টাঙ্গাইলে নদী তীরবর্তী এলাকায় এবারও ভাঙন

নিজস্ব প্রতিদেক, টাঙ্গাইল
 | প্রকাশিত : ১৩ জুলাই ২০১৮, ১৯:২২

টাঙ্গাইলে বঙ্গবন্ধু সেতু রক্ষা গাইড বাঁধ, রানা গাছা এলাকায় ঝিনাই নদীতে শহর রক্ষা বাঁধ, পৌলী নদী ও ধলেশ্বরী নদীসহ নদী তীরবর্তী বিভিন্ন এলাকায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। ইতোমধ্যেই নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে শতাধিক ভিটাবাড়িসহ আবাদি জমি।

বঙ্গবন্ধু সেতু রক্ষা গাইড বাঁধ এলাকার সেতুর পূর্ব পাড় গরিলাবাড়ী অংশে গত দুই-তিন দিন যাবৎ ব্যাপক ভাঙন শুরু হয়েছে। এ পর্যন্ত বেশকিছু জায়গা ধ্বসসহ প্রায় ১০টি বসতভিটা নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে। ভাঙন অব্যাহত থাকায় হুমকির মধ্যে রয়েছে দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বঙ্গবন্ধু সেতু। ভাঙন ঠেকাতে সেতু কর্তৃপক্ষ জিও ব্যাগ ফেললেও কোনও কাজে আসছে না বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। ২০০৩ সালে বঙ্গবন্ধু সেতুপূর্ব কালিহাতী উপজেলার গরিলাবাড়ি এলাকায় সেতুর দক্ষিণে সেতু রক্ষার্থে যমুনা নদীতে সিসি ব্লক ও কার্পেটিং করে গাইড বাঁধ নির্মাণ করে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ।

এদিকে টাঙ্গাইল সদরের ঘারিন্দা ইউনিয়নের রানাগাছা এলাকায় ঝিনাই নদীতে শহর রক্ষা বাঁধে ব্যাপক ভাঙন শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যেই বাঁধের বেশির ভাগ অংশ ভেঙে গেছে। কবরস্থান, রাস্তাঘাট ও এ এলাকার শাহাদত এবং সিদ্দিক আলীসহ ৮/১০ জনের বসতি ভিটাও নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। যে কোনও সময় এই বাঁধটি ভেঙে গিয়ে শহরে পানি প্রবেশ করতে পারে। আর আতঙ্কেই রয়েছে এ এলাকার মানুষ।

রানা গাছা এলাকার আব্দুল জলিল বলেন, আমাদের এলাকার রাস্তাটি টাঙ্গাইল শহর রক্ষা বাঁধ হিসেবে ব্যবহার হয়ে থাকে। রাস্তাটির আংশিক ভেঙে পড়েছে। বাকি অংশতেও ফাটল ধরেছে। রাস্তাটি ভেঙে যাওয়া রোধে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানান স্থানীয়রা।

বাসাইল উপজেলার ঝিনাই নদীর ভাঙনে কাশিল কেবিএন উচ্চ বিদ্যালয়ের ভবনের একটি অংশ, নথখোলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবনের একটি অংশ ও শহীদ মিনার ইতোমধ্যেই নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। গত বছর এ উপজেলায় প্রায় দুই শতাধিক ভিটাবাড়ি নদীতে বিলীন হয়।

অপরদিকে এলেঙ্গার পৌলী নদীতে ব্যাপক ভাঙন দেখা দিয়েছে। ইতোমধ্যে নদীর বাম তীরে ৬শ মিটার ও ডান তীরে ৮শ মিটার এলাকায় ৮/১০টি বাড়ি নদীর পেটে চলে গেছে। ডান তীরের ভাঙন টাঙ্গাইল শহর রক্ষা বাঁধ ছুঁই ছুঁই করছে।

পৌলী নদীর বাম তীরে কালিহাতী উপজেলার এলেঙ্গা পৌরসভা ও সহদেবপুর ইউনিয়ন এবং ডান তীরে সদর উপজেলার গালা ও ঘারিন্দা ইউনিয়নের আওতায়। নদীর বাম তীরে (উত্তরাংশে) অর্থাৎ এলেঙ্গা পৌরসভার অংশে ভাঙনের তীব্রতা সবচেয়ে বেশি। গত এক সপ্তাহের ভাঙনে এলেঙ্গা পৌরসভার ফটিকজানী ও মহেলা গ্রামের ৬শ মিটার এলাকার আবাদি জমি এবং মহেলা গ্রামের সেকান্দার আলীসহ কয়েকজনের ৮-১০টি বাড়ি নদীর গর্ভে বিলীন হয়েছে। এ নদীর ভাঙন চারান-লক্ষীবাসা বিল উপ-প্রকল্পের বাঁধের খুব কাছাকাছি চলে এসেছে।

চারান-লক্ষীবাসা বিল উপ-প্রকল্পের বাঁধটি ভেঙে গেলে কালিহাতী উপজেলার পূর্বাঞ্চলের বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়ে ঘরবাড়ি-ফসলি জমি, সরকারি-বেসরকারি স্থাপনার অপূরণীয় ক্ষতি সাধিত হবে।

পৌলী নদীর ডান তীরে রেলব্রিজ সংলগ্ন এলাকাটিও এলেঙ্গা পৌরসভার মহেলা আদর্শ গ্রাম এবং টাঙ্গাইল সদর উপজেলার গালা ইউনিয়নের পাছবেথইর, আগবেথইর ও শালিনা গ্রামের অংশেও ব্যাপক ভাঙন শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে ৮শ মিটার এলাকা ভেঙে নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। ভাঙনের তীব্রতা বেড়ে বর্তমানে কম্পার্টমেন্টালাইজেশন পাইলট প্রকল্পের বাঁধ (টাঙ্গাইল শহর রক্ষা বাঁধ) ছুঁই ছুঁই করছে। এ বাঁধটি ভেঙে গেলে টাঙ্গাইল শহর, গালা, ঘারিন্দা, করটিয়া ইউনিয়নসহ বাসাইল উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকার ডুবে যাবে।

স্থানীয়র জানান, শুকনো মৌসুমে এসব নদীতে বাংলা ড্রেজার বসিয়ে অবাধে বালু উত্তোলন করায় প্রতি বছর ভাঙনের তীব্রতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এসব নদী থেকে প্রতি বছর বালু উত্তোলন চললেও স্থানীয় প্রশাসনের উল্লেখযোগ্য কোনও ভূমিকা দেখা যায়নি বলে স্থানীয়দের অভিযোগ। বালু বিক্রি করে লাভবান হচ্ছে একটি মহল, আর ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সাধারণ মানুষ।

টাঙ্গাইল পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শাজাহান সিরাজ জানান, ভাঙন কবলিত বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করেছি। ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। প্রকল্প অনুমোদিত হলে ভাঙনরোধে কাজ করা হবে।

টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক খান মো. নুরুল আমিন বলেন, ভাঙন কবলিত এলাকা পরিদর্শন করে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, ভাঙন প্রতিরোধে দুই স্তরে ব্যবস্থা নেয়া হবে। বর্তমানে জরুরি প্রতিরোধ ব্যবস্থা ও শুকনো মৌসুমে স্থায়ী প্রতিরোধ ব্যবস্থা।

(ঢাকাটাইমস/১৩জুলাই/আরকে/এলএ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :