৯৯৯-এ ফোন, নির্যাতিতা নারীর পাশে পুলিশ

সালেহ ইমরান
| আপডেট : ১৬ জুলাই ২০১৮, ২২:০১ | প্রকাশিত : ১৬ জুলাই ২০১৮, ১৮:৩৫

৯৯৯ এর একটি কল থেকে আমার নিজ এলাকা ভালুকায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। ইউপি মেম্বারসহ ৭ জনকে আসামি করে ধর্ষণ, নির্যাতন এবং অবৈধ গর্ভপাতের অভিযোগে থানায় মামলাও দায়ের হয়েছে।

ঘটনাটি আমার নিজ গ্রামের। অর্থাৎ ময়মনসিংহ জেলার ভালুকা উপজেলার কাদিগড় গ্রামের। তাই ঘটনাটির জ্বলন্ত সাক্ষী বলা চলে। আমি মুগ্ধ পুলিশ এবং ৯৯৯ এর আন্তরিকতায়।

যে গ্রামের মানুষ এতোদিন শুধু জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ এর কথাই শুনেছে। কোনো দিন ভাবতে পারেনি ৯৯৯ গ্রামের মানুষের কথাকে গুরুত্ব দিয়ে একজন নির্যাতিতা মহিলার পাশে দাঁড়াবে। তাদের কথাকে গুরুত্ব দিয়ে গ্রামে পুলিশ আসবে, ঘটনার সত্যতা যাচাই করে আইনগত ব্যবস্থা নিবে এসবই তাদের কাছে ছিল দুঃস্বপ্ন।

তাদের সেই দুঃস্বপ্ন সত্যি হলো হলো গত ১৩ জুলাই শুক্রবার। মুখোশ উন্মোচন হলো একজন চরিত্রহীন লম্পটের। ভেস্তে গেলো বিবাহের প্রলোভন দেখিয়ে দিনের পর দিন ধর্ষণ করে তার ফলে গর্ভবতী এক মহিলাকে সেই সন্তান নষ্ট করিয়ে নিজের কাজ হাসিল করে মহিলাকে খারাপ বানিয়ে নাম মাত্র ক্ষতিপূরণ দিয়ে সামাজিকভাবে হেয় করা।

তাদের সকল পরিকল্পনাই ঠিক ছিল। কারণ এই তারাই সমাজের হর্তাকর্তা। তাদের বাইরে এই সমাজের গাছের একটি পাতাও নড়ে না।

এর আগে মূল অভিযুক্তের বিরুদ্ধে একাধিক নারী কেলেঙ্কারীর অভিযোগকে কেন্দ্র করে মানুষকে ফাঁসিয়ে অর্থ নেওয়ার অভিযোগ আছে। অভিযোগ আছে তার নিজের মেয়েকে পর্যন্ত ব্যবহার করে অর্থ নেওয়ার।

এই তিনিই আবার একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দুই বারের সভাপতি ছিলেন। খুব গর্ব নিয়ে অনেকে তার নাম উচ্চারণ করেন। এরকম চরিত্রহীন লম্পটের নাম যারা খুব গর্ব করে উচ্চারণ করে তাদের চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন জাগাটা কি অস্বাভাবিক কিছু! আসলেই বলার ভাষা নেই। অথচ সেই স্কুলের সভাপতি থাকা অবস্থায় তার বিরুদ্ধেও ছিল নজীরবিহীন দুর্নীতির অভিযোগ।

তার ক্ষমতা এতো বেশী যে তিনি বিদ্যালয়ের সাইনবোর্ড নিজে হাতে ভেঙে সেটাকে কেন্দ্র করে আরেকজনকে ফাঁসাতে থানায় মামলা পর্যন্ত করতে গিয়েছিলেন।

ঘটনাটির ভুক্তভোগী আর কেউ নয় এই আমি নিজেই। তখন পড়াশুনার সুবাদে ঢাকায় থাকলেও সেই ঘটনায় আমাকে ফাঁসানোর এই ন্যাক্কারজনক চক্রান্ত করা হয়েছে। আমার অপরাধ, বাবা মারা যাওয়ার পর এলাকার বিভিন্ন অনিয়ম, দুর্নীতি নিয়ে কথা বলেছিলাম। স্কুলের অনিয়ম নিয়ে কথা বলেছিলাম।

এই মহান ব্যক্তির গুণকীর্তন এবং ক্ষমতার কথা বললে শেষ হবে না। এই জঘন্য ঘটনার পরও তার সাঙ্গপাঙ্গরা এলাকায় এখনো প্রকাশ্যে হুংকার দিয়ে বেড়াচ্ছে যে তার একটা চুলও কেউ ছিড়তে পারবে না। যোগ্য নেতার কি যোগ্য উত্তরসুরী!

এতো বড় ঘটনায় ভিকটিম স্ত্রীর মর্যাদা পেতে তার বাড়িতে কয়েককবার চলে আসলেও সে ঠিকই লোকজন দিয়ে বের করে দিয়েছে। গত শুক্রবারও ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে তাই করেছিল।

তার ক্ষমতার কাছে অসহায় এলাকার মানুষ দূর থেকে ঘটনাটি দেখলেও কেউ কাছে যাবার সাহস পায়নি। কেউ একজন এগিয়ে এসে বলেনি এই মহিলার অপরাধ কি! তাকে এভাবে নির্যাতন করা হচ্ছে কেন? কেউ একজন মুঠফোনে সেই ঘটনার ভিডিও করতে চাইলে তাকে পর্যন্ত হুমকি দেওয়া হয়েছে। এরকম ঘটনা এর আগে ফেসবুকে ভাইরাল হলেও এই প্রথম দেখার সৌভাগ্য হয়েছে।

যাই হোক, তার সমস্ত ক্ষমতা আর পরিকল্পনা ভেস্তে দিয়েছে জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ এর একটি কল। কল পেয়েই নড়ে চড়ে বসে প্রশাসন। ঘটনার সত্যতা পেয়ে অভিযুক্ত সেই ব্যক্তি, এলাকার ইউপি মেম্বারসহ ৮ জনকে আসামি করে থানায় মামলা রুজু হয়। এলাকার মানুষ প্রাথমিকভাবে স্বস্তি প্রকাশ করলেও তারা সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করে।

তারা চায় এরকম চরিত্রহীন লম্পটরা যেন সমাজের মানুষকে আর কখনো জিম্মি করতে না পারে সে ব্যাপারে প্রশাসন কঠিন ব্যবস্থা নেবে। তারা চায় তাদের সমস্ত কথা ৯৯৯ এর মত নির্ভয়ে যেন পুলিশের কাছে ঘরে বসেই বলতে পারে।

আর পুলিশ হিসেবে এমন একটি দিনের প্রত্যাশা সবসময়ের। ধন্যবাদ ৯৯৯, ধন্যবাদ বাংলাদেশ পুলিশ।

সবার কাছে অনুরোধ আপনার চোখের সামনে নির্যাতিত যে কোন মানুষকে সবার আগে দয়া করে থানায় যাওয়ার পরামর্শ দিন। না হলে এই সমাজ তাকে ব্যবহার করে শুধু নিজেদের পকেট ভারী করবে বিনিময়ে সেই ভিকটিম এক বুক কষ্ট ছাড়া আর কিছুই পাবে না। বুঝ হওয়ার পর থেকে আমার গ্রামে এক শ্রেণির লম্পটদের এই প্রাকটিসটাই দেখে আসছি। জানি না অন্য গ্রামের কি অবস্থা।

তাই বলছি, পুলিশ খারাপ হলেও সব পুলিশ পচে যায়নি। তারা আপনাকে খুব বেশী উপকার করতে না পারলেও আপনাকে একটু সুন্দর পরামর্শ হলেও দিবে, আর এজন্য মহান সৃষ্টিকর্তা কাউকে না কাউকে এই পেশায় আসার সুযোগ করে দিয়েছেন। আমি ধন্য, গর্ববোধ করি এমন একটি পেশার সদস্য হিসেবে।

মানুষের বিপদে প্রকৃত বন্ধু হিসেবে বাংলাদেশ পুলিশ হোক একটি আস্থার নাম তার জন্য যেমন সবার আন্তরিক সহযোগিতা কাম্য তেমনি কাম্য সবার সচেতনতা।

লেখক: উপ-পুলিশ পরিদর্শক, পিবিআই (ঢাকা জেলা)

সংবাদটি শেয়ার করুন

ফেসবুক কর্নার বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :