নিপীড়নের বিরুদ্ধে আগেও ছিলাম ভবিষ্যতেও থাকবো

ফাহমিদুল হক
 | প্রকাশিত : ১৫ জুলাই ২০১৮, ১৯:০২

শিক্ষার্থীদের প্রোগ্রাম ছিল আজ। তাদের নেতাদের ওপর নিপীড়ন হয়েছে, গ্রেফতার হয়েছে, মিথ্যা মামলা দেয়ো হয়েছে; নিপীড়নের বিচার, আটককৃতেদের মুক্তি ইত্যাদির দাবি নিয়ে যে প্রোগ্রাম, তার ভ্যালিডিটি আছে। তাই তাতে সংহতি জানাতে আমরা কয়েকজন শিক্ষক গিয়েছিলাম।

প্রোগ্রাম শুরু হবার সঙ্গে সঙ্গে কগজ দূরত্বে এসে ভিন্ন নামে ছাত্রলীগের সদস্যরা তাদের মাইক চালু করে, বিশ্রি আওয়াজ উৎপাদন করতে থাকে, বক্তৃতা করতে থাকে। যতক্ষণ এখান থেকে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা বক্তব্য দেয় ততক্ষণ তারা ওই অসভ্যতার কাজ করতে থাকে। শিক্ষকদের নিয়ে কটূক্তি করতে থাকে, জামাত-শিবির বলে গালি দিতে থাকে। স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি বলতে থাকে। আবার আমাদের বাম আখ্যা দিয়ে তাকেও অশুভ শক্তি বলে চালানোর চেষ্টা করতে থাকে। বামরা নাকি স্বাধীনতার সময়ে স্বাধীনতার বিরোধিতা করেছে। তানজীমকে উদ্দেশ্য করে বলতে থাকে, মুক্তিযুদ্ধের সময় আপনি কোথায় ছিলেন? ১৯৭১ সালে জন্ম আমার, তানজীমের জন্ম ১৯৭২/৭৩ সালে হবে। কারণ তানজীম বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার পরের ব্যাচের। তাদের বুদ্ধিশুদ্ধির বহর দেখে অবাক হলাম।

সমাবেশের সবাই একসময় শহিদ মিনারের সামনে বসে পড়ে। এবার তারা মাইক রেখে সমাবেশের কাছাকাছি এসে কটূক্তি করতে থাকে। এবার আমরা গিয়ে তাদের দূরত্ব রক্ষা করতে বলি। তারা এরপর এসে আমাদের ওপর চড়াও হয়। মারধর করেনি, কিন্তু যা করেছে তা মারধরের চেয়ে কোনো অংশে কম নয়।

প্রোগ্রাম শেষে করে মিছিল করে যাত্রা শুরু করলে তারা যথারীতি এবার নিপীড়কের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়। তারা দৌড়াদৌড়ি করে মিছিলের সামনে যায়, শিক্ষার্থীদের ওপর আক্রমণ করে। কয়েকজন সাংবাদিককেও আহত করে।

প্রক্টরিয়াল টিমের কেউ আশেপাশে ছিলেন না, একজন পুলিশও ছিলেন না। শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগ যেন হামলা করতে পারে, তার জন্য উন্মুক্ত করে রাখা হয় সবকিছু। আমরা থাকায় শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা একটু কম হয়েছে।

আমরা শহিদ মিনারে আবার ফিরে আসি। এরপর ছাত্রলীগের সদস্যরা আমাদের এক ফুট দূরত্বে এসে কটূক্তি করতে থাকে। দেশ-স্বাধীনতা-বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে জ্ঞান দিতে থাকে। বিরক্ত হয়ে একটা কথাই বলেছি, তোমরা আমাদের এসব নিয়ে জ্ঞান দিও না।

এই পর্যায়ে একজন অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রক্টরের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপিত হয়। প্রক্টরের ফোন প্রথমে বন্ধ থাকলেও পরে খোলা পাই। তিনি যা বলেন, তার সারাংশ এমন: এখানে বিবদমান দুটি পক্ষ, তোমরা এক পক্ষে গিয়েছো, আমাদের জানাওনি, সমস্যা হলে কেবল জানাও, পরিস্থিতির অবনতি হলে তোমরাও দায়ী থাকবা। ক্যাম্পাসে কোনো সমাবেশ হবে না।

উত্তরে আমি তাকে যা বলার বললাম। এক পর্যায়ে দু’জন অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রক্টর আসেন। তারা দু’জনকেই ভালো মানুষ হিসেবে আমরা জানি। তারা এসে ছাত্রলীগকে নিরস্ত্র করেন। আমাদের চলে যাবার জন্য উদ্যোগ নেন। আমরা বলি ছাত্র-ছাত্রীদের আগে নিরাপদে যাবার ব্যবস্থা করেন। কিছু শিক্ষার্থী আমাদের সাথে এবং কিছু শিক্ষার্থী অন্য দিক দিয়ে নিরাপদে ফিরে যায়।

ফেরার সময় লাইব্রেরির সামনে দেখি একজনকে মিলে ৪/৫জন পিটাচ্ছে। আমরা তাকে উদ্ধার করি।

আমাদের নিজ নিজ শিক্ষার্থীরাই বলবে, শিক্ষক হিসেবে আমাদের আন্তরিকতা ও যোগ্যতা কেমন। কিন্তু যা যা হতে চাইনি তার কিছু আমাদের হতে হচ্ছে। আমরা প্রভোস্ট হতে চাইনি, সিন্ডিকেট মেম্বার হতে চাইনি, প্রক্টর-অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রক্টর হতে চাই নি। কিন্তু কয়েকদিন ধরে আমরা যেন অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রক্টরের দায়িত্ব পালন করছি। শিক্ষার্থীদের ওপর নিপীড়ন যেন না হয়, তার জন্য তাদের পাশের গিয়ে দাঁড়াচ্ছি।

আমি আর তানজীম ছাড়া শিক্ষকদের মধ্যে উপস্থিত থেকে বক্তৃতা করেন অর্থনীতির রুশাদ ফরীদী, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতার আব্দুর রাজ্জাক খান। উপস্থিত ছিলেন আন্তর্জাতিক সম্পর্কের আব্দুল মান্নান খান। শেষমুহূর্তে যোগ দেন সামিনা লুৎফা।

আমরা আগের প্রশাসনের সময়েও শিক্ষার্থীদের উপর নিপীড়ন হলে তাদের পাশে দাঁড়িয়েছে, লিখেছি, বিবৃতি দিয়েছি, মানববন্ধন করেছি,কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেছি; এখনও দাঁড়াচ্ছি, ভবিষ্যতেও দাঁড়াবো।

লেখক: শিক্ষক, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

সংবাদটি শেয়ার করুন

ফেসবুক কর্নার বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :