‘জনগণের মুখোমুখি’ অনুষ্ঠানে এলেন না লিটন

ব্যুরো প্রধান, রাজশাহী
 | প্রকাশিত : ১৪ জুলাই ২০১৮, ১৬:৩৫

রাজশাহীতে জনগণের মুখোমুখি হলেন সিটি নির্বাচনের চার মেয়র প্রার্থী। দিলেন ভোটারদের নানা প্রশ্নের উত্তর। সেইসঙ্গে তুলে ধরলেন নিজের পরিকল্পনার কথা, যা তারা মেয়র নির্বাচিত হলে করতে চান। চার প্রার্থীর সবাই দুর্নীতিমুক্ত নগর ভবন গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

রাজশাহী সিটি নির্বাচনে মোট পাঁচজন মেয়র পদে প্রার্থী হয়েছেন। তবে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) আয়োজিত ‘জনগণের মুখোমুখি মেয়র প্রাথী’ শীর্ষক এ অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের প্রার্থী এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন উপস্থিত ছিলেন না।

শনিবার বেলা ১১টার দিকে নগরীর সাহেববাজার এলাকার একটি কমিউনিটি সেন্টারে এ অনুষ্ঠান শুরু হয়।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, খায়রুজ্জামান লিটন ওই সময় নগরীর বুধপাড়া এলাকায় গণসংযোগ করেন। তবে সুজনের ওই অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আসলাম সরকার উপস্থিত সবার উদ্দেশ্যে বলেন, রাজশাহী-৫ আসনের সংসদ সদস্য কাজী আবদুল ওয়াদুদ দারার মায়ের জানাজার নামাজে অংশ নেওয়ার জন্য খায়রুজ্জামান লিটন আসতে পারেননি। এ সময় তিনি লিটনের পক্ষ থেকে দুঃখ প্রকাশ করেন।

এর আগে বক্তব্য দিতে লিটনের না আসা নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেন বামপন্থি সংগঠন গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি। তিনি বলেন, ‘এ ধরনের অনুষ্ঠানগুলো জনগণের প্রতি প্রার্থীদের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করে। আমি আশা করেছিলাম, রাজশাহীতে যারা মেয়র প্রার্থী হয়েছেন, তারা সবাই আসবেন। সবাই এলে ভোটারের প্রত্যাশা পূরণ হতো।’

বিএনপির মেয়র প্রার্থী মোহাম্মদ মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল বলেন, ‘সকালে একটা প্রত্যাশা নিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়েছিলাম। ভেবেছিলাম সব প্রার্থীই উপস্থিত থাকবো। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, আমার বড় ভাই খায়রুজ্জামান লিটন এলেন না।’

অনুষ্ঠানে মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল ছাড়াও গণসংহতি আন্দোলন সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থী মুরাদ মোর্শেদ, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির প্রার্থী হাবিবুর রহমান ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের শফিকুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।

প্রসঙ্গত, বিভিন্ন সিটি করপোরেশনে নির্বাচনের আগে সব দলের প্রার্থীদের নিয়ে এই ধরনের অনুষ্ঠানের আয়োজন করে থাকে সুজন। সামনে তিন সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে সামনে রেখে সুজনের এই আয়োজনে সিলেটে আওয়ামী লীগ প্রার্থী বদরুদ্দিন আহমেদ কামরান উপস্থিত থাকলেও বরিশালে নৌকার প্রার্থী সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ উপস্থিত ছিলেন না।

অনুষ্ঠানে আফজাল হোসেন নামে এক ভোটার সদ্য সাবেক মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলকে প্রশ্ন করেন, ‘আপনি দায়িত্বে থাকাকালে হোল্ডিং ট্যাক্স বাড়ানো হলো। আপনি কেন কমালেন না? রাস্তা-ঘাটে ঝাড়ু দেওয়া হয়নি। আপনি কেন নগর পরিচ্ছন্ন রাখেননি? পাঁচ বছরে আপনি কী করেছেন?’

জবাবে বুলবুল বলেন, ‘পাঁচ বছরের মধ্যে আমি ৩৪ মাস জেলখানা আর কোর্টের বারান্দায় থেকেছি। বাকি সময় শিখেছি এবং জনগণের জন্য কাজ করেছি। কী করেছি সেটা সবাই জানেন। এবার নির্বাচিত হলে এবং সরকার সহযোগিতা করলে রাজশাহী নগরীকে একটি সমৃদ্ধ নগরীতে পরিণত করবো। আমি যতদিন দায়িত্বে থেকেছি, নগর ভবনে কোনো দুর্নীতি ছিল না, আগামীতেও হবে না।’

মেয়র প্রার্থী হাবিবুর রহমানের কাছে রজব আলী নামে এক কলেজশিক্ষক জানতে চান, তিনি মেয়র নির্বাচিত হলে মাদকের বিরুদ্ধে কী করবেন। জবাবে হাবিবুর রহমান বলেন, ‘আমি মাদক নির্মূল করতে চাই। এটা আমার নির্বাচনি ইশতেহারে আছে। মাদকের সিন্ডিকেট ভেঙে দিয়ে একটা সুন্দর নগরী গড়তে চাই। রাজশাহীকে বলা হয় শিক্ষানগরী। অথচ এর ১০ শতাংশও অর্জিত হয়নি। আমি প্রকৃত শিক্ষানগরী গড়তে চাই।’

আবদুল্লাহ আল মুঈজ নামে এক ভোটার স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী মুরাদ মোর্শেদকে প্রশ্ন করেন, ‘ভোটের আগে সবাই বলে দুর্নীতি করব না, আপনি নির্বাচিত হওয়ার পর দুর্নীতি করবেন না তার নিশ্চয়তা কী?’ জবাবে মুরাদ মোর্শেদ বলেন, ‘নিজের কোনো স্বার্থ ছাড়াই ২০ বছর ধরে মানুষের জন্য কাজ করছি। অতীতে কোনো দুর্নীতি করিনি। তাই আস্থা রাখতে পারেন, পরেও দুর্নীতি করব না।’

বোরহান উদ্দিন নামে এক কলেজছাত্র মেয়র প্রার্থী শফিকুল ইসলামের কাছে জানতে চান, তিনি দুর্নীতি মুক্ত নগর ভবন গড়তে পারবেন কি না। শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘অবশ্যই পারব। দুর্নীতি বন্ধ করে নাগরিক সেবা নিশ্চিত করতে চাই। কারণ, দুর্নীতি থেকে সন্ত্রাসের উৎপত্তি। মেয়র হলে আমি যে সম্মানি পাব, তার অর্ধেক জনকল্যাণে দান করব। হোল্ডিং ট্যাক্স অর্ধেক করে দেব।’

অনুষ্ঠান শুরুর আগে চার মেয়র প্রার্থী একে অপরের হাতে হাত রেখে অঙ্গীকার করেন যে, আচরণবিধি মেনে তারা নির্বাচন করবেন। নানা প্রতিশ্রুতি দিয়ে সুজনের একটি কাগজে স্বাক্ষরও করেন। উপস্থিত ভোটাররাও সব প্রভাবের ঊর্ধ্বে থেকে যোগ্য প্রার্থীকে নির্বাচিত করার শপথ নেন।

সুজনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী দিলীপ কুমার অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন। সভাপতিত্ব করেন সুজনের মহানগর কমিটির সভাপতি পিয়ার বক্স। জেলা কমিটির সভাপতি আহমেদ শফিউদ্দিন এতে স্বাগত বক্তব্য দেন।

(ঢাকাটাইমস/১৪জুলাই/আরআর/জেবি)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :