‘নৌমন্ত্রী কনফ্লিক্ট অব ইন্টারেস্টে পড়ে গেছেন’

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ০৩ আগস্ট ২০১৮, ১৮:০৩

নৌমন্ত্রী শাজাহান খান কনফ্লিক্ট অব ইন্টারেস্টের মধ্যে পড়ে গেছেন বলে মনে করেন সাবেক নির্বাচন কমিশনার ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) সাখাওয়াত হোসেন। তিনি বলেন, সাংবিধানিক পোস্টটা এক রকম। আপনি মন্ত্রিত্ব গ্রহণ করার পরে সাধারণত ধরা হয় ওইটাই আপনার প্রধান কাজ। অন্য জায়গায় গেলে তখন কনফ্লিক্ট অব ইন্টারেস্ট হবে।

শুক্রবার চ্যানেল আইয়ের ‘আজকের সংবাদপত্র’ আলোচনায় অংশ নিয়ে এসব কথা বলেন সাবেক এই নির্বাচন কমিশনার। দৈনিক মানবজমিনের প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন।

শ্রমিক ফেডারেশন ও মন্ত্রী দুটি একসঙ্গে চলতে পারে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘নৌমন্ত্রী নৌপথের লেবারদের সমস্যার কথা বলতেই পারেন, শুনতেই পারেন। কারণ তিনি এই সেক্টরের মিনিস্টার। কিন্তু সড়ক-জনপথ তো সড়ক ও জনপথের কাজ। এটা তো ওনার কাজ না। এটা তো ডেফিনিটলি কনফ্লিক্ট অব ইন্টারেস্ট।’

‘ওনারা মন্ত্রী হলেন। আবার লেবার লিডার। তাহলে আপনারা মন্ত্রী হলেন কেন? বলা হয় নৌমন্ত্রী এবং মসিউর রহমান রাঙ্গা পরিবহন ব্যবস্থায় লিডারশিপে আছেন। কাজেই এখানে তো কনফ্লিক্ট অব ইন্টারেস্ট হবে। এটা কোয়াইট নেচারাল।’

জেনারেল সাখাওয়াত বলেন, ‘এটা নিয়ে সরকারকে চিন্তা করতে হবে। যারা মন্ত্রী হলেন তাদের যেন আর কোনো কনফ্লিক্ট অব ইন্টারেস্ট না থাকে।’

পদত্যাগ-সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে সাবেক নির্বাচন কমিশনার বলেন, ‘এটা তো ডিপেন করে প্রধানমন্ত্রীর ওপর। তার মন্ত্রিসভা। কদিন আগে আমরা দেখেছি নেপালে আইনমন্ত্রী এক মন্তব্যের পর ক্ষমা চেয়ে পদত্যাগ করেছেন।’

‘কিন্তু আমাদের দেশে তো এই কালচার নেই। তবে এটাও প্রধানমন্ত্রীর- কাকে মন্ত্রী রাখবেন, কাকে রাখবেন না। এটা ওনার কেবিনেট। ওনার কেবিনেটে কে অপরিহার্য আর কে না সেটা উনি ভালো জানেন। কনফ্লিক্ট অব ইন্টারেস্টের ব্যাপারটি ডেফিনিটলি আসে। বিষয়টি নিয়ে রিট হয়েছে। এটা কোর্টে চলে গেছে। এটা এখন কি হবে আমি জানি না। তবে এটা না হলে ভালো।’

চলমান ছাত্র আন্দোলন নিয়ে সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘মিশুক-মনির সড়ক দুর্ঘটনায় পড়ার পর থেকেই কিন্তু বলা হচ্ছে লাইসেন্সগুলো কাদের দেয়া হয়? তখন এটা নিয়ে কেউ যে সিরিয়াস ছিল সেটা কিন্তু মনে হয় না। আমাদের নৌমন্ত্রী কিন্তু পরিবহন খাতেরও একজন নেতা। তাকে নিয়ে অনেক কথা হচ্ছে। তখন থেকেই কিন্তু বিষয়টি সিরিয়াসলি নেয়া হয়নি। আমাদের দেশের যে লাইসেন্সিং ব্যবস্থা এবং যাদের লাইসেন্স দেয়া হয় তারা আদৌ লাইসেন্স পাওয়ার যোগ্য কি না। ট্রেনিং ইনস্টিটিউট আছে কি না। সরকারি একটা-দুইটা ট্রেনিং ইনস্টিটিউট আছে। তারও ধারণক্ষমতা খুবই কম। আর প্রাইভেটলি সেই রকম বড় ধরনের ট্রেনিং ইনস্টিটিউট নেই। বাইরের দেশে আপনাকে লাইসেন্স পেতে হলে ট্রেনিংয়ের একটা মাত্রা আছে। টেস্টিং হয়। টেস্টিংয়ে আবার অনেকে পারে, অনেকে পারে না, আবার ফেরত যায়। আমাদের দেশে এই সিস্টেমটা এখনো হয়নি।’

তিনি বলেন, ‘পত্রিকায় দেখলাম ১১-১২ বছরের ছেলে বাস চালাচ্ছে। বাস মালিকরা এ ধরনের অ্যাপয়েন্টমেন্ট দিচ্ছে। এ জন্য আমি শুধু মালিকদের দোষ দিব না, পুরো সিস্টেমটাই দায়ী। বিআরটিএ থেকে শুরু করে পুরো সিস্টেমটা যদি সঠিকভাবে ব্যবস্থাপনা করে স্ট্রিকটলি মানা হতো তাহলে এই সমস্যা হতো না। যারা লাইসেন্সিং অথরিটি এবং পুলিশিং ব্যবস্থার মাধ্যমে কিন্তু ১১ বছরের ছেলের হাতে লাইসেন্স যেত না।’

‘পৃথিবীর যেকোনো শহরে যান। শহরের ভেতরে কিন্তু দুর্ঘটনা কম ঘটে। কারণ এখানে স্পিডের জায়গাই নেই। লিমিটেড স্পিড থাকে। আর ঢাকা শহরে তো গাড়ি চলে কি চলে না, সেখানেও কী অবস্থা! আগে আমরা মনে করতাম মহাসড়কে ট্রাক বেশি হওয়ার কারণে দু-একটি অ্যাকসিডেন্ট হতো একসময়। এখন বাসের অবস্থা দেখেন। ঢাকা শহরের রাজপথের বাসগুলো দেখেন। বিশেষ করে যেখানে একটু ফাঁকা পায় সেখানে তিন-চারটা বাস একত্রে যায় পাল্লা দিয়া। প্রোপার বাসস্ট্যান্ড নেই। মোড়ের ভেতরে মানুষ দাঁড়ায়। বাসও দাঁড়ায়। বাস যদি বলে আমি স্ট্যান্ড ছাড়া লোকজন উঠাব না, তাহলে তো আর মানুষ ওভাবে দাঁড়াবে না। সব মিলিয়ে একটা নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি আছে পরিবহন খাতে।’

‘আর আমাদের আইনটা হচ্ছে একজন মানুষ সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেলে দায়ী ব্যক্তির শাস্তি দুই বছর। ‍দুই বছর শাস্তি দিয়া তো আপনি এগুলো কনট্রোল করতে পারবেন না। এখন যেটা দেখা যাচ্ছে বেশির ভাগ লোকেরই লাইসেন্স ভুয়া। লাইসেন্স নাই অনেকের। সেখানে পুরো সিস্টেমটাকে ওভার অল না করলে তো সমস্যা ঠিক হবে না।’

‘ট্রাফিক পুলিশের কথাও অনেক সময় বাসচালকরা শুনছেন না। কারণ বাসগুলোর মালিক প্রভাবশালীরা। আজকে আমি রাস্তায় নামার পর দেখলাম পাঁচ-ছয় জাগায় আমার গাড়ির কাগজ চেক হয়েছে। এটা তো পুলিশের করার কথা। আবার পুলিশের গাড়ির লাইসেন্স নাই। সরকারি গাড়ির নেই। মন্ত্রীদের নেই। এমপিদের নেই। এই অবস্থায় সবার দায়িত্ব আছে। আমি যদি আমার ড্রাইভারকে বলি আমি তোমার লাইসেন্স দেখব। তোমার লাইসেন্স আপডেট আছে কি না। তোমার লাইসেন্স কি এক নম্বর না দুই নম্বর। এগুলোতে একটা নাগরিক দায়িত্ব আছে। সেগুলো তো আমরা করছি না।’

সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘এসব নিয়ে সরকারকে চিন্তা করতে হবে। ছাত্ররা আন্দোলন করছে। তাদের দাবি কিন্তু খুবই সিম্পল। আমাদের চিন্তা করতে হবে হাউ টু ম্যানেজ ট্রান্সপোর্ট সিস্টেম অব ঢাকা। এই সরকার তো অনেক কিছু করছে। ফ্লাইওভার হচ্ছে। মেট্রোরেল হচ্ছে। অনেক কিছুই হচ্ছে। সেটার ফল পেতে আরও সময় লাগবে। কিন্তু এর মধ্যে কী করা যায়। শুনলাম বাসের জন্য এলাদা লেন করা হবে। আমাদের রাস্তার যে অবস্থা বাসের জন্য আলাদা লেন করাও মুশকিল। লেন করলে সেখানে ডিসিপ্লিন আনতে হবে। বাস একটা একটা করে ওভারটেক করবে।’

‘সবচেয়ে বড় কথা হলো শিক্ষার্থীরা রাস্তায় নেমেছে। এটাকে সিরিয়াসলি নিয়ে বিষয়গুলো ইমিডিয়েট অ্যাড্রেস করা উচিত। নৌমন্ত্রী ক্ষমা চেয়েছেন। ওনার এই ধরনের কথা বলা উচিত ছিল না। উনি অত্যন্ত দায়িত্বশীল মন্ত্রী। পুরনো রাজনীতিবিদ। এমন না যে উনি নতুন রাজনীতিবিদ। সবকিছু মিলিয়ে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়েছে। তবে আমি আশা করবে পরিস্থিতি যেন বিশৃঙ্খলার মধ্যে যেন না যায়। সবকিছুকেই যেন যৌক্তিকভাবে দেখা হয়।’

সাখাওয়াত বলেন, ‘যদিও এখানে বলা হয়েছে প্রধানমন্ত্রী অনেক দাবি মেনে নিয়েছেন। ওখানে আন্ডারপাস নির্মাণ, ট্রাফিক নিয়োগ, স্পিড ব্রেকারের কথা বলেছেন। সেগুলো সবই তিনি বলেছেন। এখন এগুলোর উদ্যোগ নিতে হবে অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ লেভেল। সেই উদ্যোগগুলো অনেক সময় আমরা দেখি এ ধরনের কিছু হলে। আবার আস্তে আস্তে থেমে যায়। এই উদ্যোগগুলো যাতে কার্যকর হয় এবং দৃশ্যমান হয় ইমিডিয়েটলি।’

সড়কে বাসশ্রমিকদের আচরণের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে সাবেক এই সেনা কর্মকর্তা বলেন, ‘রাস্তায় নামলে একটি শব্দ শোনা যায়- প্লাস্টিক প্লাস্টিক। বাসের হেলপাররা এটা বলে। মনে হয় রাস্তায় তারাই থাকবে। তারা কিং। আর সবাইকে রাস্তা থেকে উঠে যেতে হবে। কী অদ্ভুত! তারা হেলপারি করে। ওস্তাদ (চালক) সিট থেকে উঠলে হেলপার গাড়ি চালান শুরু করে। কোনো ধরনের ট্রেনিং নেই। কিছুই নেই। এদের জন্য ভোকেশনাল ট্রেনিং হওয়া দরকার। এত স্ট্যান্ডার্ড হলে তুমি এই লাইনে যেতে পারবে।’

জেনারেল সাখাওয়াত বলেন, সড়কে নৈরাজ্য কোনো রাজনৈতিক সমস্যা নয়। এটা একটা নাগরিক সমস্যা। এটা এখন সামাজিক সমস্যা হয়ে গেছে। প্রতিদিন এসব ঘটছে। সুতরাং এটাকে অত্যন্ত গুরুত্বসকারে নিয়ে সমাধান করতে হবে।’

(ঢাকাটাইমস/৩আগস্ট/এমএম/মোআ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

মতামত বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :