ঘ দিন ধরে সিলেটের মানুষের সেবা করে আসছি। এই সিলেটের মানুষের জন্য আমি আজকের কামরান। এই নগরের মানুষের দুর্দিনে আমি সব সময় পাশে থেকেছি।’

‘আমি নগরপিতা থাকাকালীন আমার কাছে সব দলের মানুষ আসত। কারণ আমাকে তারা অনেক ভালোবাসেন। এবারের সিটি নির্বাচনে ইসলামি দলগুলো থেকেও সমর্থন পাব বলে আশা করি।’

এবারও আলোচনায় হেফাজত

সিলেটে এবার প্রথমবারের মতো দলীয় প্রতীকে সিটি করপোরেশন নির্বাচন হচ্ছে বলে স্বাভাবিকভাবেই প্রধান দুই দলের স্থানীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে নির্বাচনী উত্তাপ অনেক বেশি। তবে সবকিছু ছাপিয়ে গতবারের মতো এবারও আলোচনায় উঠে এসেছে হেফাজতে ইসলাম।

সিলেটে ভোটের মাঠে এবারও বড় ধরনের ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়াতে চায় নিজেদের অরাজনৈতিক সংগঠন দাবি করা হেফাজতে ইসলাম।

পাঁচ বছর আগে হেফাজতের সঙ্গে আওয়ামী লীগের যেমন শত্রুতামূলক সম্পর্ক ছিল, সেটি এখন আর নেই। কওমি মাদ্রাসা সনদের স্বীকৃতি আর ২০১৩ সালে শাপলা চত্বরে কথিত হাজার হাজার মৃত্যুর প্রচার গুজব প্রমাণ হওয়ার পর এখন হেফাজত আর সরকারের বিরুদ্ধে কিছু বলছে না।

এর মধ্যে ২০১৬ সালে বিএনপির সঙ্গে ১৭ বছরের সম্পর্ক ত্যাগ করে আলাদা হয়ে যায় ইসলামী ঐক্যজোট। এই দলের নেতারাই হেফাজতের সিদ্ধান্ত গ্রহণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। বিভিন্ন সূত্র বলছে, ইসলামী ঐক্যজোটের সঙ্গে এখন আওয়ামী লীগের দূরত্ব মিটেছে।

তবে হেফাজত সংশ্লিষ্ট কওমি মাদ্রাসাকেন্দ্রিক রাজনৈতিক দলের একটি অংশ এখনো বিএনপির সঙ্গেই জোটবদ্ধ আছে। এই অবস্থায় প্রধান দুই দলের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির দায়িত্বে থাকা নেতারাও যোগাযোগ বাড়াচ্ছেন সিলেট হেফাজতের দায়িত্বশীল নেতাদের সঙ্গে।

তবে হেফাজতের নেতারা দাবি করেন, অরাজনৈতিক সংগঠন হিসেবে তারা কোনো দলের পক্ষে কাজ করেন না।

সিলেট মহানগর হেফাজতের সাধারণ সম্পাদক মাওলানা মোস্তাক আহমদ খান বলেন, ‘সিলেটের বিভিন্ন মাদ্রাসায় আমাদের অনুগত শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা রয়েছে। তবে এবার আমরা কারও পক্ষে প্রকাশ্যে প্রচারণায় নামব না। যদি কেউ কোনো প্রার্থীর সঙ্গে প্রচারণায় নামেন কিংবা তাকে ভোট দেন, সেটা তার একান্ত বিষয়। আমরা এতে কোনো হস্তক্ষেপ করব না।’

হেফাজতের এই অবস্থান কামরানের জন্য ইতিবাচক বলে মনে করছেন তার নির্বাচন পরিচালনা-সংশ্লিষ্ট নেতারা।

এ ছাড়া নির্বাচনে প্রার্থী দিয়েছে ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলনও। তাদের বেশ কিছু অনুসারী আছেন সিলেটে। সাম্প্রতিক সময়ে অনুষ্ঠিত প্রায় সব কটি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক ভোট নিয়ে তৃতীয় অবস্থানে ছিল ধর্মভিত্তিক দলটি। সিলেটে মেয়র নির্বাচনের হিসাব-নিকাশে দলটির ভোটও উঠে আসবে আলোচনায়। আর ধর্মভিত্তিক দলটি যত ভোট পাবে, বিএনপির বাক্সে তত কমবে- এটা একরকম নিশ্চিত।

(ঢাকাটাইমস/১০জুলাই/মোআ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

রাজনীতি বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

রাজনীতি এর সর্বশেষ

বাংলাদেশে একদিন গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হবেই, তখন আ. লীগ থাকবে না: আমিনুল হক

উপজেলা নির্বাচন ঘিরে তৃণমূল আ.লীগে বাড়ছে দ্বন্দ্ব

সরকারের এমপিরা ঘোষণা দিয়ে লুটপাট শুরু করেছে: এবি পার্টি

বদরের চেতনায় লড়াই অব্যাহত রাখার আহ্বান ছাত্রশিবির সভাপতির

আন্দোলনে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান ফখরুলের

বিএনপির ভারত বিরোধিতা মানুষের কষ্ট বাড়ানোর নতুন সংস্করণ: নাছিম

ভোট ডাকাত সরকারকে সমর্থনকারী দেশের পণ্য বর্জন ন্যায়সঙ্গত: রিজভী

১১ মামলায় আগাম জামিন পেলেন বিএনপি নেতা বকুল

বর্তমান সরকার ভারতের অনুগ্রহে ক্ষমতায় বসে আছে: সাকি

জিয়াউর রহমান উগ্র-সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীকে রাজনীতিতে প্রতিষ্ঠিত করে: ওবায়দুল কাদের

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :