মেট্রোরেল: ভাঙা সড়ক মেরামত করবে কে?

কাজী রফিকুল ইসলাম, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ২৮ জুলাই ২০১৮, ১৪:০৩ | প্রকাশিত : ২৮ জুলাই ২০১৮, ০৮:২৬

রাজধানীর যানজট নিয়ন্ত্রণে স্বপ্নের প্রকল্প মেট্রোরেলের নির্মাণ কাজ চলার সময় তীব্র দুর্ভোগে পড়েছে মিরপুরবাসী। উত্তরা থেকে মিরপুর, ফার্মগেট হয়ে চলতে থাকা লাইন যাচ্ছে সড়কের মাঝখান দিয়ে। আর মিরপুর ১০ নম্বর হয়ে আগারগাঁও পর্যন্ত সড়কের মাঝখানে একটি বড় অংশ ঘেরাও করে কাজ চলায় দুই পাশেই সরু হয়ে গেছে সড়ক। এতে যানজট তীব্র হচ্ছে। তার ওপর আবার সেই সড়কে যে স্বাভাবিক মেরামত কাজ চলত, সেটিও বন্ধ।

মেট্রোরেলের কাজ চলার সময় এই সড়কটি কেন মেরামত করে চলার উপযোগী করা হচ্ছে না, সে জন্য ২০ লাখেরও বেশি মানুষের বসবাস বিশাল এই এলাকার মানুষদের মধ্যে ক্ষোভ স্পষ্ট।

আবার এই কাজ শুরু হওয়ার পর থেকে বৃষ্টি মানেই তলিয়ে যাচ্ছে মিরপুর। এ নিয়ে ক্ষোভের পালা শেষে এখন শুরু হয়েছে হাস্যরস। মিরপুরবাসীকে কেন সর্বংসহা (যারা সব সহ্য করতে পারে) বলা উচিত, সে বিষয়ে নানা রম্য রচনা চলছে সামাজিক মাধ্যম এবং বিভিন্ন কৌতুককর অনলাইন লেখনিতে।

দেশের প্রথম মেট্রোরেলের একটি রুট যাচ্ছে উত্তরা তৃতীয় পর্ব থেকে পল্লবী হয়ে রোকেয়া সরণি-খামারবাড়ী-ফার্মগেট-হোটেল সোনারগাঁও-শাহবাগ-টিএসসি হয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সামনে পর্যন্ত।

কাজের জন্য বেশ সরু হয়ে গেছে পল্লবী হয়ে রোকেয়া সরণি সড়ক। ব্যবসায়িক মন্দার অন্যতম কারণ হিসেবে এই দিকটাকেই চিহ্নিত করছেন এখানকার ব্যবসায়ীরা। এছাড়া জলাবদ্ধতায় জনদুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে এলাকায় বসবাসকারী ও এই রাস্তায় চলাচলকারীদের।

যান চলাচল স্বাভাবিক রাখতে মেট্রোরেলের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে বেশ কয়েকজন শ্রমিকের দ্বারা তাদারকি করা হচ্ছে। কোন বাস বা ব্যক্তিগত গাড়ি যেন যত্রতত্র দাঁড়াতে না পারে সেদিকে নজর রাখছেন এই শ্রমিকরা। একই দায়িত্ব পালন করতে দেখা গেছে কমিউনিটি পুলিশের পোশাকে কয়েকজনকে।

কিন্তু সড়ক মেরামত করছে না ঠিকাদার। স্বাভাবিক নিয়মে প্রকল্পের কাজ চলাকালে সড়ক চলাচল উপযোগী রাখার কথা তাদেরই। কিন্তু এই বিষয়টি উপেক্ষা করছে তারা।

এর আগে মগবাজার ফ্লাইওভার নির্মাণের সময়ও ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান সড়ক মেরামতের দায়িত্ব উপেক্ষা করেছেন। আর তীব্র ভোগান্তির পর সমালোচনার মুখে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে সাজার হুমকি দিয়ে কাজ করিয়েছেন। এর আগ পর্যন্ত ভাঙা সড়ক রেখে দিলেও মন্ত্রীর তাগাদার পর তারা ঠিকই সড়ক মেরামত করে চলাচল উপযোগী করেছে। কিন্তু মিরপুরবাসীর ভোগান্তির অবসানের জন্য কেউ এগিয়ে এসে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে চাপ দিচ্ছে না।

কাজীপাড়া থেকে মিরপুর ১০ নম্বরের রোকেয়া সরণীতে। একই চিত্র বেনারশী পল্লী হয়ে পল্লবী মুখী সড়কে। জায়গায় জায়গায় রাস্তা ভাঙা ও গর্ত থাকায় একটি মাত্র লেন দিয়ে চলাচল করতে হয় গণপরিবহন ও ব্যক্তিগত গাড়িকে। ফলে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয় এই সড়কে।

এই রুটে চলাচলকারী তেতুলিয়া পরিবহনের চালক মোতালেব ঢাকাটাইমসকে জানান, ‘এমনেই রাস্তায় কাজ চলে। তার উপরে রাস্তা ভাঙা। গাড়ি বামে নেওয়া যায় না। পানি জইমা আছে, পানির নিচে বিশাল বিশাল গর্ত। এই গুলা ভরাট কইরা দিলেই হয়। তাইলে তো জ্যামডা কম লাগে।’

স্থানীয় বাড়ি মালিক অনিক আহমেদ। ঢাকাটাইমসকে তিনি বলেন, ‘উন্নয়ন অবশ্যই চাই এবং দেশনেত্রীর এই উন্নয়নকে স্বাগত জানাই। কিন্তু আমাদের দিকে একটু তাকানো উচিত। এই কাজ শেষ হতে আরো সময় লাগবে। রাস্তাটা ঠিক করে দিলে আর পানি যেন না জমে সেদিকটা ঠিক করলে আমরা উপকৃত হই।’

ভাঙা এসব সড়ক কেন মেরামত করা হচ্ছে না, এ বিষয়ে মেট্রোরেল প্রকল্পের কর্মীদের মধ্যে যাদেরকে এলাকায় পাওয়া গেল, তারা কেউ কিছু বলতে রাজি হলেন না।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. সাঈদ আনোয়ারুল ইসলাম ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘মেট্রোরেল এখন আমাদের দায়িত্বে নয়। আমরা মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষকে কাজ হস্তান্তর করে দিয়েছি। এখন এর সাথে সংশ্লিষ্ট সব কিছুই তারা দেখবে। তাদের কাজ শেষে তারা আমাদের কাজ বুঝিয়ে দেবে। রাস্তা ঠিক করে দেবে। তার আগ পর্যন্ত আমাদের কোনো দায়িত্ব নেই।‘

বৃষ্টি মানেই জলাবদ্ধতা

এই প্রকল্পের কাজ শুরুর পর থেকেই বৃষ্টি জলাবদ্ধতার ভোগান্তি নিয়ে আসছে মিরপুরবাসীর জন্য। প্রকল্পের আশপাশে তো বটেই দূর এলাকাও ডুবে যাচ্ছে প্রতিবার। আর এসব ছবিও আসছে সামাজিক মাধ্যম ও গণমাধ্যমে।

স্থানীয়রা এবং মেট্রোরেল প্রকল্পের কর্মীরা জানান, ম্যানহোল ছিল রাস্তার মাঝখানে যেখানে মেট্রোরেলের লাইন নির্মাণের কাজ চলছে। এই কাজ শুরুর আগে সেই লাইন সরিয়ে নেয়া হলেও তা সব পানি নিষ্কাষণের জন্য পর্যাপ্ত নয়। আবার যেখানে কাজ চলছে, সেই এলাকাটি যেন শুকনো থাকে সেটিও নিশ্চিত করা হয়েছে।

এর ফলে স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় পানি সরে যেতে আরও বেশি সময় লাগছে। প্রকল্পের কর্মীরা বলছেন, এই ভোগান্তি মেনে নিতে হবে কাজ শেষ না হওয়া অবধি।

তবে মিরপুরবাসীর এই ভোগান্তি আর এক বছর সইতে হবে। কারণ ২০১৯ সালের মধ্যে উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত লাইন চালু হয়ে যাবে। আর ২০২০ সালের মধ্যে উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত লাইনও পুরোপুরি চালু হয়ে যাওয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করা আছে।

বৈদ্যুতিক বাক্স ডুবে যাওয়ায় আতঙ্কে স্থানীয়রা

রোকেয়া সরণীতে রাস্তার পাশেই বসানো হয়েছে ১১ হাজার ওয়াটের বৈদ্যুতিক বক্স। তা স্পর্শ না করার জন্য জনসাধারণের উদ্দেশ্যে সতর্ক বার্তাও লেখা রয়েছে এগুলোর গায়ে। অথচ দেখা গেছে বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতায় এই বাক্স দুই ফুট পর্যন্ত পানিতে ডুবে গেছে। এ দেখে ভীত স্থানীয়রা।

স্থানীয় ব্যবসায়ী রাসেল বলেন, ‘বক্সের মধ্যে কারেন্ট। যদি কোনোভাবে পানিতে কারেন্ট লাগে, তাইলে তো সব শেষ। বৃষ্টি হইলেই তো দেহি ওই বক্সে পানি ঢুকে।’

ঢাকাটাইমস/২৮জুলাই/কারই/ডব্লিউবি

সংবাদটি শেয়ার করুন

বিশেষ প্রতিবেদন বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :