‘দুরভিসন্ধির’ ইভিএম মানে না ভোটাররা: রিজভী

প্রকাশ | ১৯ জুলাই ২০১৮, ১৪:১২ | আপডেট: ১৯ জুলাই ২০১৮, ২১:০০

নিজস্ব প্রতিবেদক,ঢাকাটাইমস

স্থানীয় নির্বাচনে পরীক্ষামূলক ব্যবহারের পর জাতীয় নির্বাচনেও ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন বা ইভিএম ব্যবহারে নির্বাচন কমিশনের পরিকল্পনাকে দুরভিসন্ধি বলেছেন রুহুল কবির রিজভী। তার দাবি, ভোটাররা এই যন্ত্র মানতে রাজি নয়।

বৃহস্পতিবার নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ে নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির সিনিয়র যুগ্মমহাসচিব এও দাবি করেন, ইভিএম দিয়ে কারচুপি করা সম্ভব। আর ব্যালটেই সুষ্ঠু ভোট করা যায়।

রিজভী বলেন, ‘ইভিএম সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিপন্থী। বাংলাদেশের ভোটাররা ইভিএম মানতে নারাজ। ভোটাধিকার হরণে এই পদ্ধতির ব্যবহার চুপিসারে ডিজিটাল অন্তর্ঘাত।’

ভোটে ইভিএম ব্যবহার নিয়ে বিএনপির আপত্তি পুরনো। উন্নত বিশ্বে ভোট গ্রহণে যন্ত্রটির ব্যবহার থাকলেও বাংলাদেশে ২০১০ সালে সেটির পরীক্ষামূলক ব্যবহার শুরু হয়। তখন থেকেই বিএনপি আপত্তি জানিয়ে আসছে এ নিয়ে।

সে সময় কাজী রকিবউদ্দিন কমিশন যেসব যন্ত্র ব্যবহার করেছিল, পরীক্ষামূলক ব্যবহারে সেগুলোতে ত্রুটি পাওয়ার পর তা আর ব্যবহার হয়নি। তবে বর্তমান নির্বাচন কমিশন যে যন্ত্রগুলো ব্যবহার করছে, সেগুলো এখন পর্যন্ত নির্ভুল কাজ করছে।

গত ডিসেম্বরে রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ভোটে একটি কেন্দ্র, ১৫ মে খুলনায় দুটি কেন্দ্রে, ২৬ জুলাই গাজীপুরে ছয়টি কেন্দ্র ইভিএম ব্যবহার করা হয়েছে। প্রতিটি কেন্দ্রেই ভোটারই উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন, বলেছেন, এখানে ভোট প্রদান অনেক সহজ। আর স্মার্ট কার্ড ও আঙ্গুলের ছাপি দিয়ে ভোটারের পরিচয় নিশ্চিত করতে হয় বলে একজনের ভোট অন্যজনের বা একজনের একাধিক ভোট দেয়া সম্ভব নয়।

আগামী ৩০ জুলাই তিন সিটি নির্বাচনের মধ্যে রাজশাহী ও সিলেটে দুটি করে এবং বরিশালে ১০টি কেন্দ্রে ইভিএম ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। এর মধ্যে কমিশন সচিব হেলালুদ্দীন আহমেদ বলেছেন, আগামী জাতীয় নির্বাচনেও কিছু কেন্দ্রে ইভিএম ব্যবহারের চিন্তাভাবনা আছেতাদের।

তবে রিজভী বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের আপত্তির কথা তুলে ধরে ইভিএম কেনা ও আমদানি করাকে দুরভিসন্ধি বলছেন। তার দাবি, ‘সরকারের নির্দেশে’ নির্বাচন কমিশন ইভিএম চালুর মাধ্যমে আরেকটি বড় ধরনের ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিং এর পথে এগুচ্ছে।

বিএনপি নেতার দাবি এসব মেশিন বিতর্কিত। তিনি বলেন, ‘এই মেশিন নিয়ে কমিশনের কেন এতো তোড়জোড় সেজন্য জনমনে গভীর সংশয় দানা বেঁধেছে।’

‘আমরা এর আগেও ইভিএম ব্যবহারের ত্রুটি নিয়ে দেশ-বিদেশের নানা দৃষ্টান্ত তুলে ধরেছিলাম, কিন্ত কমিশন সেটিকে পাত্তা না দিয়ে ক্ষমতাসীনদের প্রদর্শিত পথেই এগিয়ে যাচ্ছে।’

‘জনসমর্থনহীন বর্তমান অবৈধ সরকার ডিজিটাল জালিয়াতির জন্যই ইভিএম পদ্ধতি প্রচলন করতে নির্বাচন কমিশনকে দিয়ে এতো মরিয়া হয়ে উঠেছে।’

রিজভীর দাবি, ‘যদি অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন হয়, তাহলে ব্যালট পেপারে ভোট গণনা সময় সাপেক্ষ বিষয় হলেও এর ওপর মানুষের পরিপূর্ণ আস্থা আছে।’

‘নির্বাচনের কমিশনের সাথে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও নাগরিক সমাজের সংলাপ চলাকালে ও পরবর্তীতে গণমাধ্যমের সামনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার একাধিকবার বলেছিলেন-জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার হবে না। কিন্তু হঠাৎ করে সেই পুরনো ভুত আবারও জেগে ওঠলো কেন?’

‘আসলে এই ইভিএম ব্যবহারে নির্বাচন কমিশনের মহা আয়োজনের কলকাঠিটি নাড়ছে বর্তমান অবৈধ সরকার। সুতরাং আজ্ঞাবাহী নির্বাচন কমিশন সরকারের নির্দেশের বাইরে এক ধাপ ফেলার ক্ষমতা নেই।’

‘হঠাৎ করে নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের প্রস্তুতিতে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে ভোটারদের আশার মুকুল এখন আস্তে আস্তে ঝরে যেতে বসেছে।’

দুর্নীতির মামলায় সাজাপ্রাপ্ত বেগম খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি এং নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনই জনগণের একমাত্র দাবি বলেও উল্লেখ করেন রিজভী। বলেন, ‘এই দাবি এগিয়ে নিতেই বিএনপি অঙ্গীকারাবদ্ধ। ইভিএম ইস্যু তুলে জনদৃষ্টিকে বিভ্রান্ত করা যাবে না।’

(ঢাকাটাইমস/১৯জুলাই/বিইউ/ডিএম)