ইউরোপের অভিবাসী রাজনীতি

মোহাম্মদ জমির
 | প্রকাশিত : ০৫ আগস্ট ২০১৮, ১৩:৫১

অননুমোদিত পথে এক দেশ থেকে আরেক দেশে যাওয়ার বিষয়টি অবৈধ অভিবাসন হিসেবে পরিচিত। এর মাধ্যমে আসলে অভিবাসন আইন লঙ্ঘিত হয়। কেউ ব্যক্তিগতভাবে, কেউবা সপরিবারে দেশ ছেড়ে অন্য দেশে যাওয়ার চেষ্টা করে। এদের বড় একটি অংশই বেআইনি পথ অবলম্বন করে থাকে। এভাবে তারা প্রথমে লক্ষ্যে থাকা রাষ্ট্রে প্রবেশ করে। পরে সেখানে নাগরিকত্ব বা অবস্থানের জন্য আবেদন করে। কখনো তা গ্রহণ করা হয়। কখনো আবার তাদের নিজ দেশে ফিরতে বাধ্য করা হয়। অবৈধ অভিবাসীদের কোনো কোনো রাষ্ট্র গ্রহণ করে। তাদের বসবাসের সাময়িক অনুমতি দেয়। এক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক রিফিউজি কনভেনশন অনুযায়ী যারা সত্যি সত্যি বিপদে পড়ে দেশ ছাড়তে বাধ্য হন, তারাই অগ্রাধিকার পান।

এক পরিসংখ্যান থেকে জানা গেছে, পৃথিবীতে প্রতিদিন প্রায় ৩৪ হাজার মানুষ প্রাকৃতিক ও মনুষ্যসৃষ্ট বিপর্যয়ের কারণে ঘর ছাড়তে বাধ্য হয়। শুধু গত ছয় মাসে ভূমধ্যসাগরে দুই হাজারের বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। জুনের শেষ সপ্তাহে ১২ হাজার ৬০০ অভিবাসী সমুদ্র পাড়ি দিয়ে ইতালিতে এসে পৌঁছায়। মধ্যপ্রাচ্য, আফ্রিকা ও ইউরোপের দেশগুলো রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক চাপে জেরবার হয়ে যাচ্ছে, যেখানে এই অভিবাসীদের গন্তব্য ইউরোপ।

আমরা জানি, ইউরোপের অনেক দেশই নিজেদের মধ্যে সীমান্ত অবাধ রেখেছে। বিশেষ করে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সদস্য দেশগুলোর নাগরিকরা একে অপরের দেশে অবাধ যাতায়াত করতে পারেন, পাকাপাকি বসবাস করতে পারেন, উপার্জন করতে পারেন এমনকি পৌর নির্বাচনে ভোটও দিতে পারেন। সেংজেন চুক্তির কল্যাণে বিদেশিরাও ইইউভুক্ত বেশিরভাগ দেশেই অবাধ যাতায়াত করতে পারেন। অথচ এই সীমানাবিহীন ইউরোপ সত্ত্বেও অভিবাসন নীতির ক্ষেত্রে এতদিন প্রতিটি দেশ নিজস্ব পথে এগিয়ে চলেছে। রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থীদের ক্ষেত্রেও একই রকমের বিচ্ছিন্ন নীতি প্রণয়ন করা হয়েছে। এই জটিল পরিস্থিতির ফলে বাস্তবে বিদেশি সংক্রান্ত নীতির ক্ষেত্রে অচলাবস্থা কিছুতেই কাটছে না।

অভিবাসী ও রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থী ছাড়াও ইউরোপে প্রতি বছর বেআইনি পথে আসা অনুপ্রবেশকারীর সংখ্যাও কম নয়। বৈধ কাগজপত্র ছাড়াই এই সব মানুষ মরিয়া হয়ে জীবন ধারণের সংগ্রাম চালিয়ে যান। অতি কম মজুরিতে তারা বিভিন্ন ক্ষেত্রে কাজ করেন। বলাই বাহুল্য, ন্যূনতম মজুরি, স্বাস্থ্য বিমা ইত্যাদি সুযোগ-সুবিধা থেকে তারা বঞ্চিত থাকেন। যারা তাদের কাজে লাগায়, তাদেরও এর ফলে বিশাল সুবিধা হয়। মাঝেমধ্যে পুলিশ ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ধরপাকড় চালালেও এই প্রবণতা চলেই আসছে। শ্রমের এই কালোবাজার সম্পর্কে স্পষ্ট তথ্য বা পরিসংখ্যান না থাকলেও অর্থনীতিবিদরা এ বিষয়ে মোটামুটি একমত যে, এই বেআইনি শ্রমিক ছাড়া অর্থনীতির বেশ কয়েকটি ক্ষেত্র প্রতিযোগিতার বাজারে টিকে থাকতে পারত না। বিশেষ করে বড় আকারের নির্মাণ প্রকল্পে এই অবৈধ শ্রমিকদের প্রায়ই দেখা যায়। প্রতিটি শ্রমিককে ন্যূনতম মজুরি ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা দিলে নির্মাণ সংস্থার পক্ষে কাজ পাওয়াই কঠিন হয়ে পড়ত।

যারা সত্যিকারের শরণার্থী তাদের বেলায় সব দেশকেই আলাদা বিবেচনা নিতে হয়। এর জন্যই ১৯৫১ সালে জাতিসংঘ কর্তৃক শরণার্থীদের মর্যাদাবিষয়ক সম্মেলনে অনুচ্ছেদ ১ এ-তে সংক্ষিপ্ত আকারে শরণার্থীর সংজ্ঞা তুলে ধরা হয়। সেখানে বলা হয়েছে, একজন ব্যক্তি যদি গভীরভাবে উপলব্ধি করেন ও দেখতে পান যে, তিনি জাতিগত সহিংসতা, ধর্মীয় উন্মাদনা, জাতীয়তাবোধ, রাজনৈতিক আদর্শ, সমাজবদ্ধ জনগোষ্ঠীর সদস্য হওয়ায় তাকে ওই দেশের নাগরিকের অধিকার থেকে দূরে সরানো হচ্ছে; সেখানে ব্যাপক ভয়-ভীতিকর পরিবেশ বিদ্যমান এবং রাষ্ট্র তাকে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হচ্ছে; তখনই তিনি শরণার্থী হিসেবে বিবেচিত হন। ১৯৬৭ সালের সম্মেলনের খসড়া দলিলে উদ্বাস্তুর সংজ্ঞাকে বিস্তৃত করা হয়। আফ্রিকা ও লাতিন আমেরিকায় অনুষ্ঠিত আঞ্চলিক সম্মেলনে যুদ্ধ এবং অন্যান্য সহিংসতায় আক্রান্ত ব্যক্তি কর্তৃক নিজ দেশত্যাগ করাকেও এর অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এই সংজ্ঞায় শরণার্থীকে প্রায়ই ভাসমান ব্যক্তিরূপে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। সম্মেলনে গৃহীত সংজ্ঞার বাইরে থেকে যদি যুদ্ধের কারণে নির্যাতন-নিপীড়নে আক্রান্ত না হয়েও মাতৃভূমি পরিত্যাগ করেন অথবা জোরপূর্বক নিজ ভূমি থেকে বিতাড়িত হন, তা হলে তারা শরণার্থী হিসেবে বিবেচিত হবেন। গত কয়েক বছরে সিরিয়ার বাস্তুচ্যুতদের আশ্রয় দিতে জার্মানি যতটা সদয় হয়েছে, অন্যরা ততটা হয়নি। বিশেষ করে পূর্ব ইউরোপের দেশগুলো এক্ষেত্রে বেশি কঠোর অবস্থান নিয়েছে।

যেখানে জার্মানি বা সুইডেন উদারভাবে রিফিউজিদের নিতে হাত বাড়াচ্ছে, সেখানে পূর্ব ইউরোপের এই কঠোর মনোভাব কেন? খতিয়ে দেখলে বোঝা যায়, প্রাক্তন কমিউনিস্ট দেশগুলোর অনেকেই বর্তমানে নানাভাবে সংকটে। ক্ষমতা কয়েকজনের হাতে কুক্ষিগত, দুর্নীতিতে হাবুডুবু খাচ্ছে, স্বজনপোষণ- কোনো কিছুই বাকি নেই। তার ওপর জুড়েছে আর্থিক সমস্যা। ইউরো ও গ্রিসকে নিয়ে কিছুদিন আগেও ইউরোপের হাওয়া গরম ছিল। তার ওপর এই দেশগুলোয় বৈচিত্র্য খুবই কম এবং তারা মোটেই পশ্চিম এশিয়া ও আফ্রিকার ‘বিজাতীয়’ রিফিউজিদের আশ্রয় দিয়ে দেশের চরিত্র পাল্টাতে আগ্রহী নয়। সাংস্কৃতিক উদারতা একেবারে নেই বললেই চলে, তার ওপর বেশি রিফিউজিকে আশ্রয় দেওয়ার মতো কোনো পরিকাঠামো নেই বলে পোল্যান্ড ও হাঙ্গেরির অনেক বিশেষজ্ঞ দাবি করছেন। তাদের মত, মধ্য এশিয়ার দেশগুলোতে ডামাডোলের জন্য আমরা দায়ী নই, ফলে আমরা বেকার চাপ কেন নেব? ফলে রিফিউজিদের প্রতি তাদের মনোভাবও কঠোর হচ্ছে। ভিক্টর অরবানের দাবিকে এখানেই নস্যাৎ করা যায়। সুইডেন বা ফিনল্যান্ডের মতো স্ক্যান্ডিনেভিয়ার দেশগুলোতে রিফিউজি কমিউনিটির অবস্থা যথেষ্ট ভালো, সমাজকল্যাণমূলক পরিকাঠামো বেশ উন্নত, চাকরি-বাকরি পাওয়াও সুবিধের। জার্মানিতেই সেরকমই ব্যবস্থা আছে, তার ওপর জার্মান চ্যান্সেলর উদারতা দেখানোয় নজির তৈরি করেছেন। ফলে ট্রেনের লাইন ক্রমেই বাড়ছে, সীমান্ত টপকানোর হিড়িকও, যার ফলে সেংজেন-ব্যবস্থা ভেঙে পড়তে পারে বলে অনেকের আশঙ্কা।

এই রিফিউজিদের ঢল আজকের নতুন নয়। মধ্য এশিয়া, পশ্চিম এশিয়া ও আফ্রিকায় চলা দীর্ঘকালীন নানা যুদ্ধের ফলে রিফিউজি সংকট বহুদিন ধরেই ইউরোপে ছিল। আজকের যে মানুষের মিছিল নামছে ইউরোপের দেশে দেশে, তার কারণও এটাই, মধ্যপ্রাচ্য, মধ্য এশিয়া ও আফ্রিকাজুড়ে চলা নানা ছোট-বড় গৃহযুদ্ধ ও একনায়কতন্ত্র। আইএসআইএস, বোকো হারাম ইত্যাদি জঙ্গি সংগঠনের নাম তো সবাই জানে। মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে প্রাণ বাঁচাতে দেশ ছেড়ে পালাচ্ছে, আশ্রয় চাইছে ইউরোপে।

এদিকে ইউরোপীয় ইউনিয়ন চায়, সব দেশ সমানভাবে রিফিউজিদের গ্রহণ করুক। দ্য ওয়াশিংটন পোস্টে এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যারা মানবতার পক্ষে বেশি ঢোল পিটিয়েছেন, তাদের বলব, ইউরোপের ঘাড়ে সব দায় চাপিয়ে দেওয়া উচিত নয়। পৃথিবীর অন্যরা শরণার্থী নিতে অনিচ্ছুক। আরও সমস্যা বাড়িয়েছে রিফিউজি সংক্রান্ত আইন ডাবলিন রেগুলেশন। এই আইন অনুযায়ী, কোনো ব্যক্তি আশ্রয় চেয়ে প্রথম যে দেশে পা রাখবেন, সেখানে থাকার আবেদন মঞ্জুর হওয়া বা না হওয়া অবধি তাকে সেখানেই থাকতে হবে। এতেই চটেছে ভূমধ্যসাগরের উপকূলের দেশগুলো। স্বাভাবিকভাবেই সেসব দেশেই মানুষ আগে আসছে, তীরবর্তী বলে, তাই তাদের ঘাড়েই বোঝা বাড়ছে।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে বৃহত্তম গত কয়েক বছরে সৃষ্ট রিফিউজি সমস্যার আশু সমাধানের এখনো কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। ইংল্যান্ড এবং আমেরিকার মতো দুই মহাশক্তিধর দেশ এখনো কার্যকর কোনো উদ্যোগ নেয়নি। জার্মানি ও সুইডেনের মতো শরণার্থীদের প্রতি হাত বাড়ায়নি ইউরোপের অন্য দেশগুলোও। বাকিরা ঠেলাঠেলির মধ্যে আছে। যুক্তরাজ্য ফ্রান্সকে বলছে রিফিউজি পাঠাইও না, ফ্রান্স ইতালিকে, ইতালি হাঙ্গেরিকে, হাঙ্গেরি গ্রিসকে। ফ্রান্স অবশ্য শেষ পর্যন্ত কঠোর অবস্থান থেকে নেমে কিছুটা কোমল অবস্থান নিয়েছে।

এবারের জুনে অভিবাসন নিয়ে ইউরোপ থেকে আরো একটি সুখবর এসেছে। এটি হচ্ছে, অভিবাসন ইস্যুতে একই মতে আসতে পেরেছেন ইইউ নেতারা। এবারের ব্রাসেলসের সম্মেলনে তারা এতে সম্মত হয়েছেন। দীর্ঘ ১০ ঘণ্টা আলোচনার পর তারা এ ইস্যুতে একটি চুক্তি করতে রাজি হলেন। ইউরোপিয়ান কাউন্সিলের সভাপতি ডোনাল্ড টাস্ক আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেছেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের ২৮টি দেশের নেতারা অভিবাসনসহ অনেক ইস্যুতে সম্মত হয়েছেন। ইউরোপে অভিবাসী প্রবেশ নিয়ে সাম্প্রতিক সময়ে বেশ আলোচনার সৃষ্টি হয়েছে। আর ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোতে ফ্রি ট্রাভেল সুবিধা থাকায় অভিবাসীদের চাপও বাড়ছে। এর আগে অভিবাসন, বাণিজ্য ও নিরাপত্তা ইস্যুতে কোনো চুক্তির বিষয়ে ইতালি প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়িয়েছিল। গত ২৮ জুন থেকে দুদিনের জন্য এ বৈঠক শুরু হয়। বৈঠকে জার্মানি অভিবাসন ইস্যুতে আলোচনার জন্য জোর দেয়। জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঞ্জেলা মার্কেল অভিবাসন ইস্যুকে ইউনিয়নের ‘তৈরি অথবা ভাঙা’ হিসেবেও উল্লেখ করেন। মার্কেল বরাবরই অভিবাসীদের প্রতি সহনশীল, তা বারবার প্রমাণিত হয়েছে।

গত কয়েক বছরে ইউরোপ জার্মানির পরই সুইডেন অভিবাসীদের আশ্রয় দিয়ে প্রশংসিত হয়েছে। সেই তারা কী এখন অভিবাসন কঠিন করে দিচ্ছে? আমরা জানি, বহুদিন ধরেই সুইডেন খুব সহনশীল একটা দেশ কিন্তু এখন পরিস্থিতি পাল্টেছে। গত সেপ্টেম্বরে দেশটির সাধারণ নির্বাচনে অভিবাসনই ছিল গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু। অভিবাসনবিরোধী সুইডেন ডেমোক্রেটদের সমর্থন বেড়ে ২২ দশমিক ৪ শতাংশে দাঁড়ায়, যেখানে আগের নির্বাচনে ২০১৪ সাল তাদের সমর্থন ছিল প্রায় ১৩ শতাংশের মতো। সেখানে এখন বেশিরভাগ দলই নতুন অভিবাসীদের ফেরত পাঠাতে চায়। তারা সীমান্ত বন্ধ করে দিতে চায়। তারা অভিবাসীদের জন্য নীতি আরো কঠিন করে দিতে চায়। যেহেতু এই অভিবাসীদের বাসাবাড়ি নেই তাই তাদের গোপন স্থানে চলে যেতে হয় ও পালিয়ে থাকতে হয়। ২০১৫ সালে অভিবাসন সংকটের জের ধরে আশ্রয়প্রার্থীর সংখ্যা রেকর্ড পরিমাণ বেড়ে যায়। সুইডেনও সীমান্তে কড়াকড়ি শুরু করে। আশ্রয়প্রার্থীদের একটা বড় অংশের আবেদনও প্রত্যাখ্যান করতে শুরু করে দেশটি। দেখা গেছে, ২০১৭ সাল থেকে আফগান আশ্রয়প্রার্থীদের ৬০ ভাগেরই আবেদন প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে। অথচ ২০১৫ সালেও এই হার ছিল মাত্র ১২ শতাংশ। সুইডিশ মাইগ্রেশন বোর্ডের কর্মকর্তা কার্ল বেক্সেলিয়াস গণমাধ্যমে বলেছেন, ‘আফগানিস্তানের কিছু প্রদেশে আপনি ফিরতে পারবেন না আমরা জানি। সেখানে ঝুঁকি আছে। কিন্তু প্রশ্ন হলো আপনি কি দেশটির অন্য কোনো অংশে ফিরতে পারেন? আর সেটাই রেসিডেন্ট পারমিট বা সুইডেনে আশ্রয়ের সুযোগ না দেওয়ার একটা বড় কারণ। আমরা বলছি তুমি একটি প্রদেশ থেকে এসেছ যেখানে অনেক সহিংসতা হয় কিন্তু তুমি আফগানিস্তানের অন্য অংশে ফিরতে পার, যেখানে সহিংসতার ঝুঁকি কম।’

অনেকে বসবাসের অনুমতি না পেয়েও জীবনের ঝুঁকি কিংবা উন্নত জীবনের জন্য গোপনে হলেও থেকে যাওয়ার চেষ্টা করে। সুইডিশ নাগরিকদের অনেকেই গোপনে তাদের সহায়তাও করে। এভাবেই ইউরোপের অনেক দেশেই অভিবাসীরা থেকে যাচ্ছে।

ইইউ থেকে ব্রিটেনের বের হওয়ার (ব্রেক্সিট) প্রক্রিয়া চলছে এখন। গত বছরই ব্রেক্সিট-পরবর্তী ব্রিটেনের অভিবাসন পরিকল্পনা ফাঁস হয়েছে পত্রিকায়। যেখানে বলা হয়েছে, ব্রেক্সিটের পর ব্রিটেন শুধু দক্ষ পেশাদার অভিবাসীদের প্রবেশ করতে দেবে। বিশেষ করে যারা ইউরোপ থেকে আসবে তাদের কমপক্ষে এক বছরের কাজের চুক্তি থাকতে হবে। ব্রিটেনে আসার তিন থেকে পাঁচ বছর পর্যন্ত ভিসা নিয়ে থাকার পর স্থায়ীভাবে বসবাসের অনুমতি লাভ করবে। এই সময়ের পর ইউরোপ থেকে তারা পরিবার আনতে পারবে। ব্রিটিশ হোম অফিস সূত্র এরই মধ্যে জানিয়েছে, ব্রেক্সিটের পর ব্রিটেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোর বিশেষ দক্ষতাসম্পন্ন কর্মীদের স্বাগত জানাবে। ব্রিটেন চায় অভিবাসীরা কেবল থাকার জন্য যেন না আসে, ব্রিটেনের সমাজব্যবস্থায় ও অর্থনীতিতে ভূমিকা এবং নিজেদের স্বার্থের জন্যও তারা যেন আসে। যদিও ফাঁস হওয়া প্রস্তাবটি সরকারের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নয়, তবু ব্রেক্সিটের পর ইইউ-সংক্রান্ত ইমিগ্রেশন আইন ব্রিটেন কিভাবে সাজাবে, সরকারি এই নথিপত্রের মাধ্যমে এর একটি ধারণা পাওয়া যাচ্ছে। সব মিলিয়ে ব্রেক্সিট কার্যকরের পর ইউরোপের অভিবাসন ব্যবস্থাপনা আরো জটিল আকার ধারণ করবে।

পাশ্চাত্যজুড়ে বিশেষ করে ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রে যখন অভিবাসনবিরোধী বর্ণবিদ্বেষী রাজনীতির উত্থান ঘটছে, তখন ফরাসি ফুটবল দলের ছবি পুরো ফ্রান্স ও ইউরোপকে মনে করিয়ে দেবে যে, এই অর্জনে অভিবাসী জনগোষ্ঠীর অবদানই ছিল সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। তুর্কি দৈনিক সাবাহর হিসাবে বিশ্বকাপে ফরাসি দলের হয়ে যারা খেলেছেন, তাদের ৭৮ শতাংশই হচ্ছে অভিবাসী। এবারের বিশ্বকাপে অংশ নেওয়া দলগুলোর মধ্যে ফ্রান্স দলেই অভিবাসীর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। আবার এই অভিবাসীদের মধ্যে এক-তৃতীয়াংশই মুসলমান। ক্রোয়েশিয়ার বিরুদ্ধে চারটি গোলের আত্মঘাতীটি ছাড়া অন্য তিনটির মধ্যে দুটি করেছেন পল পগবা ও এমবাপ্পে। পগবার জনকরা এসেছেন গিনি থেকে, আর এমবাপ্পের মা আলজেরীয় ও বাবা ক্যামেরুনের। তাই এবারের ফুটবল বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্স নিঃসন্দেহে অভিবাসনের সুফল পেয়েছে। আশা করছি, বিষয়টি মাথায় রাখবে পুরো ইউরোপ।

মোহাম্মদ জমির: সাবেক রাষ্ট্রদূত এবং প্রধান তথ্য কমিশনার

সংবাদটি শেয়ার করুন

মতামত বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :