রাজশাহী সিটির ৩ ও ৪ নম্বর ওয়ার্ড

জলাবদ্ধতা দূর করার প্রতিশ্রুতি প্রার্থীদের

রিমন রহমান, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ১৬ জুলাই ২০১৮, ০৯:০১ | প্রকাশিত : ১৬ জুলাই ২০১৮, ০৮:৫০

প্রতীক বরাদ্দ পাওয়ার পর আদাজল খেয়ে মাঠে নেমেছেন রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচনের কাউন্সিলর প্রার্থীরা। ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে চলছে ব্যাপক প্রচারণা। রাসিকের তিন এবং চার নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থীরাও চেষ্টা করছেন ভোটারদের মন জয়ের। তাই দিচ্ছেন নানা প্রতিশ্রুতি। তবে সবচেয়ে বড় প্রতিশ্রুতি আসছে মহল্লার জলাবদ্ধতা দূরের।

তিন নম্বর ওয়ার্ডে ভোটার সংখ্যা ১৪ হাজার ৮৫০ জন। এই ওয়ার্ডের প্রার্থীরা হলেন- আতাউর রহমান (মিষ্টি কুমড়া), হাবিবুর রহমান (ঘুড়ি), কামাল হোসেন (ট্রাক্টর), আলমগীর হোসেন (ঠেলাগাড়ি), কুদ্দুশ আলী (রেডিও), মিজানুর রহমান (লাটিম) ও তাজউদ্দিন আহমেদ (টিফিন ক্যারিয়ার)।

এদের মধ্যে কামাল হোসেন ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর। হাবিবুর রহমান বর্তমান কাউন্সিলর। তিনি বিএনপি থেকে আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েছেন। তাজউদ্দিন আহমেদ ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি পদ থেকে সম্প্রতি পদত্যাগ করেছেন। নির্বাচনে কামাল, তাজউদ্দীন, মিজানুর ও হাবিবুরের মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে বলে ভোটাররা জানিয়েছেন।

তিন নম্বর ওয়ার্ডে ২০০১ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত কাউন্সিলরের দায়িত্ব পালন করেন কামাল হোসেন। সাবেক এই কাউন্সিলর বলেন, আমি ইতোপূর্বে সাত বছর কাউন্সিলর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছি। এ সময় এলাকায় ঈদগাহ, রাস্তাঘাট এবং ড্রেন নির্মাণ করেছি। এরপর ২০০৮ এবং ২০১৩ সালে সিটি নির্বাচনে দুইজন কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছেন। কিন্তু ওয়ার্ডের উন্নয়ন হযনি। তাই এবার ভোটাররা আবার আমাকেই বেছে নেবে বলে আমার বিশ্বাস।

এ ওয়ার্ডে ইতোপূর্বে নির্বাচন করেছেন তাজউদ্দীন আহমেদ। অল্প ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হয়েছেন। তাজউদ্দিন ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। সম্প্রতি এ পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন। তবে এখনও তিনি এলাকায় বিএনপিপন্থী হিসেবেই পরিচিত। তিনি এর আগেও কাউন্সিলর পদে নির্বাচন করেছেন। তাজউদ্দিন বলেন, একজন উন্নয়নকর্মী হিসেবে আমি সর্বদা সাধারণ মানুষের পাশে থাকতে চাই। এ ওয়ার্ডে নাগরিক ভোগান্তি রয়েছে। আমি সমস্যাগুলো দূর করতে চাই।

আরেক প্রার্থী মিজানুর রহমান বলেন, আমি এর আগে নির্বাচন করিনি। আমাদের এ ওয়ার্ডটিতে উন্নয়ন হয়নি। ওয়ার্ডের মানুষ নানা সমস্যায় জর্জরিত। ভোগান্তিগুলো আমাকে নানাভাবে পীড়া দেয়। চেষ্টা করি মানুষের দুর্ভোগ লাঘবের জন্য। আর সে কারণেই এলাকাবাসীর কথা মাথায় রেখে এবার কাউন্সিলর পদে প্রার্থী হয়েছি। আশা করছি, ভোটাররা আমাকে নির্বাচিত করবেন।

তিন নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা অবসরপ্রাপ্ত কলেজশিক্ষক শেখ জিয়াউল করিম বলেন, জলাবদ্ধতা এই ওয়ার্ডের মারাত্মক সমস্যা। দুর্বল ড্রেনেজ ব্যবস্থার কারণে সামান্য বৃষ্টিতেই এলাকা তলিয়ে যায়। এতে তারা দুর্ভোগে পড়েন। এই দুর্ভোগ যিনি দূর করতে পারবেন বলে মনে হবে, তিনি তাকেই ভোট দেবেন।

এদিকে রাজশাহীর চার নম্বর ওয়ার্ডেও চলছে নির্বাচনী প্রচার। কাউন্সিলর প্রার্থীরা দিনভর সমর্থকদের নিয়ে ভোটারদের সাথে কুশল বিনিময় করছেন। বাড়ি বাড়ি গিয়ে চাইছেন ভোট। দিচ্ছেন উন্নয়নের নানা প্রতিশ্রুতি। চেষ্টা করছেন ভোটারদের মন জয়ের। তবে ভোটাররা বলছেন, প্রতিশ্রুতির ফুলঝুড়ি যতোই ঝরুক না কেন, যোগ্য প্রার্থীকেই তারা নির্বাচিত করবেন।

চার নম্বর ওয়ার্ডে ভোটার সংখ্যা ১০ হাজার ১৮৬ জন। এ ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে পাঁচজন প্রার্থী রয়েছেন। তবে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সাবেক কাউন্সিলর সাজ্জাদ হোসেন (ট্রাক্টর) এবং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ফিরোজ কবির (ঠেলাগাড়ি) থাকবেন বলে মনে করছেন ভোটাররা।

চার নম্বর ওয়ার্ডে সাজ্জাদ এবং ফিরোজ ছাড়াও অন্য প্রার্থীরা হলেন- বর্তমান কাউন্সিলর বিএনপি থেকে আওয়ামী লীগে যোগদানকারী রুহুল আমিন টুনু (ব্যাডমিন্টন র‌্যাকেট), ওয়ার্ড বিএনপির সহ-সভাপতি ফজলে কবির টুটুল (লাটিম) এবং আজিমুদ্দিন আজিম (রেডিও)। এদের মধ্যে প্রথমবারের মতো নির্বাচন করছেন ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ফিরোজ কবির।

তিনি বলেন, ১৯৮৮ সালে সিটি করপোরেশন গঠনের পর থেকে দুইজন ব্যক্তি এই ওয়ার্ডে কাউন্সিলর হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন। এ দু’জনই অতীতে বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। দল বদল করে তারা আওয়ামী লীগে এসেছেন। তারা এলাকার কোনো উন্নয়ন করতে পারেননি। ফলে ওয়ার্ডটি অবহেলিতই থেকে গেছে। এলাকায় বস্তিবাসীর সংখ্যা বেশি। সেখানেও কোনো উন্নয়ন হয়নি। রয়েছে জলাবদ্ধতা। নির্বাচিত হলে এ সমস্যাগুলো আমি সমাধান করব।

বিএনপি নেতা ফজলে কবির বলেন, এ ওয়ার্ডে বঙ্গবন্ধু হাইটেক পার্ক নির্মাণ করা হচ্ছে। এখানে ১৪ হাজার তরুণ-তরুণীর কর্মসংস্থান হবে। এলাকার বেকাররা যেন হাইটেক পার্কে চাকরি পায়- সে ব্যাপারে আমার সর্বোচ্চ চেষ্টা থাকবে। আমি এলাকায় খেলার মাঠ এবং শিশু পার্ক নির্মাণ করতে চাই। এছাড়া ওয়ার্ডটি থেকে মাদক চিরতরে নির্মূল করে এলাকার বিপথগামী যুব সমাজকে রক্ষা করার আন্তরিক উদ্যোগ থাকবে।

১৯৮৮ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ ২৫ বছর এ ওয়ার্ডের কাউন্সিলরের দায়িত্ব পালন করেছেন সাজ্জাদ হোসেন। এবারও তিনি প্রার্থী হয়েছেন। সাজ্জাদ বলেন, এলাকা থেকে সন্ত্রাস দূর করা হবে আমার প্রধান কাজ। কারণ, এলাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি ঘটেছে। জলাবদ্ধতা দূর করতে হড়গ্রাম ছিটমহলের ডা. নূরুজ্জামানের বাড়ি থেকে কেশবপুর পুলিশ লাইন পর্যন্ত ড্রেন নির্মাণ করা হবে।

বর্তমান কাউন্সিলর রুহুল আমিন বলেন, এলাকা ময়লা আর্বজনামুক্ত রাখতে আমি পরিচ্ছন্নকর্মী নিয়োগ করেছি। এলাকা আগের থেকে এখন অনেক পরিচ্ছন্ন। তবে মাত্র চার বছর সময় পাবার কারণে নির্বাচনী প্রতিশ্রুতির অনেক কিছুই পূরণ করা সম্ভব হয়নি। এবার ভোটররা আমাকে নির্বাচিত করলে অসম্পন্ন কাজগুলো শেষ করার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করব।

কেশবপুর এলাকার স্কুলশিক্ষক জাহিদুল ইসলাম বলেন, প্রার্থীদের মধ্যে দু’জন ১৯৮৮ সালের পর থেকে ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ছিলেন। তাদের সম্পর্কে ধারণা রয়েছে। নতুন প্রার্থীরাও চেনাজানা। এলাকায় জলাবদ্ধতা বড় সমস্যা। তাছাড়া রাস্তাঘাটের অবস্থাও খুব খারাপ। রয়েছে মাদকের ছোবল। এসব সমস্যার সমাধান যিনি দিতে পারবেন, তিনি তাকে ভোট দেবেন।

(ঢাকাটাইমস/১৬জুলাই/আরআর/জেবি)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :