কোটা ও খালেদাকে নিয়ে রাজনীতি করছি না: ফখরুল

প্রকাশ | ১৮ জুলাই ২০১৮, ১৩:৪৫

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলন এবং দলীয় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য নিয়ে বিএনপি কোনো রাজনীতি করছে না বলে জানিয়েছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সরকারি দল আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বারবার উত্থাপিত অভিযোগের জবাব দিয়ে ফখরুল বলেন, ‘পরিষ্কার করে বলতে চাই, কোটা এবং বেগম খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য নিয়ে কোনো রাজনীতি করছি না। যেটা সত্য আমরা সেটা জনগণের কাছে বড় রাজনৈতিক দল হিসেবে তুলে ধরছি।’

বুধবার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এক মানববন্ধনে ফখরুল এসব কথা বলেন। বেগম খালেদা জিয়ার সুচিকিৎসা ও নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদ এই মানববন্ধনের আয়োজন করে। এতে সভাপতিত্ব করেন দৈনিক আমার দেশের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমান।

কোটা সংস্কার আন্দোলন নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ইউটার্ন করেছেন বলে মনে করেন ফখরুল। তিনি বলেন, ‘বেকার যুবকদের ন্যায়সঙ্গত কোটা সংস্কারের আন্দোলন।  কিন্তু রেগেমেগে সংসদে প্রধানমন্ত্রী বললেন, কোনো কোটাই থাকবে না। এখন আপনি বলছেন, হাইকোর্টের রায়ের বাইরে যাওয়া যাবে না। আদালত কী বলেছে? যা বলেছে কোটা নিয়ে সেটা রায় নয়, পর্যবেক্ষণ। এই কথাটা আমরা অনেকেই বলছি না।’

‘আপনি পর্যবেক্ষণকে অ্যাভোয়েট করলেন ত্রয়োদশ সংশোধনী যেটা পঞ্চদশ সংশোধনীতে বাতিল হলো সেখান থেকে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের কথা আপনি রাখলেন। যেটা আপনার সুবিধা যেটাতে আদালতকে ব্যবহার করছেন, আর যেটায় অসুবিধা সেখানে আদালতকে মানছেন না।’

বেগম খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য নিয়ে বিএনপি নোংরা রাজনীতি করছে- ওবায়দুল কাদেরের এমন বক্তব্যের সমালোচনা করে ফখরুল বলেন, ‘এই ধরনের কথা বলে তিনি জনগণকে বিভ্রান্ত করছেন। বেগম খালেদা জিয়াকে সম্পূর্ণ মিথ্যা ও রাজনৈতিক মামলায় রাজনীতি থেকে দূরে সরিয়ে রাখার জন্য, আসন্ন নির্বাচন থেকে সরিয়ে রাখার জন্য তাকে কারারুদ্ধ করা হয়েছে। তাকে তার ন্যূনতম আইনি সুযোগ থেকেও বঞ্চিত করা হচ্চে। মূল মামলায় জামিন পেলেও এখন একটার পর একটা মিথ্যা মামলা সামনে এনে তারা মুক্তিকে বিলম্বিত করা হচ্ছে। তারা তাকে ততদিন পর্যন্ত কারাগারে রাখতে চায় যতক্ষণ তাদের অভিষ্ঠ লক্ষ্য পূরণ না হয়।’

ফখরুল বলেন, ‘সরকারের অভিষ্ঠ লক্ষ্য হলো আবারেও ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির মতো একটি একরতফা নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় ফেরা। এর মাধ্যমে তারা আবারও একদলীয় শাসন পাকাপোক্ত করতে চায় ভিন্ন মোড়কে।’

সরকারের সমালোচনা করে ফখরুল বলেন, ‘তাদের দাম্ভিকতা কোন পর্যায়ে গেছে যে বাংলাদেশের সব থেকে জনপ্রিয় নেত্রী, যিনি কোনোদিন কোনো নির্বাচনে পরাজিত হননি তাকে নির্জন কারাগারে রেখেছে। তাকে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে না। তার চিকিৎসক এবং পরিবারের লোকজনের সঙ্গে দেখা করতে দেয়া হচ্ছে না। আর আমরা চিকিৎসার কথা বললেই তারা বলে সব ঠিক আছে। আবার বলে কারাবিধিতে নেই। সম্পূর্ণ মিথ্যা কথা।’

আওয়ামী লীগ নেতাদের উদ্দেশে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘শেখ হাসিনা যখন কারাগারে ছিলেন তখন কানের চিকিৎসার জন্য তিনি স্কয়ার হাসপাতালে যাননি? আপনাদের দলের নেতারা যারা কারাগারে ছিলেন তারা অন্যান্য হাসপাতালে চিকিৎসা নেননি। আমরা দাবি করছি অবিলম্বে বেগম খালেদা জিয়াকে তার পছন্দের হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়ার ব্যবস্থা করা হোক।’

সরকারের চরিত্র, লক্ষ্য সবার কাছে পরিষ্কার এমন দাবি করে ফখরুল বলেন, ‘দুর্নীতি কোন পর্যায়ে পৌঁছে গেছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের ভোল্টে সোনা রাখার পর সেটা বদলে ধাতু জাতীয় জিনিস রাখা হয়েছে। অলঙ্কারগুলো বদলে সেখানে নকল জিনিস রাখা হয়েছে। এর আগে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে হ্যাকিং করে টাকা লুট করা হলো। যার প্রতিবেদন এখনও প্রকাশ করতে পারেনি। অর্থমন্ত্রী বলছেন, যারা এর সঙ্গে জড়িত তাদের হাত অনেক লম্বা। এই লম্বা হাত হয় তাহলে তাদের হাতে রেখে আপনি চলে যান না কেন? আপনি বারবার এই ধরনের লোকদের প্রশ্রয় দিচ্ছেন, আশ্রয় দিচ্ছেন এবং সরকারের ইচ্ছা পূরণ করছেন। আর বাংলাদেশকে অর্থনৈতিক দিক থেকে সম্পূর্ণ ফোকলা করে দিচ্ছেন।’

রাজশাহীতে বিএনপির মেয়র প্রার্থীর  নির্বাচনী প্রচারে ককটেল বিস্ফোরণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘বুলবুলের প্রচার মিটিংয়ের মধ্যে বোমা মারলো, হামলার পরপরই সংবাদ সম্মেলন করে তারা বললো, এই এখন বিএনপি বলবে আমরা বোমা মেরেছি, কিন্তু আসলে আমরা মারিনি। এটা প্রমাণ করে আপনারাই এটা মেরেছেন, আপনারাই নির্বাচনকে বিতর্কিত করছেন। ঠাকুরঘরে কে রে, আমি কলা খাই না’র মতো অবস্থা হয়েছে।’

নির্বাচনের নামে খেলাখেলা, তামাশা চলছে বলেও দাবি করেন বিএনপি মহাসচিব।

তিনি আয়োজকদের ধন্যবাদ জানিয়ে অবিলম্বে বেগম খালেদা জিয়ার সুচিকিৎসা ও মুক্তির দাবি জানান।

(ঢাকাটাইমস/১৮জুলাই/বিইউ/জেবি)