‘কোটা আন্দোলনকারীদের সঙ্গে ক্ষেত্রবিশেষে ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে’

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ২২ জুলাই ২০১৮, ১৪:০৯

সরকারি চাকরিতে বিদ্যমান কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের সঙ্গে ক্ষেত্রবিশেষে ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন তথ্য ও প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী ‍জুনায়েদ আহমেদ পলক।

তিনি বলেছেন, ‘এখানে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আমাদের কিছু মিস ইনফরমেশন বা মিস আন্ডারইস্ট্যান্ডিং ক্ষেত্রবিশেষে হয়েছে। এই ব্যাপারে অস্বীকার করার কিছু নেই। ৫৬ শতাংশ কোটার বিরুদ্ধে যে আন্দোলনটা চলছে, যে দাবিগুলো ছাত্র-ছাত্রীরা করছে, সেখানে কিন্তু তাদের দাবির যৌক্তিকতা এবং সরকারের দিক থেকে দাবি সংস্কারের উদ্যোগ, ইতিমধ্যে কিন্তু সংস্কারগুলো করা হয়েছিল, কিন্তু সেই বিষয়গুলো আন্দোলনকারী ছাত্র-ছাত্রীদের ঠিকভাবে আমরা জানিয়ে দিতে পারিনি।’

প্রতিমন্ত্রীর অভিমত, প্রশাসনিকভাবে আমাদের এখানে ভালো কিছু করার ছিল। যখন কোটা সংস্কার আন্দোলনটা বেগবান হলো, ঠিক তার কয়েক সপ্তাহ আগেই সেখানে কিন্তু কোটা সংস্কার করা হয়েছে।

শনিবার রাতে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল আইয়ের তৃতীয়মাত্রায় তথ্য ও প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী ‍জুনায়েদ আহমেদ পলক এসব কথা বলেন। জিল্লুর রহমানের উপস্থাপনায় আলোচনায় আরও অংশ নেন ২০ দলীয় জোটের শরিক বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান আন্দালিব রহমান পার্থ।

পলক বলেন, ‘তরুণ প্রজন্মকে আমরা অবহেলা করতে পারি না। এছাড়া তাদের যুক্তি দাবিকে কখনোই আমরা অবহেলা করবো না। তবে এখানে একটা বিষয় আছে যে, আসলে যে কোনো দাবিতেই যে কোনো আন্দোলন হতে পারে। তবে আন্দোলনটা হতে হবে শান্তিপূর্ণ। সেই আন্দোলনের মূল যে লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্য সেটা যেন ভুলভাবে অন্য কোনোভাবে কেউ প্রভাবিত করতে না পারে এবং ভুলখাতে প্রবাহিত করতে না পারে সেটা আমাদের লক্ষ্য রাখতে হবে।’

‘২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত মাত্র দুইটা বিসিএস সম্পন্ন হয়েছিল। আমাদের বিগত ৯ বছরে নয়টার বেশি বিসিএস সম্পন্ন হয়েছে। অর্থাৎ প্রতি বছর সাড়ে তিন হাজার ছেলে মেয়ে সরকারি চাকরিতে প্রবেশ করতে পেরেছে। মুক্তিযোদ্ধা কোটা, জেলা কোটা বা নারী কোটা, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী কোটা, ৫৬ শতাংশ কোটা যদি সংরক্ষণ করা হতো তাহলে ৭০ শতাংশ মেধাবীরা কিন্তু চাকরি পেত না।’

আওয়ামী লীগ দেশের সর্ববৃহৎ রাজনৈতিক দল অথচ তারা কোটা আন্দোলনকারীদের সঙ্গে কয়বার কথা বলেছে- এমন প্রশ্ন রেখে আন্দালিব রহমান পার্থ বলেন, ‘এই মন্ত্রী সাহেব (জুনায়েদ আহমেদ পলক) সর্বকনিষ্ঠ মন্ত্রী, উনি ছাত্রদের সঙ্গে কয়বার কথা বলেছের কোটা সম্বন্ধে? আওয়ামী লীগ পলেটিক্যাললি কয়টা টিম বানিয়েছে এই ছাত্রদের সাথে কথা বলার জন্য? কয়বার তাদের বাড়িতে গেছে, কয়বার তাদের ডেকে নিয়েছে? কেন এটা রাজনৈতিকভাবে হ্যান্ডেল করা হল না? অথচ ছাত্রদের হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়েছে, ছাত্রলীগ মিছিলের মধ্যে মারামারি করছে। পুলিশ কেন এদের (আন্দোলনকারী) বাবা-মাকে ধরে নিয়ে গেছে, মেয়েদেরকে কেন হল থেকে বের করে দেয়া হচ্ছে।’

‘তার মানে আপনি যখন রাজনীতি বন্ধ করে দিবেন, আপনি রাজনৈতিকভাবে বিষয়গুলো হ্যান্ডেল করবেন না।’

তিনি বলেন, ‘বিরোধীদল কিছু সুযোগ নেয়ার চেষ্টা করলেই তাকে আপনি ষড়যন্ত্র বলবেন, রাজনীতিবিদ রাজনীতিবিদের মতো কাজ করবে। ভিসির বাড়ি যখন ভেঙেছে অবশ্যই অন্যায় হয়েছে, আপনি তাদেরকে খুঁজে বের করুন। এই একটা জিনিস দিয়ে কিন্তু আরেকটিকে জাস্টিফাই করতে পারবেন না।’

এ তরুণ রাজনীতিকের মতে, আওয়ামী লীগ প্রত্যেকটা সমস্যা রাজনৈতিকভাবে সমাধান করা বন্ধ করে দিয়েছে। দলটি সমস্যাগুলি পুলিশ দিয়ে হ্যান্ডেল করে। সরকারের উচিৎ ছিল, সরকারের ইয়াং বা ভালো রাজনীতিবিদদের দিয়ে দফায় দফায় এদের সাথে কথা বলা।

‘মনে রাখতে হবে এই ছেলেগুলিও কিন্তু গণজাগরণ মঞ্চে ছিল, বিভিন্ন সময় অনেক দাবিতে সরকারের পক্ষেও ছিল। তখনতো তাদেরকে কোনো নাম দেয়া হয়নি। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের এক একজনকে আটদশ দিনের রিমান্ডে নিচ্ছে, এদের দাবিটা কি? তাদের সাথে কথা বলা দরকার, এটা (রিমান্ড) না। আপনি হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে, আপনি এভাবে হেনস্তা করে, আপনি বড় বড় মিছিলে যেখানে শিক্ষক দাঁড়ানো ছাত্রলীগকে লেলিয়ে দিয়ে মারামারি করা হচ্ছে, এটা কি? এটা কি রাজনৈতিক কোনো সমাধান?’

পার্থ বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন কোটা থাকবে না। সরকারের একবারের উচ্চ পর্যায় থেকে। এটা তারা মেনে নিতে পারেনি। পরে দেখে গেছে এটা মানা হয়নি। আদালতের ব্যপারটা সরকার যখন পছন্দ করবে তখন সেটা হয়েছে, আদালত বলেছে, মন্ত্রীরা শপথ ভঙ্গ করেছে কিন্তু তারা দেদারছে ঘুরছে ‘

‘এমনও দেখা গেছে প্রধান বিচারপতির সিদ্ধান্ত যখন পছন্দ হয়নি, তখন আদালতে দাঁড়িয়ে প্রধান বিচারপতিকে কোন লেভেলে সম্মান দেখানো হয়েছে, প্রধান বিচারপতি কিভাবে দেশ থেকে চলে গেছে। এটা সরকারের একটা কথা, সরকার যখন কিছু মনে করে তখন আদালতকে টানে।’

‘সরকার যদি ইচ্ছা করে এই কোটার বিষয়টা অনেক রাজনৈতিকভাবে হ্যান্ডেল করতে পারতো। আমি মনে করি সরকারের উচিৎ রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব দিয়ে সমাধান করা উচিৎ। কোনো এজেন্সি, কোনো পুলিশ, এক্সেকিউটিভ দিয়ে পলিটিক্যাল সমস্যা সমাধান করা সম্ভব না। যদি আপনি করতে যান তাহলে এটার রিজাল্ট ঠিক হবে না।’

ঢাকাটাইমস/২২জুলাই/এমএবি/ডিএম

সংবাদটি শেয়ার করুন

জাতীয় বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

জাতীয় এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :