টিপস

হৃদয় প্রসারী দুঃখ দূর করি

এ এম আব্দুল্লাহ
| আপডেট : ২৬ জুলাই ২০১৮, ১১:২১ | প্রকাশিত : ২৬ জুলাই ২০১৮, ১১:১৫

আমাদের চারপাশে এমন একজন মানুষও কি আছে, যে তার জীবনের দুঃখ-কষ্টকে স্বাভাবিকভাবে গ্রহণ করে। অনেকেই মনে করে অন্যরা অনেক সুখে আছে, বিশেষ করে যাদেরকে সে হাসি-খুশি এবং সচ্ছল জীবনযাপন করতে দেখে। আর নিজেকে দুর্ভাগা মনে করে একাকিত্বের মানসিক যন্ত্রণা ভোগ করে।

যে লটারি জিতে সবাই তাকে ভাগ্যবান ভাবে এবং নিজেকে আনলাকি বা তার ভাগ্যে কিছু নেই বলে প্রচার করে। কিন্তু বাস্তবতা হলো লটারি কেনা মানুষের মধ্যে শতকরা একভাগও পুরস্কার পায় না, পাওয়ার সুযোগও নেই। সুতরাং বাকি ৯৯ ভাগ লটারি কিনেও পুরস্কার পাবে না এটাই স্বাভাবিক এবং পূর্ব নির্ধারিত। কিন্তু এই স্বাভাবিক ঘটনাকে মেনে নিতে না পেরে আমরা হতাশ হয়ে পড়ি যার পেছনে সত্যিই কোনো যুক্তি নেই। বাস্তবিক জীবনে কেউই আমরা কষ্টকর কোনো পরিস্থিতিকে মেনে নিতে চাই না।

আমরা সবাই চাই হাসি আনন্দে ভরে থাকুক জীবনের প্রতিটি ক্ষণ। হাসি আনন্দের সাথে সফলতাও চাই। কিন্তু আমরা যদি প্রতিটি সফল মানুষের জীবনের দিকে তাকাই, তাহলে দেখা যায় তাদের জীবন অনেক সংগ্রামমুখর। শিক্ষা, ক্রীড়া, সংস্কৃতি, রাজনীতিতে যারা অনুকরণীয় তাদের প্রত্যেকের জীবন কেটেছে ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে। কেউ যদি তাদের মতো হতে চায় তবে তাদের কষ্ট সহিষ্ণু হওয়ার বিকল্প নেই। অধিকাংশ মানুষই আরাম-আয়েশে জীবন পার করতে চায়, তাই তারা সামান্য প্রতিবন্ধকতায় মানসিক শক্তি হারিয়ে ফেলে।

একটু খেয়াল করলে দেখা যায়, সকল দেশের বড় বড় প্রাকৃতিক দুর্যোগে সে দেশের সামরিক বাহিনীকে মোতায়েন করা হয়। কারণ তারা যেকোনো দুর্যোগ মোকাবেলায় সর্বাধিক পারদর্শী। কিন্তু এই পারদর্শিতার পেছনে রয়েছে তাদের কঠিন প্রশিক্ষণ ও নিয়মিত চর্চা। কঠিন প্রশিক্ষণ ও চর্চা না থাকলে তাদের পক্ষে দুর্যোগে কার্যকরী ভূমিকা রাখা সম্ভব হতো না। বাস্তব জীবনে মানুষের যদি কঠিন ও খারাপ সময় মোকাবেলার অভিজ্ঞতা না থাকে সেও সেটা কাটিয়ে উঠতে পারে না। যদি এমনটি ভাবা যেত যে, জীবনে দুঃখ আছে, কষ্ট আছে এবং সে জীবনই স্বাভাবিক। তাহলে দুঃখ-কষ্ট সাথে নিয়েই মানুষ সামনে এগিয়ে যেতে পারত। অনেক সময় আবার ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র স্বার্থ মানুষকে পেছনে ঠেলে দেয়। ক্ষুদ্র স্বার্থের কারণে অনেকেই বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়স্বজনকে এড়িয়ে চলে বা তাদের সাহায্যে এগিয়ে আসে না। এর ফলে সে নিজেও একসময় একা হয়ে পড়ে। তার কাছে মনে হয় মানুষ স্বার্থবাদী, তাই কেউ তার সাহায্যে এগিয়ে আসছে না।

অন্যকে সাহায্য না করলেও নিজের বিপদে সে তাদেরকে নিজের পাশে প্রত্যাশা করে। কিন্তু বাস্তবে সেটা না হওয়ায় সে হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়ে। সেই হতাশা থেকে অন্যদের সঙ্গে অস্বাভাবিক বা অসহযোগিতামূলক আচরণ করতে দেখা যায়। এর ফলে সুন্দর সম্পর্কগুলোর মধ্যে শত্রুতা তৈরি হওয়ার শঙ্কা থাকে। এ কারণে নিজের ক্ষুদ্র স্বার্থের গ-িকে পার করে অন্যের জন্য কিছুটা হাত বাড়িয়ে দিতে হবে। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তার গানের মাধ্যমে বলেছেনÑ ‘চারিদিকে দেখো চাহি হৃদয় প্রসারী,/ ক্ষুদ্র দুঃখ সব তুচ্ছ মানি।’ আসলেও তাই, জীবনের ক্ষুদ্র দুঃখকে পাশ কাটিয়ে সামনে এগিয়ে যেতে হবে। তাহলেই জীবনের আনন্দধারায় অবগাহন করা যাবে, জীবন হবে সার্থক ও সুন্দর।

এ এম আব্দুল্লাহ: লেখক ও অবসরপ্রাপ্ত সামরিক কর্মকর্তা

(ঢাকাটাইমস/২৬জুলাই/এজেড)

সংবাদটি শেয়ার করুন

ফিচার বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :