কুষ্টিয়ায় হামলার একাল সেকাল

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ২৩ জুলাই ২০১৮, ১৯:১৬ | প্রকাশিত : ২৩ জুলাই ২০১৮, ১৮:৫৮

কুষ্টিয়ায় মানহানি মামলায় জামিন চাইতে গিয়ে আদালত চত্বরে আমার দেশ পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমান যেভাবে হামলার শিকার হয়েছেন, সেই ঘটনাটি এক যুগ আগের একটি ঘটনার অবিকল প্রতিরূপ বলা যায়।

২০০৬ সালের ২৯ মে সাংবাদিক নির্যাতনের প্রতিবাদে গিয়ে এই জেলাতেই হামলায় রক্তাক্ত হন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী।

মাহমুদুর রহমান অভিযোগ করেছেন, ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের এই হামলার সময় ঘটনাস্থলে পুলিশ থাকলেও তারা কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। একইভাবে এক যুগ আগে বিএনপি এবং ছাত্রদল নেতা-কর্মীরা সাংবাদিক সমাবেশে এসে হামলার সময় পুলিশের ব্যাপক উপস্থিতি থাকলেও তারাও বাধা দেয়নি।

সে সময় ইকবাল সোবহান চৌধুরী থানায় মামলা করতে গেলেও তা নেয়া হয়নি। পরে আওয়ামী লীগ সরকার আমলে সেই মামলাটি হয়। মাহমুদুর রহমানও রবিবারের হামলার ঘটনায় কোনো মামলা হয়নি।

কুষ্টিয়ার প্রবীণ সাংবাদিকরা জানান, বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে হামলা, তাদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির মামলার কারণে কুষ্টিয়ায় সাংবাদিকদেও একটি বড় অংশকে আত্মগোপনে যেতে হয়েছিল। সে সময় তুমুল আলোচিত সাংবাদিক নির্যাতনের ঘটনায় কুষ্টিয়া-৪ (কুমারখালী-খোকসা) আসনের সংসদ সদস্য সৈয়দ মেহেদী আহমেদ রুমীর নাম এসেছিল। আর তার প্রতিবাদেই সমাবেশে এসেছিলেন ইকবাল সোবহান চৌধুরী।

হামলার সময় রুমী তার বাসভবনে ছিলেন। তার সে সময়ের প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, হামলাকারী বিএনপি এবং ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা রুমীর বাসা থেকে সরাসরি এসে হামলা করে সাংবাদিক সমাবেশে। আর সে সময়ও পুলিশ সব কিছু দেখে নীরব ছিল।

একইভছাবে রবিবার বিকাল সাড়ে চারটার দিকে আদালত ভবন এলাকায় পুলিশের উপস্থিতিতে ছাত্রলীগের ৫০ জনেরও বেশি নেতা-কর্মী দুই দফায় হামলা চালায় বলে অভিযোগ করেছে হামলার শিকার মাহমুদুর রহমান ও কুষ্টিয়া বিএনপির নেতারা।

হামলায় মাহমুদুর রহমানের মাথা ফেটেছে। তার গাড়িটি ভেঙে দেয়। এর আগে আদালতের ভিতর মাহমুদুর রহমানকে চার ঘণ্টা অবরুদ্ধ করে রাখেন ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা।

গত বছরের ১ ডিসেম্বর জাতীয় প্রেসক্লাবে এক আলোচনায় জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, তার মেয়ে প্রধামন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বঙ্গবন্ধুর নাতনী টিউলিপ সিদ্দিকীকে নিয়ে কটূক্তিমূলক বক্তব্যে দেন বলে অভিযোগ উঠে। আর কুষ্টিয়া ছাত্রলীগের সভাপতি ইয়াসির আরাফাত তুষার গত বছরের ১০ ডিসেম্বর কুষ্টিয়ার অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে মানহানি মামলা করেন। এই মামলাতেই জামিন চাইতে গিয়ে আদালতে যান মাহমুদুর।

মাহমুদুর রহমানের সঙ্গী ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের মহাসচিব এম আব্দুল¬াহ বলেন, ‘পুলিশের উপস্থিতিতে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা অতর্কিত হামলা চালিয়ে মাহমুদুর রহমানকে রক্তাক্ত জখম করেন এবং তার গাড়ি ভাঙচুর করেন।

হামলার বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ইয়াসির আরাফাত তুষার বলেন, ‘ভাই আমরা ব্যবসা বাণিজ্য করে খাই, মারপিটের বিষয়ে আমার কোন মন্তব্য নেই।’

জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ আহমেদ বলেন, ‘আমাদের দলের একজন নেতার দায়ের করা মামলায় তিনি জামিন নিতে এসেছিলেন। আমরা সেখানে বিকেল পর্যন্ত ছিলাম। আমাদের চলে আসার পর কারা হামলা করেছে তা বলতে পারব না।’ বিএনপি আমলের সেই হামলা

একইভাবে ২০০৬ সালে কুষ্টিয়ার বেশ কয়েকজন সাংবাদিকের নামে মামলা হয় চাঁদাবাজির অভিযোগ এনে। এর পাশাপাশি সংসদ সদস্য রুমীর অনুসারী বিএনপি নেতা-কর্মীরা হামলা চালাতে থাকেন। এই অবস্থায় বেশ কয়েকজন সাংবাদিক পালিয়ে ঢাকায় চলে আসতে বাধ্য হন।

এই ঘটনাটি সে সময় ব্যাপক আলোচনা তৈরির পর ২৯ মে একটি সাংবাদিক সমাবেশে ডাক দেয়া হয়। ইকবাল সোহবান চৌধুরী, আজমলুল হক হেলালসহ

২৫ জনের মতো সাংবাদিক সেদিন ঢাকা থেকে যান এই সমাবেশে যোগ দিতে।

সাংবাদিক নেতাদেরকে কুমারখালি থেকে অভ্যর্থনা জানিয়ে নিয়ে আসেন কুষ্টিয়ার সাংবাদিকরা। সমাবেশের জন্য তারা জেলা পাবলিক লাইব্রেরির সামনে মঞ্চ তৈরি করেন। বক্তব্য শুরু হওয়ার পর পর পাশেই মেহেদী আহমেদ রুমীর বাসভবন থেকে বিএনপি ও ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা এসে হামলা করে।

এই হামলাতে অন্তত ২৫ জন সাংবাদিক আহত হয়, প- হয় সভা। ভাঙচুর হয় বেশ কিছু গাড়ি, পুড়িয়ে দেয়া হয় একটি মোটর সাইকেল।

এরপর সাংবাদিকরা মিছিল করে স্থানীয় আন্দোলনের বাজার পত্রিকায় যান। সেখান থেকে কুষ্টিয়া থানায় যান মামলা করতে। কিন্তু সে মামলা নেয়া হয়নি।

২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসলে সেই মামলা নেয়া হয় সাবেক সংসদ সদস্য রুমীসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে। এই মামলাটি এখন কোন পর্যায়ে সেটি তাৎক্ষণিকভাবে আদালত সংশ্লিষ্টরা জানাতে পারেননি।

ঢাকাটাইমস/২৩জুলাই/প্রতিনিধি/ডব্লিউবি

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :