অপরাধ কমিয়েছে বিশ্বকাপ!

প্রকাশ | ১৭ জুলাই ২০১৮, ০৮:২২ | আপডেট: ১৭ জুলাই ২০১৮, ১০:০৯

ঢাকাটাইমস ডেস্ক
ফাইল ছবি

ফুটবল বিশ্বকাপ চলাকালে কিছু দুঃখজনক ঘটনা বাদ দিলে বাংলাদেশে অপরাধ প্রবণতা কম ছিল৷ বিশ্লেষকরা বলেছেন, এতে প্রমাণ হয়, তরুণদের খেলার মতো নির্মল বিনোদনের সুযোগ দেয়া গেলে তাদের মাঝে বিপথগামী হওয়ার প্রবণতাও কমবে৷ খবর ডয়েচে ভেলের।

গত ১৪ জুলাই অর্থাৎ বিশ্বকাপ ফুটবলের ফাইনালের একদিন আগে বাংলাদেশে এক মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে যায়৷কক্সবাজারের চকোরিয়ায় ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার সমর্থকদের একটি প্রীতি ম্যাচের পর পাঁচজন কিশোর নদীতে সাঁতার কাটতে গিয়ে ডুবে মারা যায়৷

শনিবার বিকালে চকোরিয়া গ্রামার বিদ্যালয়ের ২২ জন শিক্ষার্থী একটি প্রীতি ফুটবলের আয়োজন করে৷ খেলার উদ্দেশ্যে তারা নিজেদের বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় দুটি দল ব্রাজিল এবং আর্জেন্টিনার সমর্থক দলে ভাগ করে নেয়৷ বিকালে খেলা শেষে ৪টার দিকে ছয় কিশোর ব্রাজিল আর আর্জেন্টিনার ঘামে ভেজা জার্সি পরেই মাতামুহুরী নদীতে সাঁতার কাটতে যায়৷ নদীর পানি গভীর হওয়ায় এবং স্রোত প্রবল হওয়ায় তারা সবাই পানিতে ডুবে যায়৷ তাদের মধ্যে পাঁচজনের লাশ উদ্ধার করা হয় রবিবার৷

এর বাইরে বিশ্বকাপ ফুটবল চলাকালে দেশের বিভিন্ন স্থানে ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনার সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে৷ এছাড়া প্রিয় দলের পতাকা টাঙাতে গিয়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে একজন নিহত হয়েছেন৷ ২০১৪ সালের বিশ্বকাপের সময় সংঘর্ষে নিহত হওয়ার ঘটনাও ঘটেছে৷ এবার অবশ্য তেমন কিছু ঘটেনি৷

তবে এমন অপ্রীতিকর কিছু ঘটনা ঘটলেও বাংলাদেশে কিন্তু বিশ্বকাপ চলার সময় অপরাধ প্রবণতা কম ছিল৷ রাশিয়ায় বিশ্বকাপের আসর শুরু হয় ১৫ জুন আর শেষ হয় ১৫ জুলাই৷ বাংলাদেশ পুলিশ সদর মাস ও বছর হিসেবে অপরাধের পরিসংখ্যান রাখে৷ ১৫ জুন থেকে ১৫ জুলাই– এই একমাসের হিসাব আলাদাভাবে না পাওয়া গেলেও  সাধারণ মাসের হিসাব বিবেচনায় নিয়ে অপরাধ কমার বিষয়টি স্পষ্ট হয়৷

পুলিশ সদর দপ্তরের হিসেবে মে মাসে সারাদেশে বিভিন্ন অপরাধে মামলা হয়েছে ২৩ হাজা ৪১৬টি৷ আর জুন মাসে মামলা হয়েছে ১৯ হাজার ৮১৭টি৷ এর মধ্যেই ১৫ জুন থেকে শুরু হয় বিশ্বকাপ৷ মে মাসে হত্যার ঘটনা ঘটেছে ৩৭৯টি৷ জুন মাসে হত্যাকাণ্ড হয়েছে ৩৩৯টি৷ মে মাসে নারী  ও শিশু নির্যাতনের ঘটনায় মামলা হয়েছে ১৩৬৭টি৷ তবে জুন মাসে তা বেড়ে হয়েছে ১৩৯১টি৷  দস্যুতা, অপহরণ ও ছিনতাইয়ের মতো ঘটনা কমেছে৷ জুলাই মাসের অপরাধ পরিসংখ্যান দেয়া গেলে বিষয়টি হয়ত আরও স্পষ্ট হতো৷

পুলিশ সদর দপ্তর জুলাই মাসের অপরাধ পরিসংখ্যান মাস শেষে চূড়ান্ত করবে৷ তবে সূত্র জানায়, এ পর্যন্ত যে তথ্য আছে, তাতে জুলাই মাসেও অপরাধ প্রবণতা কম৷

ঢাকা মেট্রেপলিটন পুলিশের উপ কমিশনার( মিডিয়া) মাসুদুর রহমান বলেন, ‘আমাদের পর্যবেক্ষণ হলো বিশ্বকাপ চলাকালে রাজধানীতে হত্যা, ছিনতাই, দস্যুতা এবং নারী ও শিশু নির্যাতনের মতো অপরাধ কম হয়েছে৷ প্রচলিত অপরাধের সঙ্গে জড়িতদের একটি বড় অংশ হলো তরুণ৷ আর প্রধানত তরুণরাই বিশ্বকাপে মেতে ছিল৷ তাই হয়তো অপরাধও কম হয়েছে৷ তবে ফুটবলের এই মহা আয়োজনে আমাদের দেশে সমর্থকদের মধ্যে  যাতে কোনো উত্তেজনা বা বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি না হয়, যা আইন-শৃঙ্খলার অবনতি ঘটাতে পারে, সেদিকে আমাদের নজর ছিল৷ আমরা এ কারণে টহল বাড়ানোসহ আরও কিছু বাড়তি ব্যবস্থা নিয়েছি।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন ও অপরাধ বিজ্ঞানের অধ্যাপক শেখ হাফিজুর রহমান বলেন, ‘পরিসংখ্যান বলছে, রাশিয়ায়ও বিশ্বকাপ চলাকালে অপরাধ প্রবণতা কমেছে৷ আর বিশেষ করে তরুণরা অপরাধ থেকে দূরে থেকেছে৷ আমাদের দেশেও পরিসংখ্যান তাই বলছে৷ আর এতে প্রমাণিত হয় কিশোর, তরুণদের আমরা যদি খেলাধুলার মতো সুস্থ বিনোদন দিতে পারি, তাহলে তাদের মধ্যে অপরাধপ্রবণতা কমবে৷ বিশেষ করে আমাদের এখানে তরুণদের একাংশের জঙ্গিবাদে জড়ানোর যে প্রবণতা, তা কমবে বলে আমার মনে হয়।’

‘আমাদের খেলার মাঠ নেই, সুস্থ বিনোদনের ব্যবস্থা নেই৷ কিশোর, তরুণরা অনলাইন গেমসহ নানা বিষয় থেকে বিনোদন নেয়ার চেষ্টা করে৷ ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বা অনলাইননির্ভর হয়ে পড়ছে তারা৷ কিন্তু  মানসিক এবং শারীরীক সুস্থতার জন্য তাদের প্রয়োজন খেলাধুলার মতো বিনোদন৷’

আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘বিশ্বকাপ চলাকালে সমর্থকদের মধ্যে বিশ্বকাপকেন্দ্রিক কিছু দুঃখজনক ঘটনা ঘটেছে৷ এটা সব দেশেই ঘটে৷ ফুটবল নিয়ে দাঙ্গাও হয়েছে অতীতে৷ কিন্তু এগুলোও এড়াতে হবে৷এড়ানোর উপায় হলো খেলাকে পুরোপুরি খেলা হিসেবে দেখা৷ খেলাকে পুরোপুরি বিনোদন হিসেবে দেখা৷’

(ঢাকাটাইমস/১৭জুলাই/জেবি)