জয় দেখছেন ইমরান, করেছেন সরকার গঠনের ছকও!

প্রকাশ | ২১ জুলাই ২০১৮, ১০:২৯

আন্তর্জাতিক ডেস্ক, ঢাকাটাইমস

২৫ জুলাই পাকিস্তানের সাধারণ নির্বাচনে জিতে ক্ষমতায় যাওয়ার গন্ধ পাচ্ছেন দেশটির সাবেক ক্রিকেটার ও তেহরিক-ই-ইনসাফ প্রধান ইমরান খান। এই নির্বাচনে নিজের জয় দেখতে পাচ্ছেন আর অন্যদের পরাজয়ের কারণ হিসেবে তাদের কৃতকর্মকে দায়ী করেছেন ইমরান।

দেশটির প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর শোচনীয় অবস্থার কারণে বর্তমানে প্রধান বিরোধী রাজনৈতিক দলে পরিণত হয়েছে ইমরান খানের তেহরিক-ই-ইনসাফ। নির্বাচনে জিতে সরকার গঠনের অনেকটা পরিকল্পনাও করে রেখেছেন ইমরান। বিবিসির সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে কথা বলেছেন বিভিন্ন বিষয় নিয়ে।

আসন্ন নির্বাচনে ইমরানকে ক্ষমতায় বসাতে পাকিস্তান সেনাবাহিনী ছক এঁকে রেখেছে বলে অভিযোগ করেছে প্রধান রাজনৈতিকদলগুলো। এছাড়া সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়েও আশঙ্কা রয়েছে তাদের।

তবে ইমরান খান সাক্ষাৎকারে ভোট সুষ্ঠু হওয়ার ব্যাপারে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, ‘অন্য দলগুলো বেশ হঠাৎই বলতে শুরু করেছে যে নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হবে না। এর কারণ হলো জনমত জরিপে দেখা যাচ্ছে পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ এগিয়ে রয়েছে। তারা আসলে ইতিমধ্যেই, ভাগ্যের লিখন দেখতে পাচ্ছে।’

গত পাঁচ বছর ধরে ক্ষমতায় থাকা নওয়াজ শরীফের পাকিস্তান মুসলিম লীগ দলটির সমর্থক ও দেশটির মানবাধিকার কর্মীরা অভিযোগ করছেন যে ইমরান খানের দলকে জেতাতে দেশটির সেনাবাহিনী নির্বাচনের ফল ‘সাজাচ্ছে’। পাকিস্তানে এবারের নির্বাচনকে মূলত এই দুটি দলের মধ্যে প্রতিযোগিতা বলে মনে করা হচ্ছে।

ইমরান বলেন, পাকিস্তানের উত্থান মাথায় রেখেই নির্বাচনের প্রচারণা চালিয়েছে তার দল। নির্বাচনী প্রচারে দেশটির দুর্নীতি দমনকে প্রধান নীতি হিসেবে ব্যবহার করছেন বলেও জানান ইমরান।

তার প্রতিদ্বন্দ্বী নওয়াজ শরীফকে এ মাসের শুরুতে দশ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে দেশটির দুর্নীতি দমন আদালত। জুলাইয়ের ১৩ তারিখ যুক্তরাজ্য থেকে দেশে ফিরেই গ্রেপ্তার হন নওয়াজ শরীফ ও তার মেয়ে। ওই দিনই তাদের কারাগারে পাঠানো হয়। গত বছর দুর্নীতির অভিযোগে তিনি ক্ষমতাচ্যুত হন।

ইমরান খান বেশ কিছুদিন ধরে যে অভিযোগে তিনবার প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করা নওয়াজ শরীফের বিরুদ্ধে তদন্ত দাবি করছিলেন, সেই অভিযোগেই তার সাজা হল। ইমরান বলেন, ‘দুর্নীতির কারণে একটি দেশের ব্যয়ভার বহন করার অর্থ থাকে না, মানব উন্নয়নের জন্য অর্থ থাকে না। এ সম্পর্কে এই মামলাটি জনসচেতনতা তৈরি করেছে।’

তবে রাজনীতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, নওয়াজ শরীফের কারাদণ্ডের পেছনের কারণ আসলে তিনি ক্ষমতায় থাকাকালীন পাকিস্তানের পররাষ্ট্রনীতি ও নিরাপত্তা ইস্যুতে সেনাবাহিনীর সাথে বিবাদে জড়িয়েছিলেন। পাকিস্তান রাষ্ট্র জন্মের অর্ধেকটা সময়ই দেশটির সবকিছুর নিয়ন্ত্রক হিসেবে কাজ করেছে সেখানকার সেনাবাহিনী।

নওয়াজ শরীফ দাবি করেছেন, তার দল যাতে জয়ী না হয় তাই দেশটির সেনাবাহিনী ভোটের আগেই ‘ফল কারচুপির’ কার্যকলাপে নেমেছে। তার দলের বেশ কয়েকজন প্রার্থী অভিযোগ তুলেছেন যে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো তাদের দল ত্যাগ করার পরামর্শ দিয়েছে।

সাংবাদিকরা দাবি করেছেন, নওয়াজ শরীফ সম্পর্কে কোন ধরনের সহানুভূতি দেখানো প্রতিবেদন না করতে তাদের প্রতি নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

লাহোরে একটি সমাবেশে ইমরান খানের সমর্থকরা বলেছেন দুর্নীতির দায়ে যে নওয়াজ শরীফের সাজা হয়েছে, সেদিক থেকে জনগণের মনোযোগ সরিয়ে নিতে এসব গল্প ফাঁদছে তার দল।

পাকিস্তানে রাজনীতির একটি সংস্কৃতি হল দলের নেতারা বংশগতভাবে রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। ইমরান খানের সেই ইতিহাস নেই। তার দলের ক্ষমতায় থাকারও কোন অভিজ্ঞতা নেই।

নিয়মিত দল পরিবর্তন করে এমন কিছু ধনী রাজনীতিবিদের সম্প্রতি দলে জায়গা দিয়ে বেশ সমালোচনার শিকার হয়েছেন ইমরান খান। কিন্তু এই নেতাদের একটা বিষয় হল যে দলের হয়েই তারা লড়ুক না কেন তারা বিপুল পরিমাণে ভোটার আকর্ষণ করতে পারেন।

ইমরান খান তার এই সিদ্ধান্তের পক্ষে সাফাই গেয়ে বলেছেন, এরা হলেন এমন নেতা যারা জানে কিভাবে নির্বাচনে প্রতিযোগিতা করতে হয়। তারা দলের মতাদর্শকে কলুষিত করবেন না।

আর নির্বাচনে একক জয় পাওয়ার ব্যাপারে আশঙ্কা রয়েছে ইমরানের। এমনটি হলে জোট সরকারের গঠনের ইঙ্গিত দিয়েছেন এককালে ২২ গজে ঝড় তোলা এ ক্রিকেটার। তবে জোট সরকার গঠন করতে হলেও জারদারি পরিবার পরিচালিত দল পাকিস্তান পিপলস পার্টি অথবা নওয়াজ শরীফের দলের সাথে জোট গঠন করবেন না তিনি।

এর কারণ হিসেবে ইমরান জানান, ‘ তাদের সাথে জোট তৈরি করলে, যে উদ্দেশ্য নিয়ে আপনি ক্ষমতায় যাচ্ছেন তা পরাজিত হবে।’

ঢাকাটাইমস/২১জুলাই/একে