ব্রহ্মপুত্রের ভাঙনে হুমকিতে জামালপুর-ময়মনসিংহ মহাসড়ক

জামালপুর প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ১৪ জুলাই ২০১৮, ২১:১১

ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলনে ব্রহ্মপুত্র নদে তীব্র ভাঙন শুরু হয়েছে। ভাঙনের মুখে নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে ১৫টি ঘরবাড়িসহ অসংখ্য গাছপালা। হুমকির মুখে পড়েছে জামালপুর-ময়মনসিংহ মহাসড়ক। ভাঙন আতঙ্কে নদীপাড়ের মানুষজন নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছে। ভাঙন কবলিত ক্ষতিগ্রস্ত লোকজন ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন বন্ধসহ ভাঙন রোধে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়ার দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় প্রশাসনের প্রতি।

সরেজমিনে শনিবার গিয়ে নদীপাড়ের লোকজনের সাথে কথা বলে জানা যায়, জামালপুর শহরের হরিপুর এলাকায় ব্রহ্মপুত্র নদের ঘূর্ণিস্রোতে এক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ভাঙন শুরু হয়েছে। গত কয়েক দিনে হাশেম আলী, আজিজুল ইসলাম, নুরুল ইসলাম, মোফাজ্জল, মোন্তাজ আলী ও রহিজল মিয়াসহ ১৫ জনের বাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। নদীভাঙা এসব মানুষজন অন্যের বাড়িতে মাথাগুজার ঠাঁই করে নিয়েছে। ভাঙন আতঙ্কে গাছপালা কেটে বাড়িঘর সরিয়ে নিচ্ছে নদীপাড়ের মানুষেরা।

নদী ভাঙনের শিকার হরিপুর গ্রামের ভিক্ষুক রেনু বেগম (৬৫) কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘স্বামী অসুস্থ হয়ে বিছানায় পড়ে আছে। ভিক্ষা করে কোনোমতে জীবন চালাই। দুইদিন আগে একমাত্র মাথাগুজার ঠাঁই ছাপড়া ঘরটি নদীতে চলে গেছে। অন্যের বাড়িতে গাছের নিচে অসুস্থ স্বামীসহ ঝড়-বৃষ্টি মাথায় নিয়ে রাত কাটাইতেছি। এখন কী করমু ? চোখেমুখে অন্ধকার দেখতেছি।’

একই গ্রামের রিকশা চালক রহেজ আলী (৫০) বলেন, ‘আশা সমিতি থেকে ৫০ হাজার টাকা লোন নিয়ে দুই শতাংশ জমি কিনে টিনের দুইচালা ঘর তুলেছিলাম। জমিসহ ঘরটি নদীতে চলে গেছে। পাঁচ সদস্যের পরিবার নিয়ে অন্যের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছে। এখন জমি কিনে ঘর বানামো কীভাবে, লোন পরিশোধ নিয়ে চিন্তাই আছি। সরকার আমগো পুনর্বাসনের ব্যবস্থা না নিলে খোলা আকাশের নিচে দিন কাটাইতে হবে।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক গ্রামবাসীরা জানায়, লিটনসহ প্রভাবশালী বালু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট ছনকান্দা থেকে হরিপুর পর্যন্ত নদের পাড়ে ২০/২৫টি ড্রেজার বসিয়ে বালু উত্তোলন করায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। পানি বৃদ্ধির সাথে সাথে শুরু হয়েছে ভাঙনের তীব্রতা।

স্থানীয় কাউন্সিলর ফজলুল হক জানান, যেভাবে নদী ভাঙছে ১৫ ফুটের মধ্যে জামালপুর-ময়মনসিংহ মহাসড়ক। দ্রুত ভাঙনরোধে ব্যবস্থা না নিলে যেকোনো মুহূর্তে মহাসড়কটি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাবে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী নব কুমার চৌধুরী বলেন, নদীর গতিপ্রবাহ ডান দিকে মোড় নিয়েছে। শুষ্ক মৌসুমে ড্রেজার দিয়ে অবৈধ বালু উত্তোলন করার ফলে নদীর গভীরতা বেড়ে তলদেশ থেকে মাটি সরে যাওয়ায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। ভাঙন রোধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য উপর মহলে প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে।

জামালপুর বালু ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি হবিবুর রহমান ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলনের বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, ড্রেজারে প্রভাব পড়েনি, প্রকৃতিকভাবে নদীভাঙন দেখা দিয়েছে।

জামালপুরের জেলা প্রশাসক আহমেদ কবির বলেন, একাধিকবার অভিযান চালিয়ে ড্রেজার জব্ধ করলেও অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধ হয়নি। সরেজমিনে খোঁজ খবর নিয়ে ভাঙন রোধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ ও ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে আশ্বাস দেন তিনি।

(ঢাকাটাইমস/১৪জুলাই/প্রতিনিধি/জেবি)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :