নির্বাচনী ইশতেহার হতে পারে ‘নিরাপদ সড়ক আন্দোলন’

প্রকাশ | ০৭ আগস্ট ২০১৮, ১৮:৩৭

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিরাপদ সড়ক আন্দোলন বিষয়টি নির্বাচনী ইশতেহার (মেনুফেস্টু) হিসেবে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পাবে আর সেটা রাজনৈতিক দলগুলো কাজে লাগানোর চেষ্টা করবেন বলে মনে করছেন ইন্টারন্যাশনাল নিউজ এজেন্সির সম্পাদক রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ।

সোমবার রাতে রোবায়েত ফেরদৌসের সঞ্চালনায় বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল নিউজ টুয়েন্টিফোরের টকশো ‘জনতন্ত্র গণতন্ত্র’ আলোচনায় অংশ নিয়ে এসব কথা বলেন রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ।

২৯ জুলাই বিমানবন্দর সড়কের এমইএসে বাসচাপায় শহীদ রমিজউদ্দিন কলেজের দুই শিক্ষার্থরি মৃত্যুর ঘটনায় পরদিন থেকে রাজপথে আন্দোলনে নামে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলার শিক্ষপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। ‘নিরাপদ সড়ক চাই’ নাম পাওয়া এই ছাত্র আন্দোলনের যৌক্তিকতা সরকারসহ দেশের সব শ্রেণির মানুষের সমর্থন পায়। টানা ছয় দিন চলা এই আন্দোলনে সারা দেশ প্রায় অচল হয়ে পড়েছিল।  

জনপ্রিয় এই আন্দোলনের দাবি আগামী নির্বাচনে একটা বড় বিষয় হতে পারে বরে মনে করেন জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, ‘আগামী নির্বাচনে নিরাপদ সড়ক আন্দোলন বিষয়টি মেনুফেস্টু হিসেবে ব্যবহার করবে রাজনৈতিক দলগুলো। আর এই বিষয়টি রাজনৈতিক দলগুলো একটা মেজর ইস্যু হিসেবে সামনে নিয়ে আসার চেষ্টা করবে।’

সর্বোচ্চ সাজা পাঁচ বছর ও পাঁচ লাখ টাকা জরিমানার বিধান রেখে সোমবার সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮ অনুমোদন করেছে মন্ত্রিসভা। তবে এখনই নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলন শেষ হয়ে যাবে না উল্লেখ করে এই সম্পাদক বলেন, ‘মন্ত্রিসভায় আইনের যে খসড়া অনুমোদন হয়েছে বা আইনটা কার্যকর হলেও এই আন্দোলন শেষ হয়ে গেল এমন কোনো কথা নয়। এই আন্দোলনের রেশ আগামী চার-পাঁচ মাস চলতে থাকবে।’

মন্ত্রিসভায় অনুমোদিত সড়ক পরিবহন আইন অনুযায়ী, বেপরোয়াভাবে বা অবহেলা করে গাড়ি চালানোর কারণে কেউ গুরুতর আহত বা নিহত হলে দণ্ডবিধির ৩০৪ (খ) ধারায় মামলা দায়ের হবে।

এই ধারায় সাজা সর্বোচ্চ পাঁচ বছর কারাদণ্ড বা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড এবং সর্বোচ্চ পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা। তবে গাড়ি চালানোর কারণে কারও নিহত হওয়ার ঘটনা তদন্তে হত্যা বলে প্রমাণিত হলে ফৌজদারি আইনে মৃত্যুদণ্ডের বিধান প্রয়োগ হবে।

নিরাপদ সড়ক আন্দোলন শিক্ষার্থীরা শুরু করলেও পরে সেটি তৃতীয় পক্ষের হাতে চলে গেছে বলে মনে করেন রিয়াজ উদ্দিন। বলেন, ‘এই আন্দোলন বাচ্চারা শুরু করেছে, বাচ্চাদের হাত থেকে সেটা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের হাতে গেছে। আর এখন এটা তাদের হাত থেকে রাজনীতিদিদদের হাতে চলে গেছে। এই রকম পরিস্থিতিতে যারা ক্ষমতায় যেতে চায় তারা তো বসে থাকবে না, তারা সুযোগ কাজে লাগাবে। এটাই স্বাভাবিক, যেটা অতীতেও হয়েছে।’

নিরাপদ সড়ক আন্দোলন প্রেক্ষাপটে ক্ষমতাসীনদের ঝামেলায় জড়ানো উচিত হয়নি মন্তব্য করে এই সম্পাদক বলেন, ‘আপনি ছাত্রদের শান্তভাবে ঘরে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে পারতেন। সেটা না করে আপনি এটাকে কনফ্লিকটের মধ্যে নিয়ে গেলেন। এটা ঠিক হয়নি। সরকারের এখন দায়িত্ব হবে শান্ত পরিবেশ তৈরি করা। প্রিন্সিপাল আর হেডমাস্টারকে ডেকে এটা করা যাবে না, এটা কাউন্সিলিং করে করতে হবে।’

উপস্থাপক রোবায়েত ফেরদৌস এই আন্দোলনের উপকারিতা সম্পর্কে জানতে চাইলে রিয়াজ উদ্দিন বলেন, ‘এই আন্দোলনের মাধ্যমে রাষ্ট্রযন্ত্রের ভেতরে যে ঘাটতি আর প্রচুর অনিয়ম রয়েছে তা বের হয়েছে এসেছে। এটা শুধু যে সড়কে হচ্ছে তা কিন্তু না, অন্য সেক্টরেও হচ্ছে। কোথাও আইন নেই; যে যেভাবে পারছে তার ক্ষমতা প্রদর্শন করছে। না হলে মন্ত্রীর গাড়ির লাইসেন্স নেই, সেটা আমাদের দেখতে হতো না।’

‘এই আন্দোলনের কারণে বিষয়গুলো বের হয়েছে, এগুলো এখন ঠিক করতে হবে। এই আন্দোলন চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে যে এখানে সংস্কার করতে হবে।’

নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের সময় শিক্ষার্থীরা সড়কে অবস্থান নিয়ে ট্রাফিক কন্ট্রোল করেছে। গাড়ি ও চালকের লাইসেন্স কাগজপত্র পরীক্ষা করেছে। তাদের অধিকাংশ গাড়ির কোনো কাগজপত্র পায়নি তারা। এসব গাড়ির বিরুদ্ধে তারা পুলিশকে দিয়ে মামলা করিয়েছে। সড়কে চলাচলে শৃঙ্খলা আনারও চেষ্টা করেছে শিক্ষার্থীরা। আর তাদের এ কাজে সহযোগিতা করেছে চালকরা।

(ঢাকাটাইমস/০৭আগস্ট/এনআই/মোআ)