চালকের সর্বোচ্চ সাজা পাঁচ বছরের জেল, জরিমানা

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ০৬ আগস্ট ২০১৮, ১৬:০৫ | প্রকাশিত : ০৬ আগস্ট ২০১৮, ১৪:২১

চালকের অবহেলায় সড়ক দুর্ঘটনায় কারও মৃত্যু হলে সর্বোচ্চ সাজা পাঁচ বছরের কারাদণ্ড আর জরিমানার বিধান রেখে সড়ক পরিবহন আইনের খসড়ায় চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। তবে সর্বোচ্চ জরিমানা কত হবে, সে বিষয়ে কোনো কিছু বলা হয়নি।

সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে বহুল আলোচিত এই আইনটির খসড়া অনুমোদন করা হয়। সংসদের আগামী অধিবেশনে আইনটি পাসের জন্য তোলা হবে। বৈঠক শেষে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব শফিউল আলম ব্রিফিং করে বিস্তারিত জানান।

বেপরোয়া যান চলাচল বা অবহেলায় শাস্তি হিসেবে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড হলেও মৃত্যুদণ্ডেরও সুযোগ থাকছে যদি গাড়িচাপা দিয়ে ইচ্ছা করে কাউকে হত্যা করা হয়।

গত ২৯ জুলাই ঢাকার বিমানবন্দর সড়কে বাস চাপায় দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যুর পর নিরাপদ সড়কের দাবিতে যে নয় দফা দাবি জানানো হয়েছিল, তাতে দুর্ঘটনায় চালকের সর্বোচ্চ সাজা হিসেবে ফাঁসির দাবি জানানো হয়েছিল। পরিবহন মালিক শ্রমিকরা বরাবর এই সাজার বিরোধী। এমন সাজা হলে গাড়ি চালানো বন্ধের হুমকিও এসেছে নানা সময়।

এই আন্দোলন চলাকালে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের জানিয়েছিলেন আজকের মন্ত্রিসভার বৈঠকে আইনটি অনুমোদন হবে আর এটি পাস হলে গণপরিবহনে শৃঙ্খলা ফেরাতে আরও কার্যকরভাবে কাজ শুরু করতে পারবেন তারা।

২০১৭ সালের মার্চে আইনটির খসড়ায নীতিগত অনুমোদন দিয়েছিল সরকার। সে সময় বেপরোয়া বেপরোয়া যান চলাচল ও অবহেলাজনিত মৃত্যুর জন্য তিন বছরের কারাদণ্ড অথবা ২৫ লাখ টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডের বিধানের কথা রাখা হয়েছিল। তবে এই সাজা যথেষ্ট নয়, এ নিয়ে কথা উঠে। আর দেড় বছর পর চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়া খসড়ায় কারাদণ্ড বাড়ানো হলেও কমানো হয়েছে জরিমানা।

চূড়ান্ত খসড়ার ১০৩ ধারায় বলা হয়েছে, ‘মোটরযান চালনাজনিত কোন দুর্ঘটনায় গুরুতরভাবে আহত হলে বা প্রাণহানির কোন ঘটনা ঘটলে তৎসংক্রান্ত অপরাধসমূহ পেনাল কোড (দণ্ডবিধি) ১৮৬০ অনুসারে অপরাধ বলে গণ্য হবে।’

“তবে শর্ত থাকে যে পেনাল কোডের ১৮৬০ এর সেকশন ৩০৪ এর ‘বি’ এ যাহা কিছুই থাকুক না কোন ব্যাক্তির বেপোরোয় ও অবহেলাজনিত মোটরযান চালনার কারণে সংঘটিত দুঘটনায় কবলিত কোন ব্যক্তি গুরুতরভাবে আহত হলে বা প্রাণহানি হলে অপরাধে জড়িত ব্যক্তির অনধিক ৫ বছরের কারাদণ্ড বা অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হইবে।’

আইনে আগে ছিল কারাদণ্ড ছিল সাত বছর, পরে তা করা হয় তিন বছর। কিন্তু বর্তমানে পরিস্থিতি বিবেচনা ও সকল স্টেকহোল্ডারদের সাথে কথা বলে তা পাঁচ বছর নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে অর্থদণ্ডের বিষয়টি পরিস্থিতি বুঝে নির্ধারণের সুযোগ রাখা হয়েছে’-ব্রিফিংয়ে বলেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব।

নতুন আইনে জরিমানার বিষয়টি সুনির্দিষ্ট না থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘এটি পুলিশ তদন্ত করবে। পরিবেশ-পরিস্থিতির উপর জরিমানা নির্ধারণ করা হবে।’

আরও যা আছে খড়সায়

আইনে ড্রাইভিং লাইসেন্স ছাড়া গাড়ি চালালে সর্বোচ্চ ৬ মাসের কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ ২৫ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডের বিধান করা হয়েছে। কেউ এই অপরাধ করলে তাকে বিনা পরোয়ানায় গ্রেপ্তার করা যাবে। বর্তমানে এই অপরাধে তিন মাসের কারাদণ্ড বা পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা রয়েছে।

ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়ার ক্ষেত্রে ন্যূনতম বয়স নির্ধারণ করা হয়েছে ১৮ বছর। তবে গণপরিবহন চালানোর জন্য পেশাদার হলে বয়স হতে হবে কমপক্ষে ২১ বছর।

আবার চালকের ন্যূনতম শিক্ষাগত যোগ্যতা নির্ধারণ করা হয়েছে অষ্টম শ্রেণি পাস। বর্তমান আইনে এমন কোনো বিধান নেই।

আইনে লাইনেন্সের ক্ষেত্রে প্রথমবারের মতো উন্নত দেশের আদলে ১২টি পয়েন্ট রাখার কথা বলা হয়েছে। ট্রাফিক আইন অমান্যে বা সাজা পেলে পয়েন্ট কাটা যাবে একটি করে। সব মিলিয়ে পয়েন্ট শূন্য হলে তার লাইসেন্স বাতিল হবে।

আবার লাইসেন্স পাওয়াই শেষ কথা না। কেউ মানসিক বা শারীরিকভাবে অসুস্থ হলে, মদ্যপ হলে বা অন্যান্য অপরাধে সাজাপ্রাপ্ত হলে লাইসেন্স স্থহিত থাকবে। সুস্থতার প্রমাণ পেলেই লাইসেন্স আবার কার্যকর হবে।

নিবন্ধন ছাড়া গাড়ি চালালে ছয় মাসের কারাদণ্ড ও ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করা যাবে ।

ফিটনেস না থাকা মোটরযান চালালে বর্তমানে শাস্তি সর্বোচ্চ ছয় মাসের কারাদণ্ড বা ২৫ হাজার টাকা জরিমানা দ্বিগুণ করে সর্বোচ্চ এক বছরের কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ এক লাখ টাকা জরিমানা করার প্রস্তাব করা হয়েছে চুড়ান্ত খসড়ায়। এ শাস্তি পাবে মূলত গাড়ির মালিক।

গাড়ির চেসিস বা আকার আকৃতির পরিবর্তন করলে বর্তমান আইনে দুই বছরের কারাদণ্ড এবং পাঁচ হাজার টাকা অর্থদণ্ডের বিধান বাড়িয়ে তিন বছরের কারাদণ্ড এবং তিন লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। তবে কারাদণ্ড কখনই একবছরের নিচে দেওয়া যাবে না।

মৃত্যু নিরাপদ সড়কের দাবিতে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে সরকার দ্রুত একটি আইনের খসড়া চূড়ান্ত করেছে। এই আইনে উল্লেখ আছে, বেপরোয়াভাবে বা অবহেলা করে গাড়ি চালানোর কারণে কেউ গুরুতর আহত বা নিহত হলে মামলা হবে দণ্ডবিধির ৩০৪ (খ) ধারায়। এই ধারায় সাজা সর্বোচ্চ পাঁচ বছর কারাদণ্ড বা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড বিধান রাখা হয়েছে। আর জরিমানা আনলিমিটেড।

চালকের কর্মঘণ্টাও নির্দিষ্ট করে দেয়ার কথা বলা হয় খসড়ায়। তবে মোট কত ঘণ্টা কাজ করচেন চালকরা, সেটি এই আইনে উল্লেখ নেই। সচিব জানান, এটি পরে প্রজ্ঞাপন দ্বারা জানিয়ে দেয়া হবে।

আবার নতুন আইনে রাজধানী বা দেশের কোনো এলাকায় বা সারাদেশে মোটরযানের সংখ্যা নির্ধারণ করে দিতে পারবে সরকার। কোন যানবাহন কত বছর চালানো যাবে, তাও নির্ধারণ করে দিতে পারবে সরকার।

মোটরযানের গতিসীমা এবং শব্দমাত্রা নিয়ন্ত্রণের কথাও বলা আছে। পার্কিং এর স্থান নির্দিষ্ট করে দেয়ার কথাও বলা আছে।

চালক কোনোভাবেই সহকারীকে গাড়ি চালাতে দিতে পারবে না, মদ্যপ বা নেশাগ্রস্ত অবস্থায় গাড়ি চালানো যাবে না।

দুর্ঘটনায় কেউ ক্ষতিগ্রস্ত হলে তাকে বা তার উত্তরাধীকারকে আর্থিক সহায়তা দিতে বা চিকিৎসার খরচ যোগাতে তহবিল করার কথাও বলা আছে।

ঢাকাটাইমস/০৬আগস্ট/এমএম/ডব্লিউবি

সংবাদটি শেয়ার করুন

জাতীয় বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :