চাঁদার টাকা ভাগবাটোয়ারা নিয়ে খুন হন ফরহাদ
আধিপত্য বিস্তার, অটোরিকশা স্ট্যান্ড ও ডিস ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে তো চাঁদার টাকার ভাগবাটোয়ারা নিয়ে বিরোধের জেরে রাজধানীর বাড্ডার আওয়ামী লীগ নেতা ফরহাদ আলী খুন হয়েছেন বলে জানিয়েছে পুলিশ।
এ ঘটনায় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে। তারা হলেন- জাকির হোসেন, আরিফ মিয়া, আবুল কালাম আজাদ ওরফে অনির, বদরুল হুদা ওরফে সৌরভ ও বিল্লাল হোসেন ওরফে রনি।
গতকাল শুক্রবার রাজধানীর গুলশান ও মিরপুর শাহআলী থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় তাদের কাছ কাছ থেকে চারটি বিদেশি আগ্নেয়াস্ত্র, চারটি ম্যাগাজিনসহ ১২ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়।
শনিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মো. আবদুল বাতেন।
সংবাদ সম্মেলনে আবদুল বাতেন বলেন, গত ১৫ জুন বাদ জুমা বাড্ডা থানার আলীর মোড় এলাকায় বাড্ডা থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. ফরহাদ আলীকে গুলি করে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনায় বাড্ডা থানায় একটি হত্যা মামলা করা হয়। এই ঘটনার পরে থানা পুলিশের পাশাপাশি ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা উত্তর বিভাগ তদন্ত শুরু করে।
গোয়েন্দা পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, গত ১০ জুলাই এই হত্যা মামলার আসামি জহিরুল ইসলাম ওরফে সুজনকে গ্রেপ্তার করার পর তাকে আদালতে পাঠানো হলে তিনি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। তার জবানবন্দির ভিত্তিতে গত গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যার দিকে ডিবি উত্তর বিভাগের একটি টিম গুলশান থেকে জাকির হোসেন ও আরিফ মিয়াকে গ্রেপ্তার করে। এ সময় জাকির হোসেনের কাছে থেকে একটি অত্যাধুনিক বিদেশি পিস্তল, দুই রাউন্ড গুলি এবং আরিফ মিয়ার কাছে থেকে চার রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়। তাদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য থেকে শাহআলী থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে আবুল কালাম আজাদ ওরফে অনির, মো. বদরুল হুদা ওরফে সৌরভ ও মো. বিল্লাল হোসেন ওরফে রনিকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় তাদের প্রত্যেকের কাছে থেকে একটি করে অত্যাধুনিক বিদেশি পিস্তল ও ছয় রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়।
গ্রেপ্তারকৃতদের বরাত দিয়ে আবদুল বাতেন বলেন, এলাকায় আধিপত্য বিস্তার, অটোরিকশা স্ট্যান্ড ও ডিস ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে তোলা চাঁদার টাকার ভাগবাটোয়ারা নিয়ে বিরোধের জেরেই খুন হন ফরহাদ আলী। শীর্ষ সন্ত্রাসী রমজান, মেহেদী ওরফে কলিন্স ও আশিক (প্রত্যেকে বিদেশে পলাতক) হত্যার পরিকল্পনা করেন। হত্যাকাণ্ডের কয়েক দিন আগে রমজান ভারতে চলে যান। তিনি তার ছোটভাই সুজন এবং অপর দুইজন সহযোগী জাকির ও আরিফের ওপর হত্যাকাণ্ডের দায়িত্ব দেন।
গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার বলেন, অপরদিকে শীর্ষ সন্ত্রাসী মেহেদীর সামরিক কমান্ডার অমিত তাদের ভাড়াটে শ্যুটার নুর ইসলাম, অনির, সৌরভ, সাদকে দায়িত্ব দেন। সিদ্ধান্ত মোতাবেক ১৫ জুন সকালের দিকেই অমিতসহ শ্যুটাররা উত্তর বাড্ডার সুবাস্তু টাওয়ারের সামনে জড়ো হন। অমিতের নির্দেশনা অনুযায়ী সিদ্ধান্ত হয়, নুর ইসলাম, অনির ও সৌরভ মূল কিলিং মিশনে অংশ নেবেন। আর অমিতের সঙ্গে ব্যাকআপ হিসেবে থাকবেন সাদ ওরফে সাদমান। আনুমানিক দুপুর ১২টার দিকে রমজানের ছোটভাই সুজন কিলিং মিশনে অংশগ্রহণকারী তিনজন শ্যুটার ও ব্যাকআপ সাদকে জাকিরের সঙ্গে অস্ত্রগ্রহণের জন্য একটি রিকশা গ্যারেজে পাঠান। চারজনকেই অস্ত্র বুঝিয়ে দেন শীর্ষ সন্ত্রাসী মেহেদীর অন্যতম আস্থাভাজন পুলক ওরফে পলক। এরপর জাকির তাদেরকে নিয়ে আরিফের কাছে পৌঁছে দেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী আরিফ শ্যুটারদের মসজিদের কাছে নিয়ে গিয়ে বাইরে থেকে টার্গেট ফরহাদকে চিনিয়ে দেন।
আবদুল বাতেন বলেন, নামাজ শেষে ফরহাদ মসজিদ থেকে বের হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই শ্যুটাররা জনসম্মুখে উপর্যুপরি গুলি করে পালিয়ে যায়। পরে শ্যুটাররা তাদের অস্ত্রগুলো শীর্ষ সন্ত্রাসী মেহেদীর সামরিক কমান্ডার অমিতের কাছে বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য পল্লবী এলাকায় যান। সেখানে অমিত তার অপর সহযোগী সুজনের মাধ্যমে অস্ত্রগুলো গ্রহণ করেন। এ হত্যাকাণ্ডে অমিত তাৎক্ষণিকভাবে এক লাখ টাকা শ্যুটারদের মাঝে বন্টন করে দেন। হত্যাকাণ্ডের পরপরই দেশ ত্যাগ করেন রমজানের ছোটভাই সুজন।
আবদুল বাতেন বলেন, গত ৪ জুলাই দিবাগত মধ্যরাতে গোয়েন্দা পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে অজ্ঞাতনামা দুইজন সন্ত্রাসী নিহত হয়। পরে যাদের পরিচয় জানা যায় ফরহাদ হত্যাকাণ্ডের অন্যতম শ্যুটার, ভিডিও ফুটেজে লাল গেঞ্জি পরিহিত নুর ইসলাম ও শীর্ষ সন্ত্রাসী মেহেদীর সামরিক কমান্ডার অমিত।
(ঢাকাটাইমস/১৪জুলাই/এএ/জেবি)