শিশু পরিবারের মেয়েকে বিয়ে দিলেন গাইবান্ধা ডিসি

প্রকাশ | ২০ জুলাই ২০১৮, ২০:৫৯

নিজস্ব প্রতিবেদক, গাইবান্ধা

শিশু পরিবারে বেড়ে ওঠা পিতৃ-মাতৃহীন সুমি আকতার নামে মেয়েটি যার আপন বলতেও কেউ নেই। এমন একটি মেয়েকে চাকরির সংস্থান করে দিয়ে এবং মহাধুমধামে বিয়ে দিয়ে সামাজিক দায়িত্ববোধের এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন গাইবান্ধার জেলা প্রশাসক গৌতম চন্দ্র পাল। তিনি এবং তার পত্মী মুক্তি বসাক অভিভাবক হিসেবে দায়িত্ব নিয়ে সার্বিকভাবেই বিয়ে সম্পন্ন করেন।

ব্যতিক্রমধর্মী এই বিয়েতে উৎসাহ উদ্দীপনা যুগিয়ে এবং বিয়েতে সার্বক্ষণিক উপস্থিত থেকে জাতীয় সংসদের হুইপ মাহাবুব আরা বেগম গিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন এবং মমত্ববোধের এক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন।

শুক্রবার সার্কিট হাউজ মিলনায়তনে জেলা পর্যায়ের সকল বিভাগীয় কর্মকর্তা, ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন শ্রেণির মানুষ এবং সর্বস্তরের গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গের উপস্থিতিতে এই বিয়ে হয়।

এই বিয়ের অনুষ্ঠান ও প্রীতিভোজে অংশ গ্রহণের জন্য যথারীতি জেলা প্রশাসক গৌতম চন্দ্র পাল তার নামে সুদৃশ্য বিয়ের কার্ড ছাপিয়ে অতিথিদের আমন্ত্রণ করেন। এমনকি গাইবান্ধার শিশু পরিবার বালিকা প্রতিটি সদস্য ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদেরও এই বিয়ের অনুষ্ঠানের দাওয়াত দেয়া হয়।

বিয়েটি সম্পন্ন হয় ৩ লাখ ১ হাজার ১০১ টাকা দেন মোহরানা নির্ধারণ করে।

এর আগে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় শিশু পরিবারে সার্কিট হাউজ মিলনায়তনে জেলা প্রশাসক পত্মী মুক্তি বসাকের নেতৃত্বে লেডিস ক্লাব, মহিলা ক্রীড়া সংস্থাসহ বিভিন্ন নারী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ বর্ণাঢ্য সাজে সজ্জিত হয়ে এবং আনুষ্ঠানিকতার মধ্যদিয়ে যথারীতি বিয়ের হলুদ অনুষ্ঠানটিও সম্পন্ন করেন।

সাত বছর বয়স পর্যন্ত রাজশাহীর বেবী হোমে লালিত পালিত হওয়ার পর ২০০৭ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর থেকে পিতৃ-মাতৃহীন শিশু সুমি আকতারকে লালন পালনের জন্য গাইবান্ধা সরকারি শিশু পরিবারে (বালিকা) নিয়ে আসা হয়। শিশু পরিবারে ধীরে ধীরে বেড়ে উঠতে থাকে সুমি। আবু হোসেন সরকার মহিলা কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী।

প্রসঙ্গত, সম্প্রতি শিশু পরিবার (বালিকা) ঘুরতে এসে জেলা প্রশাসক জানান, যোগ্য কোন প্রার্থী থাকলে তিনি জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে একজনকে অফিস সহায়ক পদে নিয়োগ দিতে চান। সেখানেই তিনি কর্তৃপক্ষের কাছে জানতে পারেন শিশু পরিবারে লালিত পালিত কৃতি ছাত্রী ওই সুমি আকতারের কথা। তার কথায় গাইবান্ধা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে কর্মচারী নিয়োগ পরীক্ষায় সুমি আকতার অংশগ্রহণ করেন এবং পরীক্ষায় কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখেন। ১১ মার্চ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে অফিস সহকারী হিসেবে যোগদান করেন সুমি।

সুমির আচার-ব্যবহার সকলের দৃষ্টি কাড়ে। জন্মের পর থেকে বাবা-মায়ের আদর পায়নি মেয়েটি। স্নেহপ্রবণ গৌতম চন্দ্র পাল ও সহধর্মিনী মুক্তি বসাক সুমিকে নিজেদের মেয়ে করে নিয়েছেন। আর সেজন্যই মেয়ের ভবিষ্যতের ভাবনাও তাদের। কষ্ট করে বেড়ে ওঠা মেয়েটা যেন সুখে থাকে শান্তিতে থাকে তা নিয়েই ভাবছিলেন তারা। অফিসে সহকর্মীদের সাথে আলোচনায় উঠে আসে বিয়ের প্রসঙ্গ। ভেতরে ভেতরে খোঁজ চলতে থাকে একজন যোগ্য পাত্রের। অতঃপর জেলা প্রশাসক খুঁজে পান তার কার্যালয়ের আরেক অফিস সহায়ক সদর উপজেলার কুপতলা ইউনিয়নের পশ্চিম দুর্গাপুর উত্তরপাড়ার মঞ্জুরুল ইসলাম রিজুকে। জেলা প্রশাসক গৌতম চন্দ্র পালের আন্তরিক প্রচেষ্টায় মঞ্জুরুল ইসলাম রিজুর বাবা ফায়ার বিগ্রেডে কর্মরত শামছুল হক ও তার পরিবার পরিজন সব শুনে জেনে সুমি আকতারকে তার পুত্রবধূ করে নিতে সম্মত হন।

(ঢাকাটাইমস/২০জুলাই/এলএ)