হোয়াটস্যাপে ‘ছেলেধরা’ আতঙ্ক

আন্তর্জাতিক ডেস্ক, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ২১ জুলাই ২০১৮, ১০:০৫

ভারতের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম হোয়াটসঅ্যাপে ‘ছেলেধরা’ গুজব ছড়ানোয় এখন পর্যন্ত বেশ কয়েকজন সাধারণ মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় এবং রাজ্য সরকারের সচেতনতামূলক কর্মকাণ্ডের পরও থামছে না গুজবের কারণে হত্যা।

এর প্রতিকার হিসেবে শুক্রবার থেকে ভারতের হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহারকারীদের জন্য নতুন দুটি ফিচার যোগ করেছে হোয়াটসঅ্যাপ কর্তৃপক্ষ। ওই দুটি ফিচারের মাধ্যমে মেসেজ বা ছবি অথবা ভিডিও শেয়ার করা সীমিত করা যাবে।

ভারত সরকার হোয়াটসঅ্যাপকে জানিয়েছিল যে তাদের মেসেজিং সার্ভিস ব্যবহার করে যেভাবে ছেলেধরার গুজব ছড়ানো হচ্ছে, তা রোধ করতে যেন কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হয়।

এরপর হোয়াটসঅ্যাপ জানিয়েছে, কোনও মেসেজ বা ছবি একসঙ্গে পাঁচটির বেশি হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাটে ফরোয়ার্ড করা যাবে না। চটজলদি ফরোয়ার্ড করে দেওয়া সীমিত করতে তারা কুইক ফরোয়ার্ড বাটনটিও সরিয়ে দিচ্ছে।

এর আগে কোন মেসেজটি অন্য কারও কাছ থেকে ফরোয়ার্ড হয়ে এসেছে, সেটা স্পষ্ট করে চিহ্নিত করারও ব্যবস্থা করেছে হোয়াটসঅ্যাপ।

ভারতে হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজিং সার্ভিস ব্যবহার করে যেভাবে ছেলেধরার গুজব ছড়ানো শুরু হবার পর গত দেড় মাসে কুড়ি জনেরও বেশি মানুষকে ছেলেধরা সন্দেহে গণপিটুনি দিয়ে মেরে ফেলা হয়।

একটি ভুয়া ভিডিও ও ছবি ব্যবহার করেই ওই সন্দেহের গুজব ছড়ানো হয়েছিল হোয়াটসঅ্যাপে। ছেলেধরার গুজবের সঙ্গে ব্যবহার করা ভিডিও আর ছবিগুলি যে ভুয়া, তা খুঁজে বের করেছিল ভুয়া খবরের সন্ধানকারী ভারতীয় ওয়েবসাইট 'অল্ট নিউজ'।

তারা জানিয়েছিল পাকিস্তানের এক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ছেলেধরাদের ব্যাপারে সচেতনতা তৈরির উদ্দেশ্যে একটি ভিডিও বানিয়েছিল। সেখান থেকেই একটি অংশ কেটে নিয়ে ভারতে হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে ছড়ানো হচ্ছে।

পরীক্ষামূলকভাবে যে দুটি নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি চালু করেছে হোয়াটসঅ্যাপ, সেগুলি কতটা কার্যকরী হবে ভুয়া খবর বা গুজব ছড়াতে। এ বিষয়ে অল্ট নিউজের প্রতিষ্ঠাতা প্রতীক সিনহা জানান, 'হোয়াটসঅ্যাপ যা জানিয়েছে, তা নিয়ে কয়েকটা প্রশ্ন উঠছেই- প্রথমত মেসেজ বা ছবি ৫জনকে ফরোয়ার্ড করা যাবে না ৫টি চ্যাটে একেকবারে ফরোয়ার্ড করতে পারবেন কেউ। যদি শুধু ৫টি মেসেজ ফরোয়ার্ড করা যায়, তাহলে মেসেজটি ভাইরাল হওয়া আটকানো কঠিন। তবে ৫জনকে একবারে ফরোয়ার্ড করার ব্যবস্থা যদি করে থাকে এরা, তাহলে কিছুটা নিয়ন্ত্রণ তো করাই যাবে বলে মনে হচ্ছে।'

তিনি বলেন, 'ফরোয়ার্ড হয়ে আসা মেসেজটিকে চিহ্নিত করার ব্যবস্থাটা ভাল, কারণ মানুষ বুঝতে পারবেন যে সেটা তার কনট্যাক্ট লিস্টে থাকা কেউ নিজে পাঠায়নি। হয়তো বিশ্বাস করে ফেলার আগে কিছুটা ভাববেন।'

হোয়াটসঅ্যাপ একটা প্রচেষ্টা শুরু করেছে, কিছু অন্তত উদ্যোগ নিয়েছে। এগুলো কতটা কার্যকরী হবে, সেটা বোঝার জন্য সময় লাগবে বলেও জানান প্রতীক সিনহা।

এ বিষয়ে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সাইবার অপরাধ বিষয়ে স্পেশাল পাবলিক প্রসেকিউটর বিভাস চ্যাটার্জী জানান, 'ফরোয়ার্ড করা মেসেজের সঙ্গে অন্য মেসেজ আলাদা করে চিহ্নিত করা গেলে কে ওই ভুয়ো খবর তৈরী করেছে আর কারা সেটা ছড়িয়েছে, এটা বুঝতে পারবে পুলিশ'।

যদিও হোয়াটসঅ্যাপ বলছে যে তারা পরীক্ষামূলক ভাবে এই নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা দুটি চালু করেছে, তবে এখনও সাধারণ হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহারকারীদের কাছে নতুন আপডেট আসে নি।

এছাড়া ভারত সরকার বৃহস্পতিবারই জানিয়েছে হোয়াটসঅ্যাপের চালু করা নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থায় তারা সম্পূর্ণ সন্তুষ্ট নয়।

তবে এ বিষয়ে বিভাস চ্যাটার্জী বলেন, 'হোয়াটসঅ্যাপ নিজে থেকে যা নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা চালু করেছে, তার থেকেও বেশী প্রয়োজন এ জন্য আইন প্রণয়ন।

ঢাকাটাইমস/২১জুলাই/একে/এজেড

সংবাদটি শেয়ার করুন

বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা