প্রশ্নফাঁস উন্নত বিশ্বেও আছে: প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশ | ১৯ জুলাই ২০১৮, ১৪:৩২ | আপডেট: ১৯ জুলাই ২০১৮, ১৯:১৮

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

পাবলিক পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস সমস্যাটিকে ডিজিটাল প্রযুক্তির কুফল হিসেবে দেখেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বলেছেন, এই সমস্যা উন্নত বিশ্বেও আছে।

বৃহস্পতিবার গণভবনে চলতি বছর এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফলাফল গ্রহণ করে দেয়া ভাষণে এই কথা বলেন শেখ হাসিনা।

সকালে শুরুতে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ এবং পরে ১০টি শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যানকে সরকার প্রধানের হাতে পরীক্ষার ফলের অনুলিপি তুলে দেন।

চলতি বছর আগের বছরের তুলনায় খারাপ করেছে পরীক্ষার্থীরা। পাসের হার যেমন কমেছে, তেমনি কমেছে সর্বোচ্চ জিপিএ ফাইভ পাওয়ার সংখ্যাও।

গত কয়েক বছর ধরেই বিভিন্ন পাবলিক পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস নিয়ে তুমুল আলোচনা চলছে। তবে এবার এইচএসসি পরীক্ষায় এর একটি সমাধান বের করেছে সরকার। আর সেটি কার্যকর প্রমাণও হয়েছে।

এবার পরীক্ষার্থীদেরকে পরীক্ষা শুরুর ৩০ মিনিট আগে কেন্দ্রে প্রবেশ, কেন্দ্রে বিভিন্ন সেটের প্রশ্ন পাঠিয়ে ২৫ মিনিট আগে কোনে সেটে পরীক্ষা হবে, সেটি জানানোর পর আর কোনো প্রশ্ন আগেভাগে সামাজিক মাধ্যমে আসার খবর মেলেনি।

 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘প্রশ্নপত্র ফাঁস কেবল আমাদের দেশে না, বিভিন্ন উন্নত দেশেও এই সমস্যাটা দেখা যাচ্ছে।’

‘ডিজিটাল হওয়াতে… ডিজিটালের যেমন সুফলও আছে, সেই সাথে সাথে কিছু কুফলও আছে। খুব তাড়াতাড়ি তা প্রচার হয়ে যায়।’

প্রশ্ন ফাঁস ঠেকাতে এবারের কৌশলকে চমৎকার বলেও উল্লেখ করেন শেখ হাসিনা। বলেন, ‘আধা ঘণ্টা আগে শিক্ষার্থীরা ঢুকে যায় পরীক্ষার হলে, ২৫ মিনিট আগে জানানো হবে প্রশ্নপত্র তাকে, কোন সেটটা নেয়া হবে। তার ফলে নকল বন্ধ হয়েছে।’

‘নকল করবে কেন? আমাদের ছেলে মেয়েরা পড়াশোনা করলেই তো ভালো রেজাল্ট করতে পারে। পড়াশোনায় মনযোগী হতে হবে।’

যারা পাস করেছে, তাদেরকে অভিনন্দন জানিয়ে, যারা ফেল করেছে তাদেরকে নতুন উদ্যমে পড়াশোনা করে আবার পরীক্ষা দেয়ার পরামর্শ দেন প্রধানমন্ত্রী।

ক্লাসেই পড়াশোনা চান প্রধানমন্ত্রীর

স্কুল কলেজে ব্যাপকভাবে কোচিং আর প্রাইভেট পড়ানোর চলের মধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চাইছেন, পড়াশোনা হবে ক্লাসে। সেই সঙ্গে দীর্ঘ সময় ধরে পরীক্ষা নেয়ার বদলে কম সময়েই পরীক্ষা নেয়ার তাগিদ দিয়েছেন তিনি।

শিক্ষকদের উদ্দেশ্য শেখ হাসিনা বলেন, ‘ক্লাসগুলোতে পড়াশোনা যেন ভালোভাবে হয়, সে দিকে বিশেষভাবে মনযোগ দিতে হবে।’

সরকার শিক্ষাকে আমরা সব থেকে বেশি গুরুত্ব দেয় জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা একটা শিক্ষিত জাতি গড়ে তুলতে চাই যেন আগামী দিনে আমাদের জাতির অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকে।’

‘আমাদের নতুন প্রজন্ম সোনার মানুষ হিসেবে গড়ে উঠবে, সেভাবেই আমরা তাদেরকে গড়ে তুলতে চাই।’

‘আমাদের ছেলে মেয়েরা অনেক মেধাবী। সেই মেধাকে কাজে লাগাতে হবে আমাদের দেশ গড়ায়।’

ভালোভাবে পড়াশোনা করার পরামর্শ দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি একটাই কথা বলব আমাদের ছেলেমেয়েদের উদ্দেশ্যে। সম্পদ হচ্ছে শিক্ষা, এই সম্পদকে কেউ কেড়ে নিতে পারবে না। ছিনতাইকারিও নিতে পারবে না, চুরি ডাকাতি করেও নিতে পারবে না। এটা হচ্ছে সব থেকে বড় সম্পদ। কাজেই শিক্ষা গ্রহণ করতে পারলে নিজের জীবনকে সুন্দরভাবে গড়ে তুলতে পারবে।’

‘যারা পরীক্ষায় কৃতকার্য হয়েছে তাদেরকে অভিনন্দন জানাচ্ছি, আর যারা হতে পারেনি, তাদের আবার পরীক্ষা দেয়ার ‍সুযোগ আছে। এখন থেকেই যদি মনযোগ দিয়ে পড়াশোনা করে, নিশ্চয় তারা কৃতকার্য হতে পারবে বলে আমি বিশ্বাস করি। কিন্তু পড়তে হবে, সময় দিতে হবে। নিজের ইচ্ছায় পড়তে হবে।’

অকৃতকার্যদেরকে বকাঝকা না করতে অভিভাবকদেরকে পরামর্শ দেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, ‘পরীক্ষায় হয়ত বিভিন্ন কারণে কেউ ফেল করে। কিন্তু বকাঝকা করলে সেটা কোনো সমাধান না। বরং কেন যে পাস করতে পারল না, সেই বিষয়টা খুঁজে দেখেন, সেই বিষয়টা দূর করে দেন। পড়ায় যেন সে মনযোগী হয়, সে দিকে দৃষ্টি দেন।’

ছেলেমেয়েদেরকে মাদক, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, এ থেকে দূরে থাকতে রাখতে হবে উল্লেখ করে এ বিষয়ে শিক্ষক, অভিভাবক, ধর্মীয় নেতাদের নজরদারিরও আহ্বান জানান শেখ হাসিনা।

‘আমাদের অনেক জনবল লাগবে’

প্রধানমন্ত্রী বিশেষ করে বিজ্ঞান শিক্ষায় গুরুত্ব দিচ্ছেন। ডিজিটাল বাংলাদেশে বিভিন্ন প্রকল্পে যে বিপুল সংখ্যক জনবল দরকার, সেই বিষয়টিও স্মরণ করিয়ে দেন তিনি।

‘আমরা বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করেছি, সেখানে অনেক জনবল দরকার, নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্ল্যান্টের জন্যও জনবল দরকার, সমুদ্র গবেষণার জন্য দরকার।’

‘বিভিন্ন যে কাজগুলো আমরা করে যাচ্ছি। আজকে ডিজিটাল বাংলাদেশ, সেখানেও দক্ষ জনশক্তি দরকার।’

‘আমরা বিশাল সমুদ্র সীমা অর্জন করেছি। আমাদের সমুদ্র সম্পদ আমাদের অর্থনৈতিক উন্নয়নে কাজে লাগাতে হবে।’ 

‘কাজেই বিজ্ঞান গবেষণা, সেই সাথে সাথে কারিগরি শিক্ষা, শিল্প সাহিত্য, সংস্কৃতির উন্নতি, সার্বিকভাবে শিক্ষাকে সর্বদিক থেকে উন্নত করা আমাদের লক্ষ্য।’

পড়াশোনা করলে বিদেশেও চাকরির সুযোগ আছে, সেটি স্মরণ করিয়ে দেন শেখ হাসিনা। বলেন, ‘কেবল আমাদের দেশে না, বিদেশেও জনশক্তির চাহিদা আছে। আমাদের তো জনবল আছে। জনগণই আমাদের সম্পদ। সেই সম্পদকেই আমরা কাজে লাগাতে চাই।’

শিক্ষার্থীদের আত্মবিশ্বাসী ও দেশপ্রেমিক হওয়ারও তাগিদ দেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, 

‘আত্মবিশ্বাসটা থাকতে হবে, নিজের পায়ে দাঁড়াব, সেই চিন্তা করতে হবে এবং নিজেকে গড়ে তুলবে, দেশকে গড়ে তুলবে।’

‘দেশপ্রেম থাকতে হবে, দেশপ্রেম থাকলে অবশ্যই আত্মবিশ্বাস থাকবে। বাবা-মা, গুরুজন, শিক্ষক, অভিভাবক, প্রত্যেকের প্রতি সম্মান নিয়ে চলতে হবে।’

পরীক্ষার সময় কমিয়ে আনার তাগিদ

এবার পরীক্ষার ফল দেয়া হয়েছে ৫৫ দিনে। এর চেয়ে কম সময়ে কখনও ফল প্রকাশ হয়নি। এই বিষয়টির উল্লেখ করে শিক্ষক এবং শিক্ষাবোর্ড প্রধানদেরকে ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী।

সেই সঙ্গে পরীক্ষার সময়কাল কমিয়ে আনার তাগিদও আসে সরকার প্রধানের পক্ষ থেকে।

‘২ এপ্রিল থেকে পরীক্ষা শুরু আর ২৪ মে পর্যন্ত পরীক্ষা চলেছে। এটা দীর্ঘ সময়। রেজাল্ট দিতেও আপনারা এত সময় নিলেন না, পরীক্ষা নিতে যত সময় নিয়েছেন।’  

‘কীভাবে পরীক্ষার সময়টা কমিয়ে আনা যায়। যদি কমিয়ে আনা যায় তাহলে দেখবেন বিভিন্ন কথাবার্তা, রিউমার (গুজব) ছড়ানো, নানা ধরনের কথা প্রচার করা, এগুলো কিন্তু কমে আসবে।’

নিজের ছাত্র জীবনের কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা যখন পরীক্ষা দিয়েছি তখন তো দুই বেলা করে পরীক্ষা দিতে হতো। সকালে এক পত্র, বিকালে এক পত্র। আমাদের তো দম ফেলার সময় থাকত না। সাত দিনে পরীক্ষা শেষ।’

‘এত লম্বা সময় কমিয়ে নিয়ে আসার যদি ব্যবস্থা করতে পারেন, তাহলে ছেলে মেয়েরাও পড়াশোনা করবে, পরীক্ষাটাও দ্রুত হবে আর নানা ধরনের কথা প্রচার, অপপ্রচার, তার হাত থেকেও মুক্ত হওয়া যাবে বলে আমি বিশ্বাস করি।’

ঢাকাটাইমস/১৯জুলাই/ডব্লিউবি