বিশ্ববিদ্যালয় কী করে অবরুদ্ধ থাকে, প্রশ্ন আরেফিন সিদ্দিকের

প্রকাশ | ১১ জুলাই ২০১৮, ১৫:৩১ | আপডেট: ১১ জুলাই ২০১৮, ১৫:৪৫

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

পূর্ব অনুমতি ছাড়া ক্যাম্পাসে বহিরাগতদের অবস্থান, চলাচল এবং যেকোনো ধরনের কার্যক্রম বন্ধে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) কর্তৃপক্ষ যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে সে বিষয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিশ্ববিদ্যালয়টির সাবেক উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক।

মঙ্গলবার মধ্যরাতে বেসরকারি সময় টেলিভিশনে অংশ নিয়ে এই মন্তব্য করেন তিনি। খান মুহাম্মদ রুমেলের সঞ্চালনায় টকশোতে অতিথি হিসেবে আরও ছিলেন, প্রাবন্ধিক, লেখক ও গবেষক অধ্যাপক আবুল কাশেম ফজলুল হক এবং সাংবাদিক নেতা মনজুরুল আহসান বুলবুল।

কোটা সংস্কার আন্দোলন নিয়ে ঘটে যাওয়া অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার প্রেক্ষাপট বিবেচনা করে রবিবার বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এক আদেশ জারি করে, যাতে বিশ্ববিদ্যালয়ে বহিরাগতদের অবস্থান ও চলাচল নিষিদ্ধ করে বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়। আর এরপরই শুরু হয় বিতর্ক। বিশ্ববিদ্যালয় এটা পারে কি না, এ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনেক শিক্ষকও।

কমিটির এমন সিদ্ধান্তে আরেফিন সিদ্দিক বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সারা বাংলাদেশের একটা বড় সম্পদ। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের অবরুদ্ধের খবরটা দেখে আমাদের মন খারাপ হয়ে যায়। বিশ্ববিদ্যালয় কী করে অবরুদ্ধ থাকে?’

ঢাবির সাবেক এই উপাচার্য বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে সারা দেশবাসী যেভাবে যু্ক্ত থাকেন সেখানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শুধু বহিরাগত বলে সেটাকে অবরুদ্ধ করে রাখা গ্রহণযোগ্য সিদ্ধান্ত নয়। কোটা সংস্কারের দাবি নিয়ে যে আন্দোলন হচ্ছে, সংঘর্ষ হচ্ছে এগুলো পটভূমি হিসেবে কাজ করছে। যারা কোটা আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত আর যারা এই আন্দোলনকারীদের উপর হামলা করেছে এরা সবাই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। এই ধরনের ঘটনা ঘটলে সেটা ট্যাকল দেয়ার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টোরিয়াল রুলস রেগুলেশন আছে। সেই অনুযায়ী সেগুলোর বিচার করা, তদন্ত করা, অপরাধীদের শাস্তি দেয়ার বিধান আছে। কিন্তু সেটাকে কেন্দ্র করে বিশ্ববিদ্যালয়ে বহিরাগতদের প্রবেশ বন্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন তাহলে কি দাঁড়ায়?’

আরেফিন সিদ্দিক বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নানা দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ। এটি ঢাকা শহরের কেন্দ্রে অবস্থিত। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতর দিয়ে অনেকগুলো পাবলিক রোড গেছে। এখান থেকে প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ লোক পায়ে হেঁটে গাড়িতে, বাসে মোটরসাইকেলে পাড় হচ্ছে। তারা এখন এই পথ পাড়ি দিতে কোথা থেকে পূর্বানুমতি নেবে? যে বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়েছে পত্র-পত্রিকায় সেটা যদি আমরা অনুসরণ করি তবে বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশের পূর্বানুমতি বিশাল কর্মযজ্ঞ। এটা স্পষ্ট করতে হবে। এছাড়াও বহিরাগত বলতে কি বোঝানো হয়েছে সেটাও স্পষ্ট করতে হবে। পূর্ব অনুমোদন কে দেবে, কোন প্রক্রিয়ায় হবে?

আলোচনায় অংশ নিয়ে প্রাবন্ধিক ও গবেষক অধ্যাপক আবুল কাশেম ফজলুল হক বলেন, অস্বাভাবিক অবস্থা নিয়ন্ত্রণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ক্যাম্পাসে বহিরাগত প্রবেশ নিষিদ্ধ করেছে।

আবুল কাশেম ফজলুল হক বলেন, ‘কোটা সংস্কার আন্দোলনকে নিয়ন্ত্রণ করতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ অনুমতি ছাড়া বাইরের লোক প্রবেশ করতে দিচ্ছে না। এটি একটি কঠোর সিদ্ধান্ত। এরই মধ্যে গতকাল মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বলেছেন, যারা সাংস্কৃতিক উদ্দেশ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ে আসবেন তাদের ক্ষেত্রে এই বিধি প্রযোজ্য হবে না। কিন্তু লিখিতে বিধি অনুযায়ী বাইরের যে কাউকে অনুমতি নিয়ে আসতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘এই সিদ্ধান্তটা অস্বাভাবিক অবস্থা নিয়ন্ত্রণ করার জন্য। এবং অস্বাভাবিক অবস্থা কী, কী নয়, এগুলো বুঝবার দরকার নেই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আজকে ৩০ থেকে ৩৫ বছর ধরে ছাত্র সংসদের নির্বাচন নেই। এই প্রেক্ষাপটে আমি বলতে পারি ছাত্র সংসদ নির্বাচনের বাস্তবতাও নেই।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস-ঐতিহ্য তুলে ধরে প্রবীণ এই শিক্ষক বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠা থেকে আজ পর্যন্ত প্রায় ১০০ বছর হতে চলেছে। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থা সব সময় এক রকম ছিল না। তীব্র রাজনৈতিক আন্দোলনের ভেতর দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠা বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলন ইত্যাদি। যদি উন্নত ভবিষ্যতের দিকে যেতে চাই তাহলে বাস্তব ঘটনাগুলো যেভাবে ঘটেছিল আমাদের জাতির ভেতরে যেসব দুর্বলতার প্রকাশ ঘটেছিল সেগুলোকে আমাদের বুঝতে হবে। সেই সঙ্গে শক্তি ও সম্ভাবনা বুঝতে হবে।’

আরেক আলোচক মনজুরুল আহসান বুলবুল বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বলছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের জন্য কেবলমাত্র এই ক্যাম্পাস উন্মুক্ত। আমি মনে করি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শত বছরের ঐতিহ্যের সঙ্গে এই ডেফিনেশনটি যায় না। তাহলে আমাদের শহীদ মিনার, বাংলা একাডেমির বই মেলাকে অস্বীকার করতে হয়। অপরাজেয় বাংলাকে অস্বীকার করতে হয়, মিলন চত্বর অস্বীকার করতে হয়। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানকে অস্বীকার করতে হয়। সেটা গড়িয়ে রমনা পার্ক, চারুকলা, শিল্পকলা একাডেমিকেও অস্বীকার করতে হয়। কারণ এই গোটা ভৌগোলিক কাঠামোটা মিলিয়েই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। কেননা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হলো দেশের বড় সাংস্কৃতিক বলয়। তাই এখানে বহিরাগতদের প্রবেশাধিকার উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা ঠিক হয়নি।

টকশোতে বক্তারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের এই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসার আহ্বান জানান।

ঢাকাটাইমস/১১জুলাই/এজেড/এমআর