কোটা সংস্কার

ঢাবিতে ‘নিপীড়ন বিরোধী’দের ওপর ছাত্রলীগের হামলা

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ১৫ জুলাই ২০১৮, ১৬:১১ | প্রকাশিত : ১৫ জুলাই ২০১৮, ১৩:৫২

কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের পাদদেশে মানববন্ধন শেষে ফেরার পথে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর আবারো হামলা ও বেশ কয়েকজন শিক্ষক লাঞ্চিত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা তাদের ওপর হামলা চালায় বলে অভিযোগ।

রবিবার দুপুর পৌনে ১টার দিকে শিববাড়ি মোড় এলাকায় নির্মানাধীন শেখ রাসেল টাওয়ারের সামনে এই ঘটনা ঘটে। হামলায় প্রায় ১০ সাধারণ শিক্ষার্থী আহত হওয়ার কথা জানা গেলেও তাৎক্ষনিক তাদের পরিচয় জানা যায়নি।

ঢাবির গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ফাহমিদুল হক বলেন, ‘মানববন্ধনের শেষ পর্যায়ে সরকার দলীয় ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীরা আমাদের ঘিরে ফেলে। পরে আমরা রাজু ভাস্কর্যের দিকে যাওয়ার পথে শিববাড়ি মোড়ে শেখ রাসেল টাওয়ারের সামনে তারা শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালায় এবং আমাদেরকে লাঞ্ছিত করে।’

প্রত্যক্ষদর্শী শিক্ষার্থীরা জানায়, ঢাবি শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হওয়ার সময় ছিল বেলা ১১টায়। এর আগে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা কাজী মোতাহার হোসেন ভবনের সামনে মানববন্ধন করে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান কমান্ডের ঢাবি শাখার সাবেক সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল মামুনের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানরা মানববন্ধন করে।

বেলা ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা মানববন্ধন করতে এলে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির প্রচার সম্পাদক সাইফ বাবু, আইনবিষয়ক সম্পাদক আল নাহিয়ান খান জয়, ত্রাণ ও দুর্যোগবিষয়ক সম্পাদক ইয়াজ আল রিয়াদ, স্কুল কার্যক্রমবিষয়ক সম্পাদক জয়নুল আবেদিন, ঢাবি শাখার বঙ্গবন্ধু হলের সভাপতি রকিবুল ইসলাম বাঁধন, সাধারণ সম্পাদক আল আমীন রহমান, হাজি মুহম্মদ মুহসীন হলের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান সানী, কবি জসিম উদ্দিন হলের সভাপতি আরিফ হোসেন সেখানে ছিলেন।

এরপর শিক্ষার্থীরা শহীদ মিনারের পাদদেশে মানববন্ধন শুরু করলে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা তাদের বিপরীত মুখে অবস্থান নেয়। এ সময় উভয় পক্ষের মাইক মুখোমুখি অবস্থান নেয়। মানববন্ধনে সাধারণ শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা বিভিন্ন ভাষায় কটূক্তি করতে থাকেন।

তখন শিক্ষার্থীরা তাদের বক্তব্যের উত্তরে ‘ভুয়া, ভুয়া’বলতে শোনা যায়। এ সময় শহীদ মিনারে অস্থিতিশীল পরিবেশ বিরাজ করে। প্রায় এক ঘণ্টা মানববন্ধনের পর সোয়া ১২টার দিকে শিক্ষার্থীরা শহীদ মিনারে জাতীয় সংগীত পরিবেশ করে।

এর কিছুক্ষণ পর শিক্ষার্থীরা দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে একটি মিছিল নিয়ে রাজু ভাস্কর্যের উদ্দেশে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে আসে। মিছিলটি রাসেল টাওয়ারের সামনে পৌঁছালে ছাত্রলীগ ও মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ডের সন্তানরা তাদের সামনে ও পেছন দিক থেকে আক্রমণ করে। এতে শিক্ষার্থীদের ২০ জনের মতো আহত হয়। এ সময় শিক্ষকদেরও ধাক্কা দেয় ছাত্রলীগের নেতারা। এতে কয়েকজন শিক্ষককে মাটিতে পড়ে যেতে দেখা যায়। পরে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা আবার শহীদ মিনারে গিয়ে অবস্থান নেয়।

হামলার নেতৃত্বে ছিলেন সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আমিনুল ইসলাম ও উপমুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক সম্পাদক আবদুল্যাহ আল মামুন, সলিমুল্লাহ মুসলিম হল শাখা ছাত্রলীগের সহ সভাপতি মিলন, ঢাবি শাখা ছাত্রলীগের সাংগাঠনিক সম্পাদক মামুন বিন সাত্তার, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের প্রচার সম্পাদক সাইফ বাবু, স্কুল ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক জয়নাল আবেদিন সহ পাঁচশতাধিক ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।

আন্দোলনকারীরা বলেন, ছাত্রলীগ প্রথম থেকে আমাদেরকে মানববন্ধনে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেছে। তারা আমাদের শিক্ষকদেরকে জামায়াত-শিবির বলে অপমান করেছে। আমরা মিছিল নিয়ে যাওয়ার সময় হামলা চালায়। সাংবাদিকরা এগিয়ে এলে তাদের ওপরও হামলা করে।

সাধারণ শিক্ষার্থীদের সমাবেশে বক্তব্য দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. ফাহমিদুল হক, অধ্যাপক ড. আব্দুর রাজ্জাক, কোটা সংস্কার আন্দোলনের যুগ্ম আহ্বায়ক মোহাম্মদ রাশেদ খাঁনের মা সালেহা বেগম, আন্তর্জাতিক বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক তানজিম উদ্দিন খান, সমাজকর্মী রাখাল রাহা।

মানববন্ধনে উপস্থিত হন কোটা সংস্কার আন্দোলনের যুগ্ম আহ্বায়ক মোহাম্মদ রাশেদ খানের মা সালেহা বেগম।

তিনি ক্রন্দনরত অবস্থায় বলেন, ‘আমার মানিক (রাশেদ) সাধারণ ছাত্র। সে সরকারের বিরুদ্ধে কোনো সময় জড়িত ছিল না। রাজনৈতিক কোনো দল বা দেশের বিরুদ্ধে কোনো ষড়যন্ত্রে জড়িত নয়। আমার মানিক এমনকি আমরা কেউ কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জড়িত না। আমার মানিক শুধু চাকরির জন্য দাবি করেছিল, কোটা কমানোর জন্য আন্দোলন করছিল। ও তো কোনো অপরাধ করেনি। তারপরও ওকে এমনভাবে হয়রানি করা হচ্ছে কেন?’

তিনি বলেন, ‘আমার আর চাকরি দরকার নেই। আমার মানিককে প্রধানমন্ত্রী ক্ষমা করে দিলে আমি ওকে বাড়ি নিয়ে যাব। ওকে আর কোনোদিন আন্দোলন করতে দেব না।’

রাশেদের মা সালেহা বেগমের বক্তব্যের সময় বিপরীত মুখে অবস্থান নেওয়া ছাত্রলীগের জহুরুল হক হল শাখার সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আমিনুল ইসলাম বুলবুল নানা কটূক্তি করেন।

দুপুর দেড়টার দিকে এসএম হল শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. সায়েম সাংবাদিকদের ক্যামেরা ভেঙে ফেলার চেষ্টা করে এবং কয়েকটি মোবাইল ফোন ভেঙে ফেলে।’

এই বিষয়ে সাংবাদিকরা সায়েমের কাছে জানতে চাইলে তিনি দৌড়ে পালিয়ে যান।

এর আগে সকাল এগারটার দিকে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীরা ও নিপীড়িত শিক্ষার্থীবৃন্দের ব্যানারে ছাত্রলীগ পাল্টা মানববন্ধন করে।

মানববন্ধনে ছাত্রলীগ তাদের বক্তব্যে শিক্ষকদের নানাভাবে লাঞ্চিত করে। তারা শিক্ষকদের জামায়াত শিবির ও বাম বলে আাখ্যায়িত করে।

শিক্ষার্থীরা ও শিক্ষকরা যাতে এই মানববন্ধন করতে না পারে সেজন্য ছাত্রলীগ বিভিন্ন স্থানে অবস্থান নিয়ে তাদের ওপর হামলা চালায়।

কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সদস্য তানভীর হাসান সৈকত মানববন্ধনে বলেন, ‘আন্দোলনের নামে যারা ক্যাম্পাস অস্থিতিশীল করতে চায় তাদের প্রতিহত করতে এবং যারা ভিসির বাসায় হামলা চালিয়েছিল তাদের বিচার দাবিতে আমাদের এই মানববন্ধন।’

মানববন্ধনে ছাত্রলীগ তাদের বক্তব্যে শিক্ষকদের নানাভাবে লাঞ্চিত করে। তারা শিক্ষকদের জামায়াত শিবির ও বাম বলে আখ্যায়িত করে।

শিক্ষার্থীরা ও শিক্ষকরা যাতে এই মানববন্ধন করতে না পারে সেজন্য ছাত্রলীগ বিভিন্ন স্থানে অবস্থান নিয়ে তাদের ওপর হামলা চালায়।

কর্মসূচির এক পর্যায়ে এক শিক্ষকের বক্তব্যের জের ধরে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা উত্তেজিত হয়ে উঠেন।

সাধারণ শিক্ষার্থীদের মানববন্ধনে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আবদুর রাজ্জাক খান বক্তব্য রাখেন। তিনি বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ছাত্রলীগকে ডেকে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালিয়েছে। ভিসি ও প্রক্টর ব্যর্থ।’

তবে ছাত্রলীগের জড়িত থাকার বিষয়টিকে অস্বীকার করে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন বলেন, ‘আন্দোলনকারীরা দুই দলে বিভক্ত হয়ে মারামারি করেছে। এখানে ছাত্রলীগের কেউ ছিল না। যারা বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্ত পরিস্থিতি অশান্ত করতে চায় তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

ঢাকাটাইমস/১৫জুলাই/এনএসএইচ/ডিএম

সংবাদটি শেয়ার করুন

জাতীয় বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

জাতীয় এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :