বিমানবন্দরে শিশু কর্নার এবং কিছু কথা

রিবেল মনোয়ার
 | প্রকাশিত : ৩১ জুলাই ২০১৮, ১৪:১৬

আমি ব্যক্তিগতভাবে বিমানে ভ্রমণ করতে চাই না। কারণ বাংলাদেশি বিমান পরিবহন কোম্পানিগুলোর প্রফেশনালিজম, বিমানবন্দরগুলোর অব্যবস্থাপনা আর অস্বাভাবিক ব্যয় আমার মনকে ভীষণ পীড়া দেয়। কোনো একদিন যদি সম্ভব হয় এভিয়েশন সেক্টরে একটি আন্তর্জাতিক মানের বিমান কোম্পানি করার পর হয়তো আমার রুচির পরিচয় দেয়া সম্ভব হবে। এদেশের সাধারণ মানুষ এক ভীষণ কষ্টে পরিবহন করে। ঢাকার মানুষের কষ্ট তো সবার জানা। কারণ বাসের রাস্তাগুলোয় অসম্ভব জ্যাম। রংপুর ঢাকা রোডে ১২ ঘণ্টা বাসে জার্নি করতে হয়েছে কয়েকবার। ট্রেনের টিকেট পাওয়াটাই বেশ কঠিন। তারপর ট্রেনের টাইম কোনদিনও ঠিক পাইনি। রাত ১১টার ট্রেন ভোর তিনটায় এসেছে। তারপরও অর্থমন্ত্রী রেল মন্ত্রণালয়ের ও রেলওয়ের কর্মচারীদের বেতন বৃদ্ধি করেছেন। জনগণের টাকায় জনগণকে ভোগান্তি দেয়া কর্মচারীর বেতন বৃদ্ধি কতটা যৌক্তিক?

রেলস্টেশনে ওয়াশরুমে অপরিচ্ছন্নতার জন্য যাওয়াটা অসম্ভব। ফলে পরিবহন সেক্টরের নৈরাজ্য, অরাজকতা ও রাজনৈতিক প্রভাবে কোনো ভালো পরিবহন ব্যবস্থা গড়ে ওঠেনি।

এতো গেলো আকাশ, সড়ক ব্যবস্থা। নদী পরিবহনের কথা নাই বললাম। যারা বরিশাল এলাকার লোক নিয়মিত লঞ্চে যাতায়াত করেন তারা ভালো বলতে পারবেন। আর লঞ্চ পার হতে গিয়ে কত মানুষের প্রাণ গেছে, সেসব সংবাদ আমরা ভুলে যাই। জুন মাসে ঢাকা থেকে সৈয়দপুর গিয়েছি নভোএয়ারে। সাথে ছিলো আমার স্ত্রী ও মেয়ে। আমার মেয়ের জীবনে এটাই প্রথম বিমান ভ্রমণ। দুই বছর বয়স। এখনও সে মায়ের দুধ খাওয়া ছাড়েনি। বিমানবন্দরে ডোমেস্টিকে অপেক্ষা করার সময় মেয়েকে ব্রেস্ট ফিডিং করা সম্ভব হয়নি। কারণ এজন্য আলাদা কোনো ব্যবস্থা নেই। আর মানুষজন তাকিয়ে থাকে। ফলে একটি পরিবেশের অভাব বোধ করছিলো আমার স্ত্রী। সে বলল, কি বিপদ একটি দেশের বিমানবন্দরেও কোনো ব্যবস্থা নেই। বিমানবন্দরের সবাই ব্যস্ত থাকে ভিআইপিদের সার্ভিস দিতে। অথচ দেশে এখন প্রধানমন্ত্রী ও অনেক মন্ত্রী, সচিব নারী। নারীরাও কি নারীদের এই সমস্যাগুলো বোঝে না? আমি বললাম, তুমিও কখনো এমপি মন্ত্রী হলে তুমিও যে সাধারণ মানুষ ছিলে তা হয়তো ভুলে যাবে। কারণ বিলাসিতাও এক ধরনের আসক্তি। বাংলাদেশের বাতাসে সমস্যা আছে মানুষ এভাবেই চলছে। তবে আমাদের দেশে মতিয়া চৌধুরীর মতো নেত্রীও আছেন যারা ত্যাগ করে মানুষের জন্য কাজ করেন।

মঙ্গলবার ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে মেঘনা গ্রুপের চেয়ারম্যান মোস্তফা কামাল স্যার তার পরিবারসহ এসেছিলেন। সাথে ছিলেন তার স্ত্রী, দুই মেয়ে, জামাই। মেঘনা গ্রুপের নির্বাহী পরিচালক- মার্কেটিং আসিফ ইকবাল। ড্যাফোডিল ফ্যামিলির চেয়ারম্যান সবুর খান স্যার উপস্থিত ছিলেন। ড্যাফোডিল ফ্যামিলির ডলফিনের ডিরেক্টর হিসেবে আমিও উপস্থিত ছিলাম। অসাধারণ মানুষদের সাথে এক অসাধারণ অভিজ্ঞতা।

মেঘনার ডিরেক্টর ও মোস্তফা কামাল সাহেবের মেয়ে তাহমিনা মোস্তফা অসাধারণ বক্তব্য দিয়েছেন। তার বাবাকে নিয়ে তার স্মৃতি, বাবাকে সবসময় কাজেই পেয়েছেন। কারণ তার বাবা সবসময় কাজ করতেন, এখনও করেন। এইসব স্মৃতি চোখের শিশির বিন্দুগুলোকে চোখের বাইরে নিয়ে আসে আর আমাদের শেখায় দেখো কীভাবে মানুষ বড় হয়।

তাহমিনা মোস্তফা জানালেন, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তাদের উদ্যোগে ব্রেস্ট ফিডিং কর্নার- এমজিআই বেবি কেয়ার চালু করা হয়েছে। তার বাবার প্রশংসা পাওয়া খুব কঠিন, একটু হাসি দেখতে পাওয়া ভাগ্যে ব্যপার। এই কাজটির পর তার বাবা শুধু একটি শব্দ বলেছে। কাজটা ভালো করেছো। আবেগের কি অসাধারণ প্রকাশ। তিনিও তার সন্তান নিয়ে ভ্রমণের সময় একজন মা হিসেবে সন্তানের সমস্যা ফিল করেন ও সমাধান করেছেন। মোস্তফা কামাল শুধু ৪০টি বড় শিল্প প্রতিষ্ঠানই করেননি গড়েছেন একটি মানবিক পরিবার। আমরা ব্রিটিশদের গোলাম ছিলাম, স্বভাব থেকে সে অভ্যাস যায়নি। তাইতো আমরা দেশি প্রতিষ্ঠানের চেয়ে বিদেশিদের বেশি পছন্দ করি। এমনকি বলতে ভালোবাসি! আমরা নিজেরা বড় কোনো প্রতিষ্ঠান তৈরির চেষ্টা করি না আবার এমন ভাব দেখাই। ইউনিলিভারের মতো বেনিয়া কোম্পনিগুলোকেও চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছেন ফ্রেশ ও নাম্বার ওয়ানের মতো ব্রান্ড দিয়ে। বাংলাদেশের মার্কেটিং ও সাপ্লাই চেইনের কিংবদন্তী আসিফ ইকবাল স্যারের নেতৃত্বে একটি দেশীয় ব্রান্ড মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে।

একটি ভালো ব্রান্ড কোনো ব্যক্তি বা কোম্পানির একক সম্পদ হয় না। এটি দেশের সম্পদ। কোরিয়ার মানুষ হুন্দাই, স্যামস্যাংকে তাদের জাতীয় অর্জন বলেই মনে করে। বাংলাদেশের প্রচলিত সিস্টেমে এ ধরনের লোকরা অর্থমন্ত্রী বা বাণিজ্যমন্ত্রী হন না। মন্ত্রী হন সাবেক আমলারা! যাদের জনগণের চাহিদা নিয়ে বিন্দুমাত্র চিন্তার করবার সময় নেই। এজন্য অর্থমন্ত্রী দেশে গাড়ি উৎপাদনের ভ্যাট, ট্যাক্স বসিয়েছেন বেশি। আর পুরনো গাড়ি আমদানি করতে কম ভ্যাট ট্যাক্স। ফলে এদেশে গাড়ি উৎপাদন পিছিয়ে পড়ছে। পিএইপির মতো কোম্পানি হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করে বসে আছে সরকারি পলিসি সাপোর্টের অভাবে। প্রসঙ্গক্রমে বলি, আমি নিজের অভিজ্ঞতায় বলবো প্রাইভেট সেক্টর দেশের উন্নয়নে যে অবদান রেখেছে সে তুলনায় সরকারি লোকরাই বড়ই আনস্মার্ট বড়ই পিছিয়ে পড়া।

এদেশে মোস্তফা কামাল, আহমেদ আকবর সোবহান, সুফি মিজানুর রহমান, আনিসুল হক, একে আজাদ, ফরিদুর রেজা সাগর, আবদুল মোনেম ও তাদের মতো শত শত পরিবার দরকার। যারা সত্যিই দেশকে পরিবর্তন করছে। লক্ষ মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছে। আর যারা রাজনীতির নামে আমাদের বিক্রি করে খাচ্ছে। ব্যাংক লুট করছে, কয়লা গায়েব করছে তাদের জন্য ঘৃণা। এদেশে নিষ্পাপ শিশু নিহত হবার পর মন্ত্রী হাসতে পারেন। কারণ এদেশে তারাই মালিক। কিন্ত সংবিধানে বলা আছে, জনগণই দেশের মালিক বাকি সবাই প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী ও সেবক।

এ ধরনের ব্যক্তিদের সম্মান করবার প্রয়োজন নেই। জাতির জন্য যারা সত্যিকারের কাজ করেন তারাই শ্রদ্ধার পাত্র।

লেখক: উদ্যোক্তা।

সংবাদটি শেয়ার করুন

মতামত বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :