‘নৌমন্ত্রীর আচরণই শিক্ষার্থীদের ক্ষোভকে উস্কে দিয়েছে’
জাবালে নূর পরিবহনের বাসচাপায় রাজধানীর শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজের দুই শিক্ষার্থী নিহতের ঘটনা নিয়ে নৌমন্ত্রী শাহাজান খান মশকরা করেছেন বলে মনে করছেন সিনিয়র সাংবাদিক মাহফুজ উল্লাহ্। পরবর্তী সময়ে সমালোচনার মুখে মন্ত্রী যেভাবে ক্ষমা চেয়েছেন তাও ক্ষমা চাওয়ার মতো হয়নি বলে মনে করেন এই সিনিয়র সাংবাদিক। তার মতে, নৌমন্ত্রীর আচরণই শিক্ষার্থীদের ক্ষোভকে আরও উস্কে দিয়েছে।
মঙ্গলবার রাতে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল বাংলাভিশনের এক টকশো অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন সাংবাদিক মাহফুজ উল্লাহ্। জামিল আহমেদের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আলোচক হিসেবে আরও ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর তথ্য উপদেষ্টা ও সিনিয়র সাংবাদিক ইকবাল সোবহান চৌধুরী।
মাহফুজ উল্লাহ্ বলেন, ‘যে বিষয়টা এই ঘটনাটাকে আরও উস্কে দিয়েছে সেটা হলো নৌপরিবহণ মন্ত্রীর হাসি। তিনি এখানে অন্য দেশের উদাহরণ টানেন। কিন্তু সেখানে যে ভালো দিকগুলো আছে সেগুলো আমাদের এখানে নেই। ভারতে যে দুর্ঘটনা ঘটছে, আর এখানে যে দুর্ঘটনা ঘটছে, তা এক নয়।’
দুর্ঘটনার বিষয়টা নিয়ে নৌমন্ত্রী মশকরা ও উপহাস করেছেন মন্তব্য করে মাহফুজউল্লা বলেন, ভারতে ৩০ জন মারা যাক কিংবা ৩০০ জন মারা যাক, আর এখানে যদি ১০ জন সন্তানও মারা যায় সেটাই আমাদের কাছে বেশি কষ্টের।’
নৌমন্ত্রীর ক্ষমা চাওয়ার দিকটাও প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে বলে মনে করেন এই জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক। তিনি বলেন, ‘আমি ক্ষমা প্রার্থী’-এটা বললে কি তার জাত চলে যেত? তিনি যে মন-মানসিকতার লোক, তার সম্পর্কে ফেসবুকে যা লেখা হয়েছে, তা দেখে লজ্জায়-অপমানে তার কুঁকড়ে যাওয়া উচিত।’
চালকদের মানবিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে এই সাংবাদিক বলেন, ‘যারা চালকের আসনে বসেন তারা কি হৃদয়ের দিক থেকে একেবারেই নিষ্ঠুর? মানুষ মারবার জন্যই তারা চালকের আসনে বসেন? নাকি তাদের প্রয়োজনীয় অভিজ্ঞতা নাই? নাকি মালিকের অত্যাচার?’
২৯ জুলাইয়ের দুর্ঘটনায় দুই শিক্ষার্থী নিহত হওয়ার বিষয়টা মর্মান্তিক উল্লেখ করে সাংবাদিক মাহফুজউল্লাহ তিন দিন ধরে চলা ছাত্র আন্দোলনকে সমর্থন করেন। তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি, ছাত্রদের যে আন্দোলন সেটা ন্যায়সংগত প্রতিবাদ। কিন্তু তাদের সঙ্গে পুলিশ যে আচরণ করছে সেটা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। এটা মানুষের প্রতি অশ্রদ্ধা দেখানোর চূড়ান্ত বহিঃপ্রকাশ। আমাদের এখানে ট্রাফিক ব্যবস্থা প্রায় পুরোপুরি ভেঙে পড়ছে। আইনের যে প্রয়োগ সেটা নাই।’
প্রধানমন্ত্রীর তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরীও শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের দাবির প্রতি সমর্থন করেন। তিনি বলেন, ‘আমি দেখলাম, শিক্ষার্থীরা বিচার চায়। বিচার চাওয়ার অধিকার সবার আছে।’
চালকদের মনুষ্যত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলে তথ্য উপদেষ্টা বলেন, ‘এদের মনুষ্যত্ব আছে কি না আমি জানি না। র্যাবের পক্ষ থেকে যে তথ্য দেয়া হয়েছে তাতে বলা হয়েছে, তাদের কারোই নাকি ড্রাইভিং লাইসেন্স ছিল না।’
পরিবহণ খাতে নানা দুর্নীতি ও আর এই দুর্নীতিই চালকদের দুর্ঘটনাপ্রবণ করে তুলছে বলে মনে করেন তথ্য উপদেষ্টা। তিনি বলেন, ‘পরিবহণ খাতে বড় ধরনের দুর্নীতি হচ্ছে। বিভিন্ন জায়গায় তাদের পয়সা দিতে হয়। তাই তাদের ভেতরে একটা বেপরোয়া ভাব চলে আসে। তারা মনে করে, এখানেও পয়সা দিয়ে পার পেয়ে যাবে।’
সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী যে নির্দেশনা দিয়েছেন, তা বাস্তবায়িত হলে সড়ক দুর্ঘটনা বন্ধ হবে উল্লেখ করে এই জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে একটি নির্দেশ দেয়া হয়েছে। অপ্রাপ্তবয়স্ক চালক ও লাইসেন্স ছাড়া যারা আছেন, তাদের বিরুদ্ধে পুলিশকে ও বিআরটিএকে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। পুলিশের সামনে দিয়ে এ ঘটনা ঘটছে, এ ধরনের প্রতিযোগিতা হচ্ছে, এই সময় তাদের থামিয়ে লাইসেন্স দেখা, গাড়ির ফিটনেস দেখা। যদি এটা শুরু করা হয়, তাহলে অন্তত ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটবে না।
(ঢাকাটাইমস/১আগষ্ট/কারই/মোআ)