‘বিদেশি শক্তির সঙ্গে সংঘর্ষে জঙ্গিবাদের স্ফুরণ’

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ২৪ জুলাই ২০১৮, ১৫:১৪ | প্রকাশিত : ২৪ জুলাই ২০১৮, ১৫:০৬
ফাইল ছবি

বিদেশি শক্তির সঙ্গে সংঘর্ষের কারণ জঙ্গিবাদের স্ফুরণ হয় বলে মনে করেন বিশিষ্ট সাংবাদিক, গবেষক অধ্যাপক আফসান চৌধুরী।

সোমবার রাতে বেসরকারি টেলিভিশন ‘চ্যানেল আই’তে আয়োজিত আজকের সংবাদপত্র অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন তিনি।

গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলার অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে এই হামলা স্থানীয় বা লোকাল, যেখানে কোনো আন্তর্জাতিক সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়নি। এ বিষয়ে জানতে চাইলে আফসান চৌধুরী বলেন, ‘পৃথিবীর যেকোনো জায়গায় যে জঙ্গিবাদ হয়েছে এর প্রত্যেকটার স্ফুরণ হয়েছে বিদেশি একটি শক্তির সঙ্গে সংঘর্ষের কারণে। তা না হয়ে জাতীয়তাবাদী আন্দোলন বা স্বাধীন হবো এমন একটা সময় গিয়ে এরকম রূপ ধারণ করে।’

‘শ্রীলঙ্কায় সব থেকে বড় জঙ্গি আন্দোলন ছিল ‘এলটিটি’ অর্থাৎ তামিলদের আন্দোলন। সাধারণত বিশ্বের একটি পর্যালোচনা করেন, তাহলে দেখা যাবে যে এরকম বিচ্ছিন্ন জঙ্গি আন্দোলনগুলো একটা সময় ভেঙে যায়।’

‘বাংলাদেশেও যেহেতু জাতীয়তাবাদী আন্দোলন নেই, তাই স্থানীয়ভাবে এটা (জঙ্গি কার্যক্রম) বড় হয় না।’

আফসান চৌধুরী বলেন, ‘আমি নিজে দেখিছি যে মানসিকভাবে দুর্বল মানুষদের কিভাবে জঙ্গিবাদের দিকে নিয়ে যাওয়া হয়। আর এ রকম প্রশিক্ষিত মানুষ আমাদের দেশেও আছে। দলিলপত্র রিভিউ করে দেখেছি যে কিছু না কিছু যোগাযোগ তাদের থাকেই। যেমন হয়তো খবর দেয়া হয়, বিভিন্নভাবে তথ্য আদান প্রদান করা হয়, উৎসাহ প্রণোদনা দেয়া হয়।’

‘কিন্তু জঙ্গিবাদের যে বর্তমান রূপটা আমরা দেখতে পাচ্ছি, তাতে কিন্তু তা সারা বিশ্ব জাল বিস্তার করছে এরকমটা না। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন জঙ্গিবাদ এখনো আছে। এমনকি ইসলামিক জঙ্গিবাদও আছে। কিন্তু সব দেশের জঙ্গিদের সাথে এদের সেরকম যোগযোগ বা মিল নেই। যেমন, যেখানে আইএস আছে সেখানে কিন্তু একাধিক জঙ্গিবাদও আছে।’

‘এখানে বিদেশে গিয়ে কিছু মানুষ অনুপ্রাণিত হয়েছে। আবার স্থানীয় মানুষও ছিল। কিন্তু বিদেশি কোনো চক্রান্ত এখানে ছিল না।’

হলি আর্টিজানে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক (আইএস) ছিল এমনটা বলা হয়েছে, যার যুক্তি জঙ্গিদের প্রতি মুহুর্তের ছবি আপলোড আইএস স্বীকারও করেছে। উপস্থাপকের এমন প্রশ্নের জবাবে আফসান চৌধুরী বলেন, ‘এমনটা করতেই পারে। পৃথিবীর সমস্ত জায়গার সমস্ত জঙ্গিবাদকে তারা স্বীকার করে নিচ্ছে ‘হ্যাঁ এটা আমরা করেছি’। আমেরিকার অনেকেই প্রচার করছে যে হ্যাঁ এটা আইএসই করেছে। তারা কুয়োর ব্যাঙ নয়। বাংলাদেশ থেকেও অনেকে আইএসে গেছে, যুদ্ধে হয়তো মারাও গেছে।’

বিশিষ্ট এই সাংবাদিক বলেন, ‘জঙ্গিবাদের আদর্শ বিভিন্ন পর্যায়ে বিভিন্ন ধারায় পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গায়। প্রকৃতপক্ষে চরমপন্থা কখনো কেন্দ্রীয়ভাবে থাকেনা, এটা বিচ্ছিন্ন। আইএস অনেক বেশি সবল কিন্তু মধ্যপ্রাচ্যের মানুষের মধ্যে। ফ্রান্স, জার্মান, বেলজিয়ামেও আছে। অর্থাৎ যেসব দেশে উপনিবেশে আছে, রাগ ও ক্ষোভ থেকে একটা বড় ভূমিকা পালন করে। মার্কিনীরা সারা পৃথিবীতে গিয়ে দখলদারি করেছে, সেই ক্ষোভ থেকেও এটা এসেছে। যেমন, আইএসের যারা সেনাপতি ছিল তারা কিন্তু সাদ্দাম হোসেনের সেনা সদস্য। জাতীয়তাবাদী একটা ধারণা থেকে তারা এটা করেছে। এখানে মূল শত্রু কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।’

‘মূলত আঞ্চলিক রাজনৈতিক কারণে এটা হয়। বাংলাদেশে যেটা বলা হচ্ছে স্থানীয়, এখানে এমন নয় যে আন্তর্জাতিকভাবে কেউ এটা জানতো না। তারা রিপোর্ট দিয়েছে যে বাংলাদেশের বেশকিছু মানুষ চেষ্টা করছে আইএসের সঙ্গে যোগযোগ করতে। তবে এই বিশেষ ঘটনাটা বিদেশি একটা তৎপতরা।’

আফসান চৌধুরী বলেন, ‘গত এক বছরের হিসেবে আমার মনে হয়ে বাংলাদেশের জঙ্গিবাদকে আমরা মোটামুটি ধরাশায়ী করেছি। তবে তার মানে এই না যে তারা আবার ওঠবে না।’

দিনাজপুরের কয়লা খনির কেলেঙ্কারির জন্য আট জেলার দেড় কোটি মানুষ দুর্ভোগে আছে এই বিষয়ে জানতে চাইলে আফসান চৌধুরী বলেন, ‘বর্তমান সরকারও বলেছে যে এই চুরিটা পূর্বের সরকারের সময় থেকে ছিল। আর এখন ২০১৮। ওনারা কি করলেন এতো দিন। আমার আশ্চর্য লাগছিল, যেখানে একটি সপ্তাহে তিন-চারটা করে রিপোর্ট লেখা হচ্ছে তখনওতো এই সমস্যা ছিল। এই চুরিটা কেনো ধরলো না। আপনাদের বারবারের এই অযোগ্যতা কি প্রমাণ করছে?’

‘আজকে হঠাৎ করে ওঠে দুদক বলছে ওখানে চুরির প্রমাণ তারা পেয়েছে। তো দুদক ভাই সাহেবরা আপনারা সারাক্ষণ বলছেন যে বাংলাদেশকে পরিষ্কার করে ফেলবেন, তো এতদিন আপনারা কোথায় ছিলেন? আমরা সাধারণ মানুষ সারাক্ষণ চুরি হচ্ছে খবর পেলে আপনারা শুনতে পান না?’

‘আমি একটা কথা বারবার বলি, আমাদের অদক্ষতাকে আমরা গ্রহণ করতে পারছি না। আমরা যখন সরকারকে বলছি যে তোমাদের অদক্ষতা রয়েছে, ‍উন্নতি করতে পারো। তারা বলে, আমাদের অদক্ষতা সত্ত্বেও প্রবৃদ্ধি হয়েছে। আমার মতে অদক্ষ হয়েই যদি এটা হয়, তাহলে দক্ষ হলে কি হবে? আর এই অদক্ষতার কারণে গত তিন মাসের হিসেবে যদি বলি, সোনা কোথায় গেলো?’

ঢাকাটাইমস/২৪জুলাই/এএকে/এমআর

সংবাদটি শেয়ার করুন

মতামত বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :