সম অধিকার ও মর্যাদাকর সমাজ প্রতিষ্ঠার তাগিদ

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ৩১ জুলাই ২০১৮, ২২:০২ | প্রকাশিত : ৩১ জুলাই ২০১৮, ২০:১০

নারীর প্রতি সহিংসতা, যৌন হয়রানি বন্ধ না হলে দেশ জাতির অগ্রযাত্রা ব্যাহত হতে বাধ্য। তাই নারী-পুরুষ বিভাজন নয়, সম অধিকার, বৈষম্যহীন, মর্যাদাপূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গির সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে হবে।

মঙ্গলবার বেলা ১১ টার সময়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের এ ব্লক অডিটোরিয়ামে ‘কর্মক্ষেত্র নারীর প্রতি অশোভন আচরণ ও প্রতিকার’ শীর্ষক কর্মশালায় বক্তারা এ তাগিদ দেন।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের কমপ্লেন্ট কমিটির উদ্যোগে এই কর্মশালার আয়োজন করা হয়।

কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি আয়শা খানম। কর্মশালায় আলোচক ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিম ও বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়–য়া। পরিচালনা করেন রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ডা. এ বি এম আব্দুল হান্নান।

আয়শা খানম বলেন, নারীরা সমাজের অর্ধেক। সকল ক্ষেত্রেই নারীর সমান ক্ষমতায়, সম অধিকার প্রতিষ্ঠা করা প্রয়োজন। প্রয়োজন একটি অসাম্প্রদায়িক যুক্তিবাদী সমাজ প্রতিষ্ঠার। যেখানে নারীরা তাঁদের পূর্ণ অধিকার ও মর্যাদা নিয়ে বসবাস করবেন এবং দায়িত্ব পালন করতে পারবেন।

তিনি বলেন, আমরা সবাই মানব সন্তান হিসেবেই জন্ম গ্রহণ করি। কিন্তু সমাজ তাঁকে নারী হতে শেখায়। পিতৃতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থা ও পুরুষতান্ত্রিকতা নানাভাবেই নারীদেরকে পিছিয়ে রেখেছে। এ থেকে মুক্তির লক্ষ্যে পরিবর্তনের জন্য সাবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে। নারীদের প্রতি যৌন হয়রানিসহ সকল ধরণের সহিংসতা নির্মূল করতে হবে। কর্মক্ষেত্রসহ সর্বত্রই নারীদের জন্য একটি নিরাপদ, স্বস্তি, যথার্থ সম্মান ও মর্যাদাকর পরিবেশ নিশ্চিত করতে নিরন্তর সংগ্রাম চালিয়ে যেতে হবে।

সভাপতির বক্তব্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) ও যৌন হয়রানি প্রতিরোধকল্পে গঠিত কমপ্লেন্ট কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ডা. সাহানা আখতার রহমান বলেন, নির্ভয়ে অভিযোগ করুন, যৌন হয়রানির বিষয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান প্রশাসন জিরো টলারেন্স নীতিতে অটুট থাকবে। যৌন হয়রানি প্রতিরোধকল্পে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন স্থানে অভিযোগ বক্স খোলা হবে এবং সচেতনতা সৃষ্টির জন্য প্রয়োজনে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে আরো কর্মশালার আয়োজন করা হবে।

তিনি বলেন, নির্ভয়ে অভিযোগ করুন, যৌন হয়রানির বিষয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান প্রশাসন জিরো টলারেন্স নীতিতে অটুট থাকবে। যৌন হয়রানি প্রতিরোধে বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান প্রশাসনের পক্ষ থেকে এ ধরণের অভিযোগসমূহকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে যথাযথ তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিম বলেন, উত্তরাধিকারসহ অনেক ক্ষেত্রেই নারীরা সম অধিকার থেকে পিছিয়ে রয়েছেন। কর্মক্ষেত্রেও সংখ্যার দিক থেকে নারীরা পিছিয়ে রয়েছেন। তিনি বলেন, কর্মক্ষেত্রে নারীদের নিরাপদ পরিবেশ সৃষ্টি করা অত্যন্ত জরুরি। যৌন হয়রানি শুধুমাত্র শারীরিক স্পর্শেই হয়ে থাকে তা নয়, বিভিন্ন ধরণের অশালীন, অনৈতিক অঙ্গভঙ্গির মাধ্যমেও হতে পারে। অন্যভাবেও নারীদের উপর নির্যাতন হতে পারে। যদি কোনো শিক্ষক তাঁর ছাত্রীকে পরীক্ষায় নম্বরের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে অনৈতিক প্রস্তাব দেয় সেটাও যৌন হয়রানির মধ্যে পড়ে। এসব বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সকলকেই অধিকতর সচেতন হতে হবে।

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়–য়া বলেন, বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির দায়েরকৃত রিটের জবাবে ২০০৯ সালের ১৪ মে হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি এবং বর্তমানে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মোহাম্মদ মাহমুদ হোসেন ও বিচারপতি কামরুল ইসলাম সিদ্দিকী কর্মক্ষেত্রে ও শিক্ষাক্ষেত্রে যৌন হয়রানি প্রতিরোধে একটি নির্দেশনামূলক রায় প্রদান করেন। সেই রায়ে হাইকোর্ট বিভাগের পক্ষ থেকে একটি পূর্ণাঙ্গ আইন প্রণয়ণেরও নির্দেশনা দেওয়া হয়। তবে যৌন হয়রানি প্রতিরোধে উচ্চ আদালতের সেই নির্দেশনা এখনো বেশিরভাগ মানুষ জানেন না। জনসচেতনতা সৃষ্টির মাধ্যমে যেনো হয়রানি প্রতিরোধে উচ্চ আদালতের সেই নির্দেশনাসমূহ মানুষকে জানানো জরুরি।

তিনি আরো বলেন, সংবাদপত্রে প্রকাশিত খবরের সূত্র ধরে দেখা যায়, ২০১৭ সালে ২৫৬টি যৌন হয়রানির ঘটনা ঘটেছে। ২০১৮ সালের প্রথম তিন মাসে ৫০টি যৌন হয়রানির ঘটনা ঘটেছে এবং ১ জন নারী আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়েছেন। মানুষ নিজেকে সবচাইতে বেশি ভালোবাসেন। মানুষ যখন যৌন হয়রানির জন্য আত্মহননের পথ বেছে নেন তখন বুঝতে হবে কতটা অপমানিত বোধ করলে একজন মানুষ এটা করে থাকেন। তাই যৌন হয়রানির ঘটনাগুলো অবহেলা না করে যৌন সহিংসতা বন্ধে এখন থেকে সবাইকে সচেতন হতে হবে ও যৌন হয়রানি প্রতিরোধে ঐক্যবদ্ধভাবে কার্যক্রম চালিয়ে যেতে হবে এবং কর্মক্ষেত্রে ও শিক্ষাক্ষেত্রে যৌন হয়রানি প্রতিরোধে উচ্চ আদালতের নির্দেশনামূলক রায়টি মানুষকে বেশি করে জানাতে হবে।

স্বাগত বক্তব্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ডিন ও কমপ্লেন্ট কমিটির সদস্য সচিব অধ্যাপক ডা. এম ইকবাল আর্সলান বলেন, কর্মস্থলে নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা জরুরি। নারীদের প্রতি সহিংসতা, যৌন হয়রানি বন্ধ না হলে বাংলাদেশ পিছিয়ে যাবে এবং অগ্রযাত্রা ব্যাহত হবে। তাই বাংলাদেশের চলমান অগ্রযাত্রাকে অব্যাহত রাখতে নারীর প্রতি যৌন হয়রানিসহ সকল ধরনের সহিংসতা বন্ধ করতে হবে।

এতে উপস্থিত ছিলেন বিএসএমএমইউর উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. শারফুদ্দিন আহমেদ, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আলী আসগর মোড়ল, সাবেক উপ-উপাচার্য অধ্যাপক মোহাম্মদ সহিদুল্লা, শিশু অনুষদের ডীন অধ্যাপক ডা. চৌধুরী ইয়াকুব জামাল, ডেন্টাল অনুষদের ডিন অধ্যাপক ডা. গাজী শামীম হাসান, নার্সিং অনুষদের ডিন অধ্যাপক ডা. অসীম রঞ্জন বড়–য়া, পরিচালক (হাসপাতাল) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আব্দুল্লাহ আল হারুন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সহযোগী অধ্যাপক ডা. জিল্লুর রহমান ভূঁইয়া, সহকারী পরিচালক (আইন ও এস্টেট) অ্যাডভোকেট তানিয়া আক্তার সহ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভাগীয় চেয়ারম্যানবৃন্দ, শিক্ষক-শিক্ষার্থীবৃন্দ ও অফিস প্রধানরা উপস্থিত ছিলেন।

ঢাকাটাইমস/৩১ জুলাই/এএ/ইএস

সংবাদটি শেয়ার করুন

নারীমেলা বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা