মাদারীপুরে পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের তাণ্ডব, আতঙ্ক

মাদারীপুর প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ০৩ আগস্ট ২০১৮, ১৭:৫৯

মাদারীপুরে অঘোষিত পরিবহন ধর্মঘটের পাশাপাশি সড়কে তাণ্ডব চালিয়েছেন পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা। শুক্রবার সকাল থেকে অভ্যন্তরীণ রুটসহ দূরপাল্লার সব পরিবহন বন্ধ রেখে রাস্তায় আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করেছেন তারা। কোথাও কোথাও গাড়ি ভাঙচুর ও ছোট ছোট পরিবহন থেকে যাত্রীদের নামিয়ে দিলে সাধারণ মানুষের মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।

রিকশা, অটোভ্যানসহ কোনো ধরনের যানবাহন চলাচল করতে দেননি শ্রমিকরা। ফলে চরম দুর্ভোগে পড়ে সাধারণ যাত্রীরা।

পরে মাদারীপুর জেলা প্রশাসন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার প্রতিনিধিদের নিয়ে জরুরি বৈঠক করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে।

পরিবহন মালিক-শ্রমিক নেতাদের দাবি, ঢাকায় বিভিন্ন পরিবহন ভাঙচুর করছে শিক্ষার্থীরা। এতে শ্রমিক ও মালিকদের জানমালের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। এ কারণে মাদারীপুর থেকে সব ধরনের দূরপাল্লার পরিবহন এক দিন বন্ধ রাখা হয়। এরপর শুক্রবার সকাল থেকে কেন্দ্রীয় শ্রমিক ফেডারেশনের নির্দেশমতো সব ধরনের পরিবহন বন্ধ রয়েছে।

শ্রমিকরা বলেন, দুই শিক্ষার্থী নিহত হওয়ার ঘটনায় নৌপরিবহন মন্ত্রী ও শ্রমিক ফেডারেশনের কার্যকরী সভাপতি শাজাহান খানের সম্পৃক্ততা না থাকা সত্ত্বে¡ও তার পদত্যাগ দাবি করা হচ্ছে, যা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক। তবু মন্ত্রী শিক্ষার্থীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ক্ষমা চেয়েছেন। কিন্তু তৃতীয় কোনো শক্তির জন্য ঢাকাতে পরিবহন খাতে অরাজকতা সৃষ্টি করা হয়েছে। এসব কারণে অনির্দিষ্টকালের জন্য যানবাহন চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, সকাল ১০টার দিকে মাদারীপুর শহরের পুরাতন বাসস্ট্যান্ড এলাকায় রাস্তায় গাছের গুঁড়িতে আগুন জ্বালিয়ে ব্যাপক তা-ব চালান শ্রমিকরা। রাস্তা দিয়ে কোনো ধরনের রিকশা, ভ্যান, অটোরিকশা, মোটরসাইকেল চলাচল করতে দেয়া হয় না। এ সময় ছবি তুলতে গেলে সাংবাদিকরা শ্রমিকদের তোপের মুখে পড়েন।

রিকশা-অটোরিকশা এলে বাঁশের লাঠি, ছোট রড হাতে শ্রমিকরা তা আটকে যাত্রীদের নামিয়ে দেন। কেউ এ ব্যাপারে জানতে চাইলে হেনস্থা হতে হয় যাত্রীদের। কোনো ঘোষণা ছাড়াই দূরপাল্লাসহ সব ধরনের পরিবহন বন্ধ রাখায় দুর্ভোগে পড়ে সাধারণ যাত্রীরা।

সদর উপজেলার কুনিয়া এলাকার উজ্জ্বল হাওলাদার নামে এক যাত্রী বলেন, ‘আমি জানতাম না পরিবহন বন্ধ। পরে অটোরিকশায় মস্তফাপুর যাচ্ছিলাম। কিন্তু শ্রমিকরা অটোরিকশাটি ভেঙে ফেলে। আমাদের খুব বাজে ভাষা ব্যবহার করে। শ্রমিকদের দাবি-দাওয়া থাকলে সেটা প্রশাসন দেখবে। আমাদের ওপর এমন তা-ব কেন?’

মাদারীপুর পুরাতন বাসস্ট্যান্ড এলাকা

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে মাদারীপুর সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান হাওলাদার বলেন, ‘আমাদের কার্যকরী সভাপতি নৌমন্ত্রী শাজাহান খানের নামে যে অপবাদ দিয়ে তৃতীয় পক্ষ সুযোগ নিচ্ছে, তা আমরা হতে দেব না। কেন্দ্রীয় নেতাদের আদেশে আমরা মাদারীপুর জেলায় সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ রেখেছি। সমস্যা সমাধান না হওয়া পর্যন্ত এই অবরোধ চলবে।’

এ ব্যাপারে মাদারীপুর জেলা বাস-মিনিবাস মালিক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক মফিজুল ইসলাম হাওলাদার বলেন, ‘আমাদের কোনো কোনো পরিবহনের দাম ৩০ থেকে ৮০ লাখ টাকা। যদি এই পরিস্থিতিতে পরিবহন ছাড়া হয়, কোনো ক্ষতি হলে কেউ পুষিয়ে দেবে না। তাই নিরাপত্তার কারণে আমরা মালিক গ্রুপ সিদ্ধান্ত নিয়েছি পরিবহন বন্ধ থাকবে।’

আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি বর্তমানে স্বাভাবিক আছে বলে জানান মাদারীপুর সদর থানার ওসি কামরুল হাসান। তিনি বলেন, ‘সকালে কিছুটা ঝামেলা হলেও দুপুরের পর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে। সড়কের গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়ন করা হয়েছে।’

উদ্ভূত পরিস্থিতি নিরসনে বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবক, শ্রমিক ইউনিয়ন, মালিক সমিতির সঙ্গে শুক্রবার সকাল ১০টায় বৈঠক করেন বলে জানান জেলা প্রশাসক মো. ওয়াহিদুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘তারা সবাই কথা দিয়েছে, কোনো ধরনের অপ্রীতিকর কিছু করবে না। তারপরেও যদি কেউ অন্যায় করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’ দুপুরের পর থেকে পরিবেশ শান্ত আছে বলে জানান তিনি।

(ঢাকাটাইমস/৩আগস্ট/মোআ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :