পোশাক শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ৬৩৫০ টাকা চায় বিজিএমইএ

প্রকাশ | ১৬ জুলাই ২০১৮, ২২:৫৪ | আপডেট: ১৬ জুলাই ২০১৮, ২৩:০২

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
ফাইল ছবি

২০১৩ সালে পোশাক খাতে ন্যূনতম মজুরি যেখানে প্রায় শতভাগ বাড়ানো হয়েছিল, সেটি এবার ২০ শতাংশও বাড়াতে রাজি নয় মালিকপক্ষ।

নতুন মজুরি বোর্ড গঠনের পর শ্রমিক সংগঠনের পক্ষ থেকে ন্যূনতম মজুরি যেখানে ১২ হাজার টাকা নির্ধারণের দাবি উঠেছে, সেখানে মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর দিতে চাইছে ছয় হাজার ৩৬০ টাকা।

বর্তমানে ন্যূনতম মজুরি পাঁচ হাজার ৩০০ টাকা। অর্থাৎ মালিকপক্ষ ১৯ শতাংশের কিছু বেশি মজুরি বাড়াতে চাইছে।

মঙ্গলবার পোশাক খাতের শ্রমিকদের জন্য নিম্নতম মজুরি নির্ধারণে বোর্ডের সদস্যদের কাছে এ প্রস্তাবনা তুলে ধরা হয়। রাজধানীর তোপখানা রোডের নিম্নতম মজুরি বোর্ডের চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে হয় এই বৈঠক।

মালিক ও শ্রমিক পক্ষের প্রস্তাব পর্যালোচনা করে সরকারের কাছে প্রতিবেদন জমা দেবে নিন্মতম মজুরি বোর্ড।

পোশাক শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি পুনঃনির্ধারণ করা হয়েছিল ২০১৩ সালের ১ ডিসেম্বর। পাঁচ হাজার ৩০০ টাকা ন্যূনতম মজুরি ঠিক করা হয় তখন। নতুন কাঠামোয় ওই বেতন তারা পাচ্ছেন পরের জানুয়ারি থেকে। আর চলতি বছরের ১৪ জানুয়ারি পোশাক শ্রমিকদের নতুন মজুরি নির্ধারণে মজুরি বোর্ড গঠন করে সরকার।

বোর্ডকে আগামী ছয় মাসের মধ্যে শ্রমিকদের মজুরি নির্ধারণ করে সুপারিশ দিতে বলা হয়।

এরই মধ্যে সরকারি শিল্প শ্রমিকদের বেতন শতভাগ বাড়িয়েছে সরকার। পোশাক শ্রমিকদের বেতন কত শতাংশ বাড়বে, এই বেতন বৃদ্ধির সিদ্ধান্তে তার প্রভাব রয়েছে বলেই ধারণা করা হচ্ছে।

তবে বিজিএমইএ যে প্রস্তাব দিয়েছে, সেটি সরকারের বেতন বৃদ্ধির এমনকি আগেরবারের তুলনায় একেবারেই কম।

এত কম মজুরি বৃদ্ধির প্রস্তাবনা কেন দেয়া হলো -এমন প্রশ্ন ছিল বিজিএমইএ সভাপতি সিদ্দিকুর রহমানের কাছে। জবাবে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘গত পাঁচ বছরের মূল্যস্ফীতি বিবেচনায় আমরা আমাদের প্রস্তাবনা জমা দিয়েছি। সেই মূল্যস্ফীতি ও অন্যান্য বিষয় বিবেচনায় ইতোপূর্বেও মজুরি নির্ধারণ হয়েছে। আমরা এবারও সেভাবেই প্রস্তাবনা জমা দিয়েছি।’

‘শ্রমিকের চাহিদা ও মালিকের সক্ষমতা অনুযায়ী-ই আমরা মজুরি নির্ধারণ করতে চাই।’

মজুরি বোর্ডের বৈঠকে ছিলেন নিম্নতম মজুরি বোর্ডে চেয়ারম্যান সিনিয়র জেলা জজ সৈয়দ আমিনুল ইসলাম, মালিকপক্ষের প্রতিনিধি কাজী সাইফুদ্দীন আহমদ, শ্রমিক পক্ষের প্রতিনিধি ফজলুল হক মন্টু ও নিরপেক্ষ প্রতিনিধি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কামাল উদ্দিন।

মালিক পক্ষের প্রতিনিধি বিজিএমইএ সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান ও শ্রমিক পক্ষের প্রতিনিধি জাতীয় শ্রমিক লীগের নারী বিষয়ক সম্পাদিকা বেগম শামসুন্নাহার ভূঁইয়া।

বৈঠক শেষে নিম্নতম মজুরি বোর্ডের চেয়ারম্যান সিনিয়র জেলা জজ সৈয়দ আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘মজুরি নির্র্ধারণে আমাদের সময় হল ছয় মাস। আগামী ১৮ আগস্ট ৬ মাস পূর্ণ হবে। কিন্তু আমাদের কাজ শেষ করতে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময় লাগবে। আমরা এরই মধ্যে আরও তিন মাস সময় বাড়ানোর জন্য গতকাল সরকারের কাছে প্রস্তাব পাঠিয়েছি।’

‘নভেম্বর পর্যন্ত সময় নিচ্ছি, কিন্তু তার আগেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে পারব বলে আশা করছি। আমরা সব সময় চেষ্টা করি উভয়পক্ষের সম্মতিতেই যাতে একটি চূড়ান্ত প্রস্তাব জমা দেয়া যায়।’

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে শ্রমিক পক্ষের প্রতিনিধি শামসুন্নাহার ভূঁইয়া বলেন, ‘আমরা এমন একটি প্রস্তাব দিয়েছি যাতে অতিরিক্ত মজুরির জন্যে কেউ চাকরি না হারায়। অটোমেশন হওয়ার ফলে অনেক শ্রমিক চাকরি হারাচ্ছে। এটা উপরের লেভেলের চেয়ে নিচের লেভেলে বেশি হচ্ছে। আবার সব ফ্যাক্টরির সক্ষমতাও কিন্তু এক রকম নয়। সবকিছু বিবেচনা করে শ্রমিক ও মালিক উভয় পক্ষ যাতে বেঁচে থাকতে পারে এমন প্রস্তাব দেয়া হয়েছে।’

শ্রমিক সংগঠনের পক্ষ থেকে মজুরি বোর্ডে ন্যূনতম বেতন ১২ হাজার টাকা নির্ধারণের দাবি করা হলেও বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠন নানা কর্মসূচিতে ১৬ থেকে ১৮ হাজার টাকা নির্ধারণের দাবি জানাচ্ছে।

‘বিজিএমইএর প্রস্তাব অমানবিক’

বিজিএমইএ বেতন বৃদ্ধির যে প্রস্তাব দিয়েছে, তাকে অমানবিক বলেছেন গবেষণা প্রতিষ্ঠান বিআইডিএস এর সিনিয়র রিসার্স ফেলো নাজনীন আহমেদ। তিনি বলেন, পাঁচ হাজার ৩০০ টাকা থেকে বেতন বাড়িয়ে ছয় হাজার ৩৬০ টাকা বেতন নির্ধারণ হলে এটাকে বেতন বাড়নো বলা যাবে না।

‘কারণ সেসময় ৫ হাজার ৩০০ টাকায় যে পণ্য পাওয়া যেত সে পন্য এখন কিনতে গেলে ৬ হাজার ৭০০ টাকা লাগে। তাই বেতন বাড়াতে হলে এর চেয়ে বেশি বাড়াতে হবে।’
নাজনীন মনে করেন পোশাক শ্রমিকদের নূন্যতম বেতন ৯ হাজার হওয়া উচিত। 

বোর্ডের বৈঠকের বাইরে শ্রমিকদের কর্মসূচি

নিন্মতম মজুরি বোর্ডের বৈঠক কার্যালয়ে নিচে সভা-সমাবেশ করেছে দুটি শ্রমিক সংগঠন। 

গার্মেন্টস শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র নূন্যতম বেতন ১৬ হাজার টাকা ও গার্মেন্টস শ্রমিক কর্মচারী ঐক্য পরিষদ নামের অপর একটি সংগঠন নূন্যতম বেতন ১৮ হাজার টাকা করার দাবি জানান।

(ঢাকাটাইমস/১৬জুলাই/জেআর/ডব্লিউবি)