কোটা বাতিলের ঘোষণা তবে কেন: প্রধানমন্ত্রীকে রিজভী
হাইকোর্টের রায় থাকা সত্ত্বেও মুক্তিযোদ্ধা কোটাসহ সব কোটা বাতিলের ঘোষণা কেন দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে জানতে চেয়েছেন রুহুল কবির রিজভী। তার যুক্তি, হাইকোর্টের রায় থাকার পরও প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা মানেই আইনের সমতুল্য এবং তা কার্যকর করতে হবে।
শুক্রবার নয়াপল্টনের দলীয় কার্যালয়ে নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখছিলেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব।
সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোনের মুখে গত ১১ এপ্রিল জাতীয় সংসদে কোটা বাতিলের ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী। এরপর ২ মে সংবাদ সম্মেলন আর সবশেষ ২৭ জুন জাতীয় সংসদে আবার তিনি কোটা বাতিলের কথা বলেন।
এর মধ্যে ২ জুলাই থেকে কোটা সংস্কার বা বাতিল বিষয়ে সুপারিশ করতে কমিটি গঠন করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। তাদেরকে ২৩ জুলাইয়ের মধ্যে প্রতিবেদন দেয়ার কথা।
এর মধ্যে তবে ১২ জুলাই বাজেট অধিবেশনের সমাপনী ভাষণে প্রধানমন্ত্রী জানান, মুক্তিযোদ্ধা কোটা সংরক্ষণে আদালতের আদেশ রয়েছে এবং এখন এটা বাতিল করলে আদালত অবমাননা হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধাদের যে কোটা তাতে হাইকোর্টের রায় রয়ে গেছে। যেখানে হাইকোর্টের রায়ে আছে যে, মুক্তিযোদ্ধাদের কোটা সংরক্ষিত থাকবে। তাহলে ওই কোটার বিষয়ে আমরা কীভাবে কোর্টের ওই রায় ভায়োলেট করব? সেটা তো আমরা করতে পারছি না। এই রায় অবমাননা করে তখন তো আমি কনটেম্প অব কোর্টে পড়ে যাব। এটা তো কেউ করতেই পারবে না।’
রিজভী প্রশ্ন তুলেছেন, এই রায় জানার পরও তবে কেন তিনি গত ১১ এপ্রিল কোটা বাতিলের ঘোষণা দিয়েছিলেন।
‘তখন তো হাইকোর্টের রায় ছিল। তখন তার মুক্তিযোদ্ধাদের কথা মনে হয়নি? মুক্তিযুদ্ধ মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি শেখ হাসিনার দরদ ভাঁওতাবাজি ছাড়া আর কিছুই নয়।’
কুমিল্লায় এলডিপি নেতা অলি আহমেদের গাড়িতে হামলার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রী দিয়েছেন বলেও অভিযোগ রিজভীর। বলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি নুন্যতম শ্রদ্ধাবোধ থাকলে ৭১’এর রনাঙ্গনের বীর মুক্তিযোদ্ধা কর্ণেল (অব) অলি আহমেদ বীর বিক্রমের উপর ছাত্রলীগ যুবলীগকে দিয়ে হামলা করাতেন না।’
বিএনপির নেতার দাবি, প্রধানমন্ত্রী যেহেতু সংসদে কোটা বাতিলের ঘোষণা দিয়েছেন, তাই সেটাই হতে হবে। বলেন, ‘সংসদে প্রধানমন্ত্রীর জাতির উদ্দেশ্যে যে কোন ঘোষণা মানেই সেটি আইনের সমতুল্য এবং তা কার্যকর হতে হবে।’
প্রধানমন্ত্রীর আগের ঘোষণাকে প্রতারণা আখ্যা দেন বিএনপি নেতা। বলেন, ‘আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা কোটা বাতিল চায়নি তারা কোট সংস্কার চেয়েছিল। প্রধানমন্ত্রীর গতকালের বক্তব্যে এটা এখন সুস্পষ্ট যে, তিনি ছাত্র আন্দোলনকে বিভ্রান্ত করতেই সেদিন প্রতারণার আশ্রয় নিয়েছিলেন। মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।’
‘সেদিন আমরা বলেছিলাম কোটা বাতিলের ঘোষণা একটা ধাপ্পাবাজি। আন্দোলনে ছাত্র নেতাদেরকে ধোঁকা দেয়ার জন্যই দিনে দুপুরে প্রধানমন্ত্রী ম্যাকিভ্যালির চাতুর্যের আশ্রয় নিয়েছিলেন।’
কোটা আন্দোলনের নেতাদের ওপর হামলা এবং বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার নিয়েও কথা বলেন রিজভী। বলেন, এটি সরকারের নিষ্ঠুর পথ।
বিএনপি নেতা বলেন, ‘ঈদের পর আবারও ছাত্র আন্দোলন শুরু হলে প্রধানমন্ত্রী বেছে নিয়েছেন দলন পীড়নের নিষ্ঠুর পথ। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে হাতুড়ি, রাম দা, আর বাশেঁর লঠিসহ ছাত্রলীগকে লেলিয়ে দেওয়া হয়েছে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের উপর।’
‘কোটা সংস্কার আন্দোলনের অন্যতম ছাত্রনেতা রাশেদকে দিনের পর দিন রিমান্ডের নামে তাকে থেঁতলে দেওয়া হচ্ছে। তার অত্যাচারের বিভীষিকার কাহিনি শুনলে কোন মানুষই চোখের পানি আটকে রাখতে পারবে না। তার মায়ের আহাজারিতে আকাশ বাতাস ভারী হয়ে উঠেছে।’
‘একের পর এক কোটা সংস্কার আন্দোলনের ছাত্রদের এখন গ্রেপ্তার করে তাদের উপর পৈশাচিক উৎপীড়নের মাধ্যমে জানিয়ে দেওয়া হচ্ছে সরকারের বিরুদ্ধে যে কোন আন্দোলনের পরিণতি কত ভয়ংকর হতে পারে। সরকার প্রধান যে কত ভয়াবহ প্রতিশোধ পরায়ণ হতে পারেন তার একের পর এক দৃষ্টান্ত আমরা দেখতে পাচ্ছি আন্দোলনরত শিক্ষাথীদের ওপর নেমে আসা বর্বরতার নিদর্শন দেখে। এ অবৈধ সরকার রাষ্ট্র সমাজের সর্বত্র ঘৃণা ছড়াচ্ছে।’
ঢাকাটাইমস/১৩জুলাই/এনআই/ডব্লিউবি