তাবলিগ চলবে আলেমদের কথায়: আল্লামা শফী

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ২৮ জুলাই ২০১৮, ২২:২৩ | প্রকাশিত : ২৮ জুলাই ২০১৮, ১৭:৫৯

তাবলিগ জামাতের চলমান সংকট নিয়ে ঢাকায় বড় ধরনের সমাবেশ করেছেন দেশের শীর্ষ আলেমরা। সেখানে প্রধান অতিথি ছিলেন হেফাজতে ইসলামের আমির ও দেশের শীর্ষ আলেম আল্লামা শাহ আহমদ শফী। তিনি সেখানে জানিয়েছেন, তাবলিগের মধ্যে নতুন কোনো ধারা চলবে না। যে আলেম নয় তার কথা সেখানে চলবে না। তাবলিগ চলবে আলেমদের নেতৃত্বে।

শনিবার রাজধানীর মোহাম্মদপুরে ‘ওজাহাতি জোড়’ নামের এই সম্মেলনে তাবলিগের চলমান সংকট বিষয়ে আলেমরা তাদের অবস্থান পরিষ্কার করেন। নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের জন্য তাবলিগের অন্যতম মুরব্বি মাওলানা সাদ এবং তার অনুসারীদের বয়কটের ডাক দেয়া হয় এই সম্মেলন থেকে।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে হাটহাজারী মাদ্রাসার মহাপরিচালক আল্লামা শফী বলেন, ‘দেওবন্দের কথা বলি আমরা। নবীজির লাঠির রেখার ওপর প্রতিষ্ঠিত দারুল উলুম দেওবন্দ। আমাদের সবকিছু যেন ফতোয়া মোতাবেক হয়। দেওবন্দের ফতোয়াকে ভিত্তি করেই আলেমরা কথা বলেছেন। তাবলিগের তিন মুরুব্বি যে উসুলে কাজ করেছেন কেয়ামত পর্যন্ত সে উসুলেই চলবে।

আলেমদের উদ্দেশ্যে আল্লামা শফী বলেন, ‘ওয়াজের সব মজলিসে বক্তারা তাবলিগের এ উসুলের কথা প্রচার করুন। আমরা আলেমদের কথামতো চলব। তাবলিগের কাজ করব। অন্য কারো কথা মানব না, আমল করব না। যিনি আলেম না, তিনি কোনো মাজহাব বানালে আপনারা তার কথা শুনবেন না। এই আলেম উলামা যারা বাংলার সিংহ আপনারা তাদের কথা শুনবেন।’

‘এ কাজ উলামাদের থেকে এসেছে, এখনো একাজের মুরুব্বি হবেন উলামায়ে কেরাম। যারা আলেমদের অপমানিত করেছে, মারধর করেছে, আমরা উলামারা মার খেতে পারব। এখানকার মুফতিয়ানে কেরাম আমাদের মারলেও সহ্য করব। কিন্তু যারা মূর্খ, কিছু জানে না তাদের মার কেন খাব। তাবলিগ তো আদব শেখার জন্য। যাদের আদব নেই তাদের তাবলিগ কিসের।’

আল্লামা আহমদ শফী বলেন, ‘নবী করিম সা.-এর দীন হলো একে অন্যের মঙ্গল কামনার নাম। আল্লাহ, আল্লাহর রাসুল, আলেমদের মঙ্গল কামনার নাম দীন। এক. আল্লাহর মঙ্গল কামনা মানে কোরআন মানা। দুই. রাসুলের মঙ্গল কামনা মানে রাসুলের সব কথা মানা।’

সারা দেশ থেকে আসা লক্ষাধিক আলেম-উলামার উদ্দেশ্যে আহমদ শফী বলেন, ‘তাবলিগও উলামায়ে কেরাম, আওলিয়ায়ে কেরামের কথা মতো করবেন। সবাই গ্রামে গ্রামে জামাত নিয়ে বের হোন। যাতে অন্য কোনো নতুন তাবলিগ শুরু হতে না পারে। মাদ্রাসা বন্ধ দিয়ে হলেও তাবলিগে বের হতে হবে উলামাদের। নতুন নতুন যারা বিভিন্ন কথা বলছে তাদের কথা মানা যাবে না।’

ছয় সিদ্ধান্ত

তাবলিগের এই জোড়ে ছয়টি সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সেই সিদ্ধান্তগুলো হচ্ছে:

১. জমহুর উলামায়ে কেরাম একমত হয়েছেন, তিনটি মৌলিক কারণে- (ক) কোরআন ও হাদিসের মনগড়া ব্যাখ্যা, (খ) তাবলিগের গুরুত্ব বোঝাতে গিয়ে তাবলিগ ব্যতীত দ্বীনের অন্যান্য মেহনতকে যথা দ্বীনি শিক্ষা ও তাসাউফ ইত্যাদিকে হেয়প্রতিপন্ন করা। (গ) পূর্ববর্তী তিন হজরতজি (হজরত মাওলানা ইলিয়াস রহ., হজরত মাওলানা ইউসুফ রহ, ও হজরত মাওলানা এনামুল হাসান রহ. এর উসুল ও কর্মপন্থা থেকে সরে যাওয়ার কারণে বর্তমানে মাওলানা মুহাম্মদ সাদ সাহেবকে অনুসরণ করা সম্পূর্ণভাবে বর্জনীয় ও নিষিদ্ধ।

২. মাওলানা মুহাম্মদ সাদ সাহেব হজরত মাওলানা এনামুল হাসান রহ. এর রেখে যাওয়া শুরায়ি নেজামকে উপক্ষো করে নিজেই নিজেকে আমির দাবি করেছেন; যা শরিয়তবিরোধী। তাই তার কোনারূপ সিদ্ধান্ত-ফায়সালা বা নির্দেশ কাকরাইল তথা বাংলাদেশে বাস্তবায়িত করা যাবে না।

৩. দারুল উলুম দেওবন্দ আশঙ্কা প্রকাশ করেছে যে, মাওলানা মুহাম্মদ সাদ সাহেব আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের মতাদর্শ থেকে সরে গিয়ে নতুন কোনো ফেরকা গঠনের অপচেষ্টা চালাচ্ছেন। এহেন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের কোনো জামাত বা ব্যক্তিকে নেযামুদ্দিনে পাঠানো বা যাওয়া মুনাসিব হবে না। অনুরূপভাবে নেজামুদ্দিন থেকে আগত কোনো জামাতকে বাংলাদেশের কোনো জেলায়/থানায় ইউনিয়নে কাজ করার সুযোগ দেওয়া যাবে না।।

৪. হজরত মাওলানা ইলিয়াস রহ., হজরত মাওলানা ইউসুফ রহ. ও হজরত মাওলানা এনামুল হাসান রহ এর বাতানো পদ্ধতিতে দাওয়াত ও তাবলিগের কাজ সারা দুনিয়াতে সমাদৃত ও গৃহীত হয়েছে। তাই বাংলাদেশের তাবলিগের কাজ পূর্ববর্তী এই তিন হজরতের পদ্ধতিতে এবং উলামায়ে কেরামের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হবে। নতুন কোনো পদ্ধতি চালু করা যাবে না। কাকরাইল, টঙ্গী ময়দান এবং জেলা মারকাযসহ সকল মারকায এই নীতিতেই পরিচালিত হবে।

৫. কাকরাইল মসজিদের যে সমস্ত শুরা সদস্য আমরণ মাওলানা মুহাম্মদ সাদ সাহেবের ভ্রান্ত আকিদা অনুসরণের হলফনামা করেছেন যা শরিয়ত পরিপন্থি- তারা শুরার সদস্য থাকার যোগ্যতা হারিয়ে ফেলেছেন। অতএব, তাদেরকে তাবলিগের কাজে শুরা ও ফায়সাল না রাখার আহ্বান জানানো যাচ্ছে।

৬. ২০১৮-এ টঙ্গী ইজতেমায় সরকারের সাথে পরামর্শক্রমে আগামী ২০১৯-এর টঙ্গী ইজতেমার জন্য নির্ধারিত তারিখ- প্রথম পর্ব ১৮, ১৯, ২০ জানুয়ারি ও দ্বিতীয় পর্ব ২৫, ২৬, ২৭ জানুয়ারি এর সাথে আজকের মজমা ঐকমত্য পোষণ করছে।

জোড়ে আল্লামা আশরাফ আলী, আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমী, মুফতি আবদুল মালেক, আল্লামা আজহার আলী আনোয়ার শাহ, মুফতি রুহুল আমিন, মাওলানা আবদুল কুদ্দুস, মুফতি মিযানুর রহমান সাঈদ, মাওলানা মাহফুজুল হক, মুফতি ফয়জুল্লাহ, মুফতি এনামুল হক, মুফতি ওবায়দুল্লাহ ফারুক, মাওলানা বাহাউদ্দীন যাকারিয়া, মাওলানা কেফায়াতুল্লাহ আযহারী প্রমুখ বক্তব্য দেন।

(ঢাকাটাইমস/২৮জুলাই/জেবি)

সংবাদটি শেয়ার করুন

ইসলাম বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :