উচ্চশিক্ষা নাগরিকের অধিকার নয়
শুধু বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায় কেন, বলতে গেলে স্কুল থেকে শুরু করে শিক্ষাজীবনের প্রতিটি পর্যায়ে আমার লেখাপড়ার খরচের প্রায় পুরোটা দিয়েছে রাষ্ট্র। বেসরকারি ও রাষ্ট্রীয় ভর্তুকিহীন প্রতিষ্ঠানের বাইরে আর সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা তাই বলতেই পারেন- তারা সরকার নয়, জনগণের টাকায় পড়ছেন বা পড়েছেন।
তবে একই সঙ্গে মনে রাখা দরকার, এখন জনতার অংশ হিসেবে প্রতিবছর আমিও রাষ্ট্রকে কর দেই। কিন্তু এই টাকা নির্দিষ্ট কোন খাতে রাষ্ট্র ব্যয় করবে সেটা আমি নির্ধারণ করে দেই না। মৌলিক কিছু ক্ষেত্র- যেমন শিক্ষা, স্বাস্থ্য, খাদ্যের মতো কিছু বিষয় নাগরিকের জন্য নিশ্চিত করার দায়িত্ব রাষ্ট্রের, তবে এগুলোও কতটুকু পর্যন্ত নিশ্চিত করা হবে তারও সীমারেখা নির্ধারিত আছে। যেমন, শিক্ষা নাগরিকের অধিকার, কিন্তু উচ্চশিক্ষা আবার এই অধিকারের সীমার মধ্যে নেই। বিশ্বের সমাজতান্ত্রিক দেশগুলোতেও উচ্চশিক্ষা নাগরিকের অধিকার হিসেবে বিবেচিত নয়।
তাই বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার পড়ার সব খরচ রাষ্ট্র জনগণের কাছ থেকে এনে দিলেও আমাকে ওই পর্যায়ে পড়ানোর দায়বদ্ধতা জনগণ কখনোই রাষ্ট্রের ওপর আরোপ করেনি। তবে তারপরেও আমার মতো অসংখ্য শিক্ষার্থীকে রাষ্ট্র বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়িয়েছে তার নিজস্ব নীতি-সিদ্ধান্তের আলোকে। আমার সময়ের চেয়ে দেশে এখন সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা দ্বিগুণেরও বেশি, শিক্ষার্থী বেড়েছে কয়েকগুণ। এই যে সংখ্যাগত বৃদ্ধি রাষ্ট্রের নীতিগত অবস্থানের একটি প্রকাশ মাত্র। এমনও হতে পারত- রাষ্ট্র এই দেড়যুগে বিশ্ববিদ্যালয় না বাড়িয়ে সেই টাকায় দেশে বাধ সুরক্ষা খাতে ব্যয় করছে!!
কাজেই জনগণের 'শর্তহীন' করের টাকায় বিশ্ববিদ্যালয় হবে, নাকি বাঁধ নির্মাণ হবে, নাকি স্যাটেলাইট উড়বে, নাকি ব্যাংকে পড়ে থাকবে- সেটি একেবারেই রাষ্ট্রের নীতিসংশ্লিষ্ট বিষয় এবং এই নীতি আবার ঠিক করে রাষ্ট্র পরিচালনার রাজনৈতিক শক্তি বা সরকার। আজ গাইবান্ধার যে কৃষক হাটে খাজনা দিয়ে ধান বিক্রি করছেন- তার খাজনার টাকা সারের ভর্তুকি হিসেবে আবার তার কাছে ফিরবে, নাকি নোয়াখালী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র পড়ানোর বেতন হিসেবে শিক্ষককে দেয়া হবে- সেটা সরকার পরিচালিত রাষ্ট্রের সিদ্ধান্ত। বিষয়টি শুনতে ‘বিরক্তিকর’ ঠেকতে পারে, কিন্তু রাষ্ট্র ও সরকার ব্যবস্থাপনাটি এমনই...
লেখক: সাংবাদিক।