রূপপুর অর্থনীতিকে আরও এগিয়ে নেবে: বরিসভ

তানিম আহমেদ, পাবনা থেকে
 | প্রকাশিত : ১৪ জুলাই ২০১৮, ১৬:১২

পাবনার রূপপুরে পরমাণু বিদ্যুৎ প্রকল্প বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের গতিকে আরও তরান্বিত করবে বলে আশা করছেন প্রকল্প বাস্তবায়নকারী রাশিয়ার উপপ্রধানমন্ত্রী ইউরি ইভানোভিচ বরিসভ।

রূপপুর বিদ্যুৎকেন্দ্রে এক হাজার ২০০ মেগাওয়াটের দ্বিতীয় ইউনিটের কংক্রিট ঢালাইয়ের কাজে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পাশাপাশি উপস্থিত ছিলেন বরিসভও। শনিবার বেলা ১২টার দিকে এই অনুষ্ঠান হয় প্রকল্প এলাকায়।

সেখানে এই অনুষ্ঠান শেষে বক্তৃতাপর্বেও প্রধানমন্ত্রীর পাশাপাশি বক্তব্য দেন রুশ নেতা।

২০১০ সালের ২১ মে রূপপুর পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র বাস্তবায়নের জন্য বাংলাদেশ ও রাশিয়ান ফেডারেশনের মধ্যে চুক্তি হয় মস্কোতে। আর ২০১৫ সালের ২৫ ডিসেম্বর দুই হাজার চারশ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতার দুটি চুল্লি নির্মাণে রাশিয়ার এটমস্ট্রয় এক্সপোর্টের সঙ্গে চুক্তি করে বাংলাদেশ।

২০১৭ সালের নভেম্বরে প্রথম ইউনিটের নির্মাণ কাজ শুরু হয়। আর সাত মাসের মধ্যে শুরু হলো দ্বিতীয় ইউনিটের কাজ। ২০২৩ সালে প্রথম ইউনিট এবং পরের বছর দ্বিতীয় ইউনিট থেকে এক হাজার দুইশ করে মোট দুই হাজার ৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাওয়া যাবে। কেন্দ্রটি টানা ৬০ বছর বিদ্যুৎ দিতে পারবে।

এক লাখ কোটি টাকারও বেশি এই প্রকল্পের সিংহভাগই সহজ শর্তে ঋণ হিসেবে দিচ্ছে রাশিয়া। সেই সঙ্গে দেশটি পরমাণু বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, কেন্দ্র পরিচালনা, কর্মীদের প্রশিক্ষণেরও দায়িত্ব নিয়েছে দেশটি।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বক্তব্যে এই বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের পাশাপাশি ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় রাশিয়ার সহযোগিতার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

রাশিয়ার উপপ্রধানমন্ত্রী এই অনুষ্ঠানে যোগ দিতে আগের রাতে ঢাকায় এসেছেন। তিনি আজকের দিনটিকে রাশিয়া এবং বাংলাদেশের সম্পর্কে একটি মাইলফলক হিসেবে উল্লেখ করেন। বলেন, ‘দুই দেশের সহযোগিতায় সর্ববৃহৎ প্রকল্প এগিয়ে নেয়ার ক্ষেত্রে আজ একটি অগ্রগতি।’

এই বিদ্যুৎকেন্দ্রটি বাংলাদেশের অগ্রগতিতে উচ্চ প্রযুক্তি ব্যবহারের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ বলেও মনে করেন বরিসভ।

বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রশংসা করে বিশ্বের অন্যতম পরাশক্তি দেশটির নেতা বলেন, ‘বাংলাদেশের অর্থনীতি টেকসইভাবে এগিয়ে যাচ্ছে। রূপপুর প্রকল্প বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের গতিকে আরও তরান্বিত করবে এবং হাজারো নতুন চাকরির সৃষ্টি করবে।’

এই প্রকল্পে সম্পৃক্ত থাকতে পেরে রুশ নাগরিক হিসেবে ভীষণ গর্বিত হওয়ার কথাও উল্লেখ করেন বরিসভ। বলেন, পরমাণু শক্তির শান্তিপূর্ণ ব্যবহারে রাশিয়ার বিশেষজ্ঞ এবং প্রকৌশলীরা বাংলাদেশকে সহযোগিতা করে যাবে।

১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার যুদ্ধে দুই দেশের সম্পর্কের ভিত রচিত হয় উল্লেখ করে রুশ নেতা বলেন, ‘আমাদের দেশ যুদ্ধের সময় যেমন সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিল তেমনি এর স্বীকৃতি অর্জন এবং যুদ্ধের পর পাকিস্তানিদের পোঁতা মাইন অপসারণেও কাজ করার পাশাপাশি অর্থনৈতিক উন্নয়নের ক্ষেত্রেও কাজ করে গেছে।’

‘১৯৭২ থেকে ১৯৭৪ সাল পর্যন্ত সোভিয়েত নৌসেনারা চট্টগ্রামের উপকূলীয় অঞ্চলে ডুবে যাওয়া জাহাজ অপসারণ এবং এলাকার মাইন অপসারণে কাজ করে গেছে।’

‘আমার দেশ সম অংশীদারত্ব এবং মর্যাদার বন্ধুত্বে বিশ্বাস করে। আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাংলাদেশ এবং আমরা একসঙ্গে কাজ করে যাচ্ছি।’

বাংলাদেশ এবং রাশিয়ার সম্পর্ক এগিয়ে নেয়ার ক্ষেত্রে ২০১৩ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রাশিয়া সফরকে গুরুত্বপূর্ণ বলেও উল্লেখ করেন বরিসভ। বলেন, সেই সফরে তার দেশের প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে শেখ হাসিনার বৈঠক সম্পর্ক উন্নয়নে অবদান রেখেছে।

এখনও দুই পক্ষের মধ্যে নিয়মিত যোগাযোগ হচ্ছে এবং দুই পক্ষেরই অর্থনৈতিক উন্নয়নের ক্ষেত্র প্রস্তুত হয়েছে এবং প্রযুক্তিখাতে সহযোগিতা নতুন পর্যায়ে উন্নীত হয়েছে-উল্লেখ করেন রাশিয়ার উপপ্রধান মন্ত্রী।

কেবল পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র নয়, বিজ্ঞান প্রযুক্তির অন্যান্য ক্ষেত্রেও বাংলাদেশের সঙ্গে সহযোগিতা করতে আগ্রহের কথাও জানিয়ে দেন রুশ নেতা।

(ঢাকাটাইমস/১৪জুলাই/টিএ/ডব্লিউবি/জেবি)

সংবাদটি শেয়ার করুন

জাতীয় বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

জাতীয় এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :