সেই মায়ের পাশে কুড়িগ্রামের ডিসি, দিচ্ছেন বাড়ি

প্রকাশ | ১১ জুলাই ২০১৮, ১৭:২১ | আপডেট: ১১ জুলাই ২০১৮, ২০:১১

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
বুধবার সকাল দশটার দিকে কলাবাগানে ফরিদাদের সংসার দেখতে যান জেলা প্রশাসক

কুড়িগ্রাম থেকে ঢাকায় এসে ফুটপাতে তিন সন্তান আর অসুস্থ স্বামীকে নিয়ে নিদারুণ কষ্টে জীবন-যাপন করা ফরিদা বেগমের দূরাবস্থার কথা ইতিমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। এমন অবস্থায় নিঃস্ব ফরিদার পাশে দাঁড়ালেন কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক মোছা. সুলতানা পারভীন।

অসহায় ফরিদার পরিবারকে কুড়িগ্রামে আবাসনের ব্যবস্থা করার পাশাপাশি পরিবারের উপার্জনের ব্যবস্থা এবং সন্তানদের পড়ালেখার ব্যবস্থার কথা বলেছেন জেলা প্রশাসক।

ইতিমধ্যে রাজধানীর কলাবাগান ওভারব্রিজের নিচে ফরিদাদের ঝুপড়ি ঘরে গিয়ে দেখা করে এসেছেন জেলা প্রশাসক। কুড়িগ্রামে ফিরে যেতে আগ্র্রহ প্রকাশ করায় বৃহস্পতিবার পরিবারসহ ফরিদাদের সেখানে যাওয়ার ব্যবস্থাও ইতিমধ্যে করেছেন তিনি।

বুধবার ঢাকাটাইসকে কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক বলেন, দায়িত্ববোধের জায়গা থেকে তাদের দেখতে গিয়েছি এবং তাদের সার্বিক ব্যবস্থার কথা বলেছি।

কলাবাগান ফুটওভার ব্রিজের নিচে তাদের সংসার। ফরিদার স্বামী আনসার আলী হৃদরোগে আক্রান্ত। তিন সন্তানের মধ্যে এক মেয়েও প্রতিবন্ধী।

সম্প্রতি ফুটপাতে শুয়ে থাকা অসুস্থ এক মায়ের মাথায় দুটি শিশুর পানি ঢালার ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়। এক মহৎপ্রাণ মানুষের চোখে পড়ায় তার আপাতত চিকিৎসা হয়েছে। অনেকে তাদের পাশে থাকার ঘোষণাও দিয়েছেন।

ফরিদার পরিবারের করুণ দশার কথা আলোচিত হয়েছে এক ভিডিওচিত্রের কারণে। রাস্তার পাশে অসুস্থ হয়ে পড়ে থাকা ফরিদার মাথায় পানি ঢালছিল তার ১১ বছরের মেয়ে আকলিমা। পাশে সাড়ে তিন বছর বয়সী ছেলে ফরিদুল। ভিডিও চিত্রটি ধারণ করেছিলেন পারভেজ হাসান। পেশায় একজন অনলাইন ফ্রিল্যান্সার। জ্বরে আক্রান্ত মায়ের মাথায় পানি দেয়া আকলিমার কাছে মায়ের অবস্থা জানতে চাইলে আকলিমা জানায়, ‘ওষুধ কিনার টাকা নেই।’ পরে দায়িত্ব নিলেন পারভেজ হাসান। এরপর চিকিৎসার জন্য ফরিদাকে নেয়া হয় গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালে। সেখানে চিকিৎসায় সুস্থ হন তিনি।

এদিকে এই খবর অনলাইন নিউজ পোর্টাল ঢাকাটাইমসসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে গুরুত্বের সঙ্গে ছাপা হয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও এই খবর আলোচিত হয়।

গণমাধ্যমের খবর এবং ফেসবুক থেকে এমন অবস্থার কথা জানতে পেরে ঢাকায় দাপ্তরিক কাজে শেষে কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক মোছা. সুলতানা পারভীন পরিবারটির সঙ্গে দেখা করতে যান। এর আগে কথা বলেন পারভেজ হাসানের সঙ্গেও। জানতে পারেন সুযোগ পেলে তারা কুড়িগ্রামে যেতে চায়।

বুধবার সকাল দশটার দিকে কলাবাগানে ফরিদাদের সংসার দেখতে যান জেলা প্রশাসক। তাদের সঙ্গে কথা বলেন। সরকারিভাবে সবধরনের ব্যবস্থা করার আশ্বাস দেন। তারা বৃহস্পতিবার কুড়িগ্রাম যাবেন বলে সিদ্ধান্ত হয়।

ঢাকাটাইমসকে জেলা প্রশাসক বলেন, ঢাকায় কাজে এসেছিলাম। কিন্তু আগেই ফেসবুকে এবং পত্রিকায় এদের নিয়ে খবর পড়লাম। খুব খারাপ লেগেছে তাদের জন্য। কুড়িগ্রামের মানুষ তারা ঢাকায় ফুটপাতে এইভাবে জীবন যাপন করবে আর আমরা কিছু করবো না এটা হয় না। তাদের জন্য সবকিছুর ব্যবস্থা করা আমাদের দায়িত্ব। কারণ সেখানে সরকারের সিদ্ধান্তে শত শত মানুষকে আমরা বাড়িঘর করে দিচ্ছি। পরে পারভেজ নামের ছেলেটির সঙ্গেও কথা বলেছি। কুড়িগ্রাম সমিতির যারা আছেন তাদের সঙ্গেও কথা বলেছি।

ডিসি বলেন, এই পরিবারের সবধরনের দায়িত্ব আমি জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিয়েছি। তাদের জন্য ঘরের ব্যবস্থা করব। উপার্জনের জন্য যেটা তাদের জন্য সুবিধা হয় সেটা করব। প্রয়োজনে দোকান করে দেব। ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ার ব্যবস্থা করে দেব। এটাই এখন প্রথম কাজ।

তাকে এইভাবে কাছে পেয়ে ফরিদারা আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়েন বলে জানান জেলা প্রশাসক।

দুপুরে জেলা প্রশাসকসহ আরও কয়েকজন পরিবারটির সঙ্গে দাঁড়িয়ে কথা বলছেন এমন একটি ছবি পোস্ট করেন সাংবাদিক ও লেখক সাইফুল ইসলাম জুয়েল। মায়ের মাথায় ফরিদার সন্তানরা পানি দিচ্ছেন যে ছবিটা ভাইরাল হয়েছে সেটা জুয়েলের হাতে তোলা।

পোস্টে জুয়েল বলেন, ‘আলহামদুলিল্লাহ। অবশেষে সেই মা  তার সন্তানদের একটা স্থায়ী গতি হলো। গতকালই জেনেছিলাম, কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক মহোদয় তাদের দায়িত্ব নিচ্ছেন। ঢাকাস্থ পুলিশের দুজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাও তাদের জন্য স্থায়ী কোনো ব্যবস্থা করে দেয়ার আশ্বাস দিয়েছিলেন। আজ  কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক তাদের দায়িত্ব বুঝে নেন। ইনশাআল্লাহ আগামীকাল রাতেই এই পরিবারটি নীড়ের পথ ধরবে।’

এই সাংবাদিক বলেন, ‘কুড়িগ্রামের এই পরিবারটি নদীভাঙনে সব হারিয়ে ঢাকায় এসে একটি ফুটওভার ব্রিজের নিচে বসবাস শুরু করে। তাদের আপন গন্তব্যে ফিরে যাবার কথা শুনে খুব ভালো লাগছে। মানবতার জয় হোক।’

পারভেজ হাসান ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘ঢাকাস্থ কুড়িগ্রাম সমিতির মাধ্যমে জেলা প্রশাসক সুলতানা পারভীন আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেন। বিস্তারিত জানতে চান। আমি তাকে সব বলার পর জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে তিনি এই পরিবারটির সামগ্রিক ভার নেয়ার কথা নিশ্চিত করেন।‘

পারভেজ আরও বলেন, ‘পরিবারটির জন্য বাসস্থান, ফরিদা বেগমের স্বামী আনসার আলীর জন্য চাষের জমি ও চাষের জন্য যা লাগে তা কৃষি অফিস থেকে দেয়া হবে এমনটাও আমাকে নিশ্চিত করা হয়েছে। এছাড়া আমার পরিচিতদের থেকে যে পরিমাণ অর্থ সহায়তা পাওয়া গিয়েছে, তা আমি জেলা প্রশাসকের কাছে হস্তান্তর করেছি।‘

মানবতা আরও একবার জয় লাভ করেছে। মানবিকতার চরম নির্দশন হয়ে থাকা এই ঘটনাটি দেশের প্রতিটি তরুণের দায়িত্ব বলে মনে করেন পারভেজ। তিনি বলেন, ‘আমার ওপর একটা প্রেসার ছিল। তাদের পুনর্বাসনের বিষয়টি আমার জন্য চ্যালেঞ্জিং ছিল। যারা এসময় আমার সাথে ছিল সেই মানুষগুলো সাংবাদিক ভাইদেরকে ধন্যবাদ অনেক ধন্যবাদ। তারা আমার সাথে না থাকলে বিষয়টি সবার সামনে আসত না। মানবতার বিজয় হলো।’

(ঢাকাটাইমস/১১জুলাই/বিইউ/জেবি)