সড়ক আছে তবুও ভরসা বাঁশের সাঁকো!

ফয়সাল আহমেদ, শ্রীপুর (গাজীপুর)
 | প্রকাশিত : ১৫ জুলাই ২০১৮, ১১:০৩

গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার শিল্প-কারখানা সমৃদ্ধ একটি গ্রাম মুলাইদ। তেলিহাটি ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের এই গ্রামে প্রায় চৌদ্দ হাজার ভোটারের সাথে অর্ধলক্ষাধিক লোকের বসবাস। রয়েছে ২০টির মতো ছোট বড় শিল্পকারখানা। শিল্পকারখানার কল্যাণে গ্রামের মানুষের ভাগ্যের উন্নয়ন হলেও অপরিকল্পিতভাবে পানি নিষ্কাশন করায় এখন এই শিল্প কারখানাগুলোই গ্রামে বসবাস করা লোকজনের আপদে পরিণত হয়েছে।

পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় কারখানার ব্যবহার্য পানি নিচু জায়গায় নিষ্কাশিত হচ্ছে, এতে কয়েকশ বিঘা কৃষিজমি ও কয়েকটি সড়ক পনির নিচে তলিয়ে গেছে। অনেকটা আলোর নিচে অন্ধকারের মতো এখন বাঁশের সাঁকো ব্যবহার করে চলতে হয় স্থানীয়দের।

জনাকীর্ণ এই গ্রামের জলাবদ্ধতার সমস্যা প্রায় ছয় বছরের। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক থেকে ক্যাপ্টেন সিএনজি পাম্পের সংলগ্ন নিজাম উদ্দিন বাড়ির মোড় হতে নাজিম উদ্দিন খলিফার বাড়ির সড়কটি সারাবছরই জলাবদ্ধতায় নিমজ্জিত থাকে। সড়কটির দক্ষিণ পাশে আলহাজ্ব শরাফত আলী বায়তুল কোরআন নুরানী ও হাফিজিয়া মাদ্রাসা এবং মুলাইদ উত্তর পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। দীর্ঘ সময়েও জলাবদ্ধতা নিরসন করে চলাচলের উপযোগী না করায় স্কুল, মাদ্রাসার শিক্ষার্থী, কারখানা শ্রমিক ও স্থানীয়দের জনদুর্ভোগে পরিণত হয়েছে ওই সড়কটি। বারবার জনপ্রতিনিধিদের কাছে ঘুরেও কোনো সমাধান না পেয়ে স্থানীয়দের উদ্যোগে জলাবদ্ধতার নিমজ্জিত সড়কটির উপর প্রায় ১৫০ ফুট একটি বাঁশের সাঁকো স্থানীয়রা নির্মাণ করা হয়েছে। আর এই বাঁশের সাঁকোই এখন ওই এলাকার মানুষের চলাচলের একমাত্র ভরসা। ইতিপূর্বে এই এলাকার পানি একটি ড্রেনের সাহায্যে লবলঙ্গ খালে নিষ্কাশিত হলেও বর্তমানে ড্রেনের বিভিন্ন জায়গায় প্রতিবন্ধকতা হওয়ায় এই জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে।

স্থানীয় শামসুল আলমের মতে, এই সড়কটি ব্যবহার করে প্রতিদিন প্রায় ১০ থেকে ১২ হাজার কারখানা শ্রমিক ও বিভিন্ন বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা চলাচল করে। জলাবদ্ধতায় ইতিপূর্বে এই সড়কটি ব্যবহার করতে না পারায় প্রায় পাঁচ কিলোমিটার ঘুরে চলাচল করতে হত। সম্প্রতি স্থানীয়দের উদ্যোগে এখানে বাঁশের সাঁকো নির্মাণ করায় জনদুর্ভোগ কিছুটা কমে এসেছে। তবে সেতুতে এক সাথে দুইজন পাশাপাশি পারাপার হতে পারে না। যখন কারখানা ছুটি হয় তখন শ্রমিকদের এক পাশে দাঁড়িয়ে থেকে অন্য পাশের লোকজনদের আসতে সুযোগ দিতে হয়। এতে সময়ের অপচয় হয়। এছাড়াও বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও স্থানীয়দের রাতের বেলায় বাঁশের সাঁকো ব্যবহারে ঝুঁকিও তৈরি হয়।

তেলিহাটি ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি জিল্লুর রহমান জানান, ছয়-সাত বছর আগেও আশপাশের কৃষি জমিতে স্থানীয় কৃষক ধান চাষ করতো। পার্শ্ববর্তী নোমান গ্রুপের তালহা স্পিনিং মিলস্, সাদসান টেক্সটাইল, প্যারাডাইস স্পিনিং কারখানায় ব্যবহার্য পানি ও বৃষ্টির পানিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়ে সড়কের উপর উপচে পড়ে। এতে চল্লিশ-পঞ্চাশ বিঘা জমিতে এখন ফসল ফলানো যাচ্ছে না। আমাদের এই জলাবদ্ধতা নিরসনেও কেউ এগিয়ে আসছে না।

ভ্রাম্যমাণ চাঁটাই বিক্রেতা আলমগীর জানান, আগে এই সড়কে চলাচল করা খুব কষ্টকর ছিল। এখন বাঁশের সাঁকো তৈরি হওয়ায় চলাচলে কিছুটা স্বস্তি পাওয়া যায়। তবে খুব ভয় হয়, কখন জানি ভেঙে পড়ে।

স্থানীয় আবুল কাশেম বলেন, সারাদেশে নাকি উন্নয়নের জোয়ার বইছে আর আমরা উন্নয়নের জলাবদ্ধতার জোয়ারে ভাসছি। ভোটের সময় এলেই খালি তাঁদের (জনপ্রতিনিধিদের) দেখা পাওয়া যায়। এতদিন ধরে এই সামান্যটুকু সমস্যা সমাধান করার জন্য কোনো জনপ্রতিনিধি এগিয়ে আসেনি।

আলহাজ্ব শরাফত আলী বায়তুল কোরআন নুরানী ও হাফিজিয়া মাদ্রাসার মুহতামিম মাওলানা মোহাম্মদ জমির উদ্দিন বলেন, মাদ্রাসার ছোট ছোট শিক্ষার্থীদের যাওয়া আসা সবচেয়ে অসুবিধা হয়। বাঁশের সাঁকো পারাপারের সময় অভিভাবক অথবা মাদ্রাসার শিক্ষকরা তাদের ওই বাঁশের সাঁকো পার করে দিতে হয়। অসাবধানতাবশত কোনো শিক্ষার্থী পানিতে পড়ে গিয়ে যেকোনো সময় প্রাণহানির মতো ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা রয়েছে। তিনি দ্রুত সময়ের মধ্যে সড়কটি পুনঃনির্মাণের দাবি জানান।

এব্যাপারে মুলাইদ উত্তরপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির শফিকুল ইসলাম সরকার জানান, সাঁকোর পারাপারে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বিশেষ নজর রাখা হচ্ছে। এতে তো ঝুঁকি কাটানো সম্ভব হচ্ছে না। জলাবদ্ধতা থাকায় কৃষক তার জমিতে ফসল ফলাতে পারছে না। স্থানীয় কারখানাগুলোকে তিনি পানি নিষ্কাশনের বিকল্প পথ তৈরি করতে অনুরোধ জানান।

এব্যাপারে তেলিহাটি ইউনিয়ন পরিষদের ৭নং ওয়ার্ড সদস্য মোবারক হোসেন মুরাদ জানান, জনদুর্ভোগ লাগবে এ সড়কটি উঁচু করার প্রক্রিয়া করে ছিলাম তবে আশপাশের জায়গা পানির নিচে ডুবে থাকায় উঁচু করার জন্য প্রয়োজনীয় মাটি পাওয়া যাচ্ছে না, এছাড়াও স্থানীয়রা মাটি দিতেও চাচ্ছে না। তাই মেরামত করাও সম্ভব হয়নি।

তেলিহাটি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল বাতেন সরকার বলেন, বিষয়টি সম্পর্কে আমি অবগত ছিলাম না। স্থানীয় ওয়ার্ড সদস্যকে সাথে নিয়ে জনদুর্ভোগ লাঘবে খুব দ্রুতই সমস্যা থেকে উত্তরণে চেষ্টা করবো।

এ বিষয়ে শ্রীপুর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা একেএম মোহিত উল ইসলামের ভাষ্য, এখন পর্যন্ত জনদুর্ভোগের এই বিষয়টি সম্পর্কে আমাকে কেউ অবহিত করেনি, তবে আমি শিগগির জনদুর্ভোগের এই স্থানটি পরিদর্শন করে তা লাগবে ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

(ঢাকাটাইমস/১৫জুলাই/প্রতিনিধি/জেবি)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বাংলাদেশ এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :