মান নিশ্চিত হলে ফল আসবেই: কুমিল্লা বোর্ড চেয়ারম্যান

প্রকাশ | ২১ জুলাই ২০১৮, ০৮:২৮

কুমিল্লা প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
এইচএসসি পরীক্ষায় কাঙিক্ষত ফল পেয়ে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের শিক্ষার্থীদের উল্লাস।

কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডের এবারের ফলাফলকে সাফল্য হিসেবে দেখছেন বোর্ড চেয়ারম্যান প্রফেসর মো. রুহুল আমিন ভূঁইয়া। তবে তিনি ফলাফলের চেয়ে শিক্ষার গুণগত মানের দিকটা গুরুত্ব দিচ্ছেন বেশি। তার মতে, শিক্ষার গুণগত মান নিশ্চিত হলে ইতিবাচক ফল আসবেই।

ঢাকাটাইমসের সঙ্গে আলাপে এমনই অবিমত দিলেন কুমিল্লা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান।

গত তিন বছরের তুলনায় এবার এইচএসসি পরীক্ষার পাসের হারে এগিয়েছে কুমিল্লা  শিক্ষা বোর্ড। দেশের আট শিক্ষা বোর্ডের মধ্যে গত বছর পাসের হারে সবার নিচে থাকা কুমিল্লা বোর্ড এবার চতুর্থ অবস্থানে উঠে এসেছে।

এই বোর্ডে এবার পাসের হারের পাশাপাশি বেড়েছে জিপিএ-৫। গত বছর পাসের হার ছিল ৪৯.৫২ শতাংশ, এবার ৬৫.৪২ শতাংশ। জিপিএ-৫ পেয়েছে ৯৪৪ জন পরীক্ষার্থী, যা গতবার ছিল ৬৭৮।

বোর্ড চেয়ারম্যান অধ্যাপক রুহুল আমিন বলেন, ‘বোর্ডের পাসের হার এবং শিক্ষার্থীদের রেজাল্টের সংখ্যার হার নিয়ে আমরা চিন্তা করি না। আমরা চাই ছাত্র-ছাত্রীদের গুণগত মানের শিক্ষা নিশ্চিত করা। শিক্ষার গুণগত মান নিশ্চিত হলে ফলও ভালো হবে। আর এ জন্য শিক্ষার্থীদের আরও ক্লাস ও বইমুখী হতে হবে।’

ভবিষ্যতে কুমিল্লা বোর্ডের আরও ভালো ফলের জন্য শিক্ষক ও অভিভাবকদের সহযোগিতা কামনা করে বোর্ড চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমাদের শিক্ষার্থীরা যাতে ফেল করে মানসিকভাবে আঘাত না পায়, তারা যাতে অন্তত পাস করে। শিক্ষক ও অভিভাবকদের দায়িত্ব শিক্ষার্থীদের ক্লাস ও বইমুখী হতে উৎসাহিত করা। এ ছাড়া বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক, সাহিত্যিক ও খেলাধুলার মাধ্যমে তাদের উজ্জীবিত রাখা।’

তার বোর্ডে বারবার ইংরেজিতে এত ফেল কেন জানতে চাইলে রুহুল আমিন ভূইয়া জানান, গত বছরের চেয়ে এবার ইংরেজিতে ফেলের হার কমেছে। গতবার ৪৮ ভাগ ফেল করেছে ইংরেজিতে, এবার ২৭ শতাংশ। তিনি বলেন, ‘ইংরেজি আমাদের মাতৃভাষা নয়। যে সিলেবাস গত দুই বছর থেকে চলে আসছে, তা এখনো আমাদের শিক্ষার্থীরা আয়ত্ত করতে পারেনি। এ ছাড়া শিক্ষকরা ইংরেজি বিষয় পড়িয়ে শিক্ষার্থীদের মন জয় করতে পারেননি।’

বোর্ড সূত্রে জানা যায়, এ বছর কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডের আওতাধীন কুমিল্লা, চাঁদপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, নোয়াখালী, ফেনী ও লক্ষ্মীপুর জেলার ৩৮১টি কলেজ থেকে ১ লাখ ৩ হাজার ৬৬৬ জন পরীক্ষার্থী অংশ নিয়ে পাস করেছেন ৬৭ হাজার ৮২০ জন। ফেল করেছেন ৩৫ হাজার ৮৪৬ জন পরীক্ষার্থী। এর মধ্যে বিজ্ঞান বিভাগে পাসের হার ৮৩.০৫, মানবিক বিভাগে ৫৬.৬১ ও ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে ৬৫.১৩ শতাংশ।

ছয় জেলার ৩৮১টি কলেজের মধ্যে শতভাগ পাস করেছে ১৪টি কলেজ। দুটি কলেজ থেকে কেউ পাস করেনি- ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার কৃষ্ণনগর আব্দুল জব্বার স্কুল অ্যান্ড কলেজ ও লক্ষ্মীপুর জেলার কমলনগর কলেজ।

এবারের ফলাফলের বিষয়ে জানতে চাইলে কুমিল্লার বিশিষ্ট সাংবাদিক ও অভিভাবক শাহাজাদা এমরান জানান, গত কয়েক বছরের তুলনায় কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডে এ বছর পাসের হার বেড়েছে। তবে শিক্ষার গুণগত মান কতটুকু বেড়েছে, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। এবার কুমিল্লা বোর্ডে ৩৪.৫৮ শতাংশ পরীক্ষার্থী ফেল করেছে। এটা আমরা উন্নয়ন বলব, না অবনতি বলব। ২৭ ভাগ শিক্ষার্থী ইংরেজিতে ফেল করেছে। কী কারণে ফেল করেছে তা তদন্ত করে তুলে আনতে হবে।

ফলাফল বিশ্লেষণে গত চার বছরের মধ্যে এবার পাসের হারের দিক থেকে কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ড ভালো করলেও কুমিল্লার সুশীল সমাজ তাতে সন্তুষ্ট নয়। তাদের বক্তব্য, শতকরা  ৩৪.৫৮ ভাগ পরীক্ষার্থী কীভাবে ফেল করল তা বোর্ডকে খুঁজে বের করতে হবে।

বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ আমীর আলী চৌধুরী বলেন, গত বছর থেকে এবার পাসের হার  বেড়েছে ভালো কথা। কিন্তু দেখতে হবে ৩৪ দশমিক ৫৮ ভাগ পরীক্ষার্থী কেন ফেল করেছে। এত অধিকসংখ্যক পরীক্ষার্থীর ফেল করাটা মোটেও কাম্য হতে পারে না।

কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ড. মো. আসাদুজ্জামান জানান, ইংরেজিতে বেশিসংখ্যক পরীক্ষার্থী ফেল করার বিষয়টি খতিয়ে দেখবে শিক্ষা বোর্ড। তিনি বলেন, ‘ইংরেজি বিদেশি ভাষা হওয়াতে এ বিষয়ে আমাদের শিক্ষার্থীদের মধ্যে একটা ভীতিও কাজ করে। আগামী দিনে যাতে এ বিষয়ে খারাপ না হয় সে বিষয়ে খেয়াল রাখবে বোর্ড।’

(ঢাকাটাইমস/২০জুলাই/মোআ)