বিশ্বকাপ না জিতলেও বিশ্ববাসীর মন জিতেছে ক্রোয়েশিয়া

আব্দুস সালাম মুর্শেদী
| আপডেট : ১৬ জুলাই ২০১৮, ১৯:৫৩ | প্রকাশিত : ১৬ জুলাই ২০১৮, ১৬:০৩

বিশ্বকাপ শেষ। এবার স্বাভাবিক রুটিনে ফেরার পালা।ব্যবসা বাণিজ্য ও অন্যান্য হাজারো ব্যস্ততা রেখে গত এক মাস ফুটবলে নিবিড় মনোযোগ দিতে হয়েছে। রাত জেগে খেলা দেখতে হযেছে। মিডিয়াকে প্রচুর সময় দিতে হয়েছে। বলতে গেলে, একটা মাস ফুটবল ও মিডিয়া নিয়েই থাকতে হয়েছে আমাকে। অনেক কষ্ট হয়েছে, শরীরের উপর ধকল গেছে। তারপরেও ভালো লেগেছে।কারণ আমি ফুটবলের মানুষ।এই খেলাটা আমার রক্তের সঙ্গে মিশে আছে। যাহোক, এবার দৈনন্দিন স্বাভাবিক নিয়মে ফিরে যেতে হবে। তবে এই বিশ্বকাপ বিশেষভাবে মনে থাকবে আমার।

এই বিশ্বকাপ বিশ্ববাসীর কাছেও স্মরণীয় হয়ে থাকবে। রাশিয়া বিশ্বকাপ অনেক কিছু দিয়ে গেল। অনেক কিছু শিখিয়েও গেল। অনেক সফল একটা আয়োজন। রাশিয়া অবশ্যই ধন্যবাদ পাওয়ার যোগ্য।

এবারে বিশ্বকাপের বেশিরভাগ প্রেডিকশন টিকেনি। তবে ফাইনালেরটা টিকলো। আমার মতো বেশিরভাগ মানুষ ফ্রান্সকে এগিয়ে রেখেছিলেন। ক্রোয়েশিয়া দুর্দান্ত খেললো, ফ্রান্সের চেয়ে বেশি আক্রমণ করলো। বল পজিশনে অনেক অনেক এগিয়ে থাকার পরও তারা জিতলো না। এখানে অভিজ্ঞতা, দুর্ভাগ্য এবং পরিকল্পনার অভাবকে দায়ি করব আমি। ফ্রান্সের কাউন্টার অ্যাটাকগুলো ভয়ানক এবং খুবই কার্যকর। এমবাপে গ্রিজম্যান তো ১০০ মিটার চ্যাম্পিয়ন হওয়ার মতো গতিতে দৌঁড়ান। ক্রোয়েশিয়ার উচিৎ ছিল ফ্রান্সের ভয়ানক আক্রমণ সামাল দিতে আরও আঁটসাঁট রক্ষণভাগ সাজানো।

ফাইনালের মতো ম্যাচে অতীত অভিজ্ঞতা, ঐতিহ্য একটা ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়। ফ্রান্স আগে দুইবার ফাইনালে খেলেছে। একবার কাপ জিতেছে। সে তুলনায় ক্রোয়েশিয়া নতুন একটা দল। বেশিদিন হয়নি তারা স্বাধীন হয়েছে।বিশ্বকাপের ফাইনাল খেলার অভিজ্ঞতা ছিল না তাদের।

এখানে ভাগ্যটাও সহায় ছিল না ক্রোটদের। প্রথম গোলটা আগ্মঘাতি। তবে পিছিয়ে পড়ার পর যেভাবে দ্রুত তারা ক্যামব্যাক করেছে, তা ছিল দেখার মতো। আত্মঘাতি গোলের পর পেনাল্টি গোলটা ক্রেয়েশিয়াকে ব্যাটফুটে নিয়ে গেল। দুর্ভাগ্য তাদের। বলটা গোল অভিমুখে ছিল না।খেলোয়াড় ইচ্ছা করেও বল হাতে লাগাননি। বল জোরেও হাতে লাগেনি।রেফারি রিপ্লে নিয়ে সিদ্ধান্ত দিয়ে দিলেন। বড় ম্যাচে এমন একটা সিদ্ধান্তই ম্যাচের ফল নির্ধারণ করে দিতে পারে। অথচ আমরা দেখেছি, ব্রাজিলের জেনুইন পেনাল্টির আবেদন কীভাবে প্রত্যাখান হয়েছে। রেফারির সিদ্ধান্ত ফ্রান্সের দিকে গেল। ভাগ্যটাও সহায় ছিল তাদের। তবে আমি বলছি না যে, তারা যোগ্য দল হিসেবে জিতেনি। অবশ্যই তারা যোগ্য দল হিসেবে জিতেছে। ফ্রান্সের খেলার ধরনটাই আসলে এমন। কাউন্টার অ্যাটাক এবং সেটা এত দ্রুতগতিতে যে, যে কোনো রক্ষণভাগ উড়ে যাবার মতো। খুবই জনপ্রিয় হয়ে থাকবে এই কৌশল।

তবে হারলেও বিশ্ববাসীর মন জয় করেছে ক্রোয়েশিয়া। এবং তা নানা কারণে। তারা দুটি গোল খেয়েছে দুর্ভাগ্যবশত, বলের পজিশন, আক্রমণের সংখ্যা, শটেও ফ্রান্সের চেয়ে ঢের এগিয়ে ছিল। ফ্রান্সের মতো ক্ষুরধার ও কার্যকর আক্রমণ করতে না পারলেও ক্রোশিয়ার সার্বিক পারফরম্যান্সে দারুণ মুগ্ধ ফুটবল দুনিয়া। ভালো লাগছে লুকা মদ্রিচ গোল্ডেন বল পাওয়ায়। পুরো বিশ্বকাপে নিজে অসাধরণ খেলেছেন এবং দলকেও সেভাবে চাঙ্গা রেখেছেন।

ফাইনাল শেষে চার দেশের রাষ্ট্রপ্রধান এলেন পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে। সচরাচর এমনটা দেখা যায় না। এবং সুন্দর পরিসমাপ্তির বার্তা হয়ে অঝরো বৃষ্টি এলো। এটাও বিশ্বকাপ ফাইনালের ব্যতিক্রম দৃশ্য। সেই অঝোর বৃষ্টিতে নেচে গেয়ে বিশ্বকাপ ট্রফি নিয়ে উৎযাপন করলেন বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা। আহ, কি সুন্দর দৃশ্য। কি আনন্দ বৃষ্টি! এই আনন্দ বৃষ্টির কথা বিশ্ববাসীর মনে থাকবে।

মনে থাকবে ফ্রান্স- ক্রোয়েশিয়া ৬ গোলের তুমুল ফাইনালের কথা। বিদায় রাশিয়া বিশ্বকাপ।

আব্দুস সালাম মুর্শেদী: সাবেক তারকা ফুটবলার

সংবাদটি শেয়ার করুন

খেলাধুলা বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

খেলাধুলা এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :