গাজীপুর-১ আসন

আ.লীগে মোজাম্মেলই এগিয়ে, বিএনপিতে সবাই নতুন

প্রকাশ | ১২ জুলাই ২০১৮, ০৮:১১

আবুল হাসান, গাজীপুর থেকে

রাজধানী ঢাকার পাশের জেলা গাজীপুরে সিটি নির্বাচন শেষে এখন আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রার্থিতা নিয়ে শুরু হয়েছে হিসাব-নিকাশ। চলছে সম্ভাব্য প্রার্থীদের নানামুখী তৎপরতা। পোস্টার-ব্যানারের মাধ্যমে সম্ভাব্য প্রার্থীরা এলাকাবাসীর ভোট ও সমর্থন চাইছেন। পুরনোদের পাশাপাশি নির্বাচনী মাঠে আছে নবীনদের প্রচারণা।

পাঁচটি সংসদীয় আসন-সংবলিত গাজীপুরকে বলা হয়ে থাকে ‘দ্বিতীয় গোপালগঞ্জ’। বঙ্গবন্ধুর জন্মস্থান গোপালগঞ্জের মতো এখানেও বেশির ভাগ নির্বাচনে বরাবর নির্বাচিত হয়ে আসছে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা।

সিটি করপোরেশনের বড় অংশ নিয়ে গঠিত জাতীয় সংসদের ১৯৪ নম্বর আসন গাজীপুর-১। এখানে  মনোনয়ন-যুদ্ধে পুরনোদের চেয়ে নতুন মুখই বেশি দেখা যাচ্ছে। প্রধান দুই দলেই মনোনয়ন যুদ্ধে লড়বেন একাধিক নেতা।

জেলার পাঁচটি আসনে বিএনপি ও আওয়ামী লীগে প্রার্থী বাছাইয়ে চমক থাকতে পারে বলে রাজনৈতিক অঙ্গনে গুঞ্জন আছে। তাই নানা হিসাব-নিকাশ করে সম্ভাব্য প্রার্থীরা তাদের পথ চলছেন। জেলার পাঁচটি আসনের সব কটিতেই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ জয়ের স্বপ্ন  দেখছে। তবে সুষ্ঠু নির্বাচন হলে বিএনপি নিজেদের হারানো আসনগুলো পুনরুদ্ধারের সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাবে বলে মনে করছেন দলের নেতারা।

প্রার্থিতা নিয়ে জাতীয় পার্টি ও জামায়াতে ইসলামীর ভেতরে নড়াচড়া থাকলেও কাযর্ত সব কটি আসনেই ভোটযুদ্ধ হবে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে।

কালিয়াকৈর উপজেলা ও পৌরসভা এবং গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের ১ থেকে ১৮ নম্বর ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত গাজীপুর-১ আসনের বর্তমান এমপি মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক। জেলা আওয়ামী লীগের এই সভাপতি এবারও এখানে আওয়ামী লীগ তথা ১৪ দলীয় জোটের মনোনয়নের বড় দাবিদার।

নবম সংসদ নির্বাচনে এই আসন থেকে মোজাম্মেল হক প্রথমবারের মতো এমপি নির্বাচিত হন বিএনপির সাবেক প্রতিমন্ত্রী চৌধুরী তানভীর আহমেদ সিদ্দিকীকে পরাজিত করে। তবে নিয়মিত এলাকায় না যাওয়ার কারণে বর্তমানে তার ওপর প্রায় জনবিচ্ছিন্নতার ছায়া পড়ে আছে। গেল পাচ বছরে প্রয়োজনীয় সময়ে মন্ত্রীকে পাশে পাননি বলেও অভিযোগ স্থানীয় লোকজনের।

মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বের কারণে বেশ ব্যস্ত থাকতে হয় মোজাম্মেল হককে। তার ব্যস্ততা ও এলাকায় না থাকার সুযোগ কাজে লাগাতে চাইছেন অনেক নতুন প্রার্থী। তারা এবার দলের মনোনয়ন পেতে মরিয়া বলে শোনা যাচ্ছে।

ক্ষমতাসীন দল থেকে মনোনায়ন-প্রত্যাশীদের মধ্যে অন্যতম হলেন বিশিষ্ট তরুণ ব্যবসায়ী নূরে আলম সিদ্দিকী। ঘন জনসংযোগের মাধ্যমে এরই মধ্যে বেশ পরিচিতি পেয়েছেন তিনি। বিভিন্ন জনকল্যাণমূলক কাজে তার সম্পৃক্ততা নজর কেড়েছে এলাকাবাসীর।

দেশের পাশাপাশি বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক ব্যবসায়িক ও দাতব্য সংগঠনের কার্যনির্বাহী পদে থাকা নূরে আলম সিদ্দিকী আগামী সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন লাভের আশায় এলাকায় পোস্টার ছেপে ও মোবাইল ফোনে এলাকাবাসীকে শুভেচ্ছা জানান। হাই কমান্ডের সঙ্গেও নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন বলে জানান তার অনুসারীরা।

এ ছাড়া জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহ-সভাপতি ও সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক নেতা অ্যাডভোকেট শফিকুল ইসলাম বাবুল মনোনয়ন চাইবেন বলে জানা গেছে।

তবে নৌকা প্রতীকে প্রার্থী মনোনয়নে প্রবীণ নেতা আ ক ম মোজাম্মেল হকই এগিয়ে বলে মনে করছেন স্থানীয় নেতাকর্মীরা।

অন্যদিকে ২০ দলীয় জোটের প্রার্থী হিসেবে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কাজী ছাইয়েদুল আলম বাবুল আগামী নির্বাচনে ধানের শীষের প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিতে চাইছেন। এ ছাড়া বিএনপির কেন্দ্রীয় সদস্য ও কালিয়াকৈর পৌরসভার মেয়র মো. মুজিবুর রহমান, মো. হুমায়ুন কবির খান এবং সাবেক উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন হেলাল নির্বাচনে প্রার্থী হবেন বলে তাদের সমর্থকদের মধ্যে প্রচার আছে।

এ আসন থেকে ১৯৭৯ সালে বিএনপির প্রার্থী হয়ে এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন চৌধুরী তানভীর আহম্মেদ সিদ্দিকী। পরবর্তী প্রতিটি নির্বাচনেই তিনি বিএনপির প্রার্থী হন। সর্বশেষ ২০০৮ সালের নবম সংসদ নির্বাচনেও বিএনপির প্রার্থী ছিলেন তিনি। কিন্তু জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আ ক ম মোজাম্মেল হকের কাছে বিপুল ভোটে ধরাশায়ী হন তিনি।

বিএনপির দলীয় মনোনয়ন পেতে যারা তৎপরা, তারা সবাই নির্বাচনের মাঠে নতুন। এবারই জাতীয় সংসদের নির্বাচনে প্রথম মনোনয়ন প্রার্থী তারা।

অন্য দলগুলোর মধ্যে জাতীয় পার্টির ভাইস চেয়ারম্যান খন্দকার আবদুস ছালাম প্রার্থী হবেন বলে তার সমর্থকরা জানান। জামায়াতে ইসলামীও প্রার্থী মনোনয়ন দেবে বলে জানা গেছে। তবে তারা এখনো প্রার্থী চূড়ান্ত করেনি। নির্বাচন ও রাজনৈতিক পরিবেশ-পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে বলে জানান নির্বাচনে কমিশনে নিবন্ধনহীন দলটির নেতাকর্মীরা।

(ঢাকাটাইমস/১২জুলাই/মোআ)