কয়লা ‘উধাও’, অপেক্ষায় রাখলেন জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ০৮ আগস্ট ২০১৮, ১৬:২১ | প্রকাশিত : ০৮ আগস্ট ২০১৮, ১৬:১৭
ফাইল ছবি

দিনাজপুরের বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি থেকে এক লাখ ৪৪ হাজার টন কয়লা ‘উধাও’য়ের বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে আরও কিছুদিন সময় লাগবে বলে জানিয়েছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু। জানান, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের তদন্ত প্রতিবেদন পেলে এ ক্ষেত্রে ‘জড়িতদের’ বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

জ্বালানি দিবস উদযাপন উপলক্ষে বুধবার সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী এসব কথা বলেন।

দেশ জুড়ে আলোড়ন তোলা এই ঘটনায় কী ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হতে পারে- এমন প্রশ্নে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘দেখুন কী ব্যবস্থা আসছে।’

২০০৫ সালের ১০ অক্টোবর বাণিজ্যিকভাবে কয়লা উৎপাদন শুরু করে দিনাজপুরের বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি। উৎপাদনের শুরু থেকে চলতি বছরের ২৭ জুন পর্যন্ত কয়লা উৎপাদন করা হয়েছে প্রায় ১ কোটি ১ লাখ ৬৬ হাজার মেট্রিক টন কয়লা। যার মধ্যে এক লাখ ৪৪ হাজার টনের কোনো হিসাব মিলছে না।

বিএনপি, তত্ত্বাবধায়ক এবং বর্তমান আমলে-মোট তিনটি সরকারের সময়ই এই কয়লা গায়েব হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। তবে সম্প্রতি কয়লার অভাবে বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ হয়ে যাওয়ার প্রেক্ষিতে বিষয়টি সামনে এসেছে।

খনি কর্তৃপক্ষ অবশ্য একে সিস্টেম লস হিসেবে দেখাচ্ছেন। খনি থেকে কয়লা উত্তোলন, পরিবহন ও বিক্রির সময় যে এই কয়লা ‘ক্ষতি’ হয়েছে বলে দাবি তাদের। এক কোটি টনের মধ্যে দেড় লাখের কম, অর্থাৎ শতকরা ১.৫ শতাংশেরও কম কয়লা ‘সিস্টেম লস’ হতে পারে বলে দাবি তাদের।

অবশ্য সরকার এই ব্যাখ্যা মেনে নিতে রাজি নয়। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, পেট্রোবাংলা, পুলিশ ও দুর্নীতি দমন কমিশনের তিনটি দল এই বিষয়ে তদন্ত চালাচ্ছে। এরই মধ্যে পেট্রোবাংলার কমিটির প্রতিবেদন পেয়েছে মন্ত্রণালয়।

কয়লা ‘গায়েবে’ জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার অগ্রগতির বিষয়ে জানতে চাইলে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘কয়লা গায়েবের বিষয়ে একটা সাময়িক তদন্ত হয়েছে। বড় আকারে তদন্তের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে তারা গিয়েছিলেন। তারা এখনও রিপোর্ট পেশ করেননি। আশা করছি, এ সপ্তাহের মধ্যে রিপোর্ট পেশ করবেন। তারপর আমরা দাপ্তরিকভাবে ব্যবস্থা নেব।’

‘ইতোমধ্যে মামলা হয়েছে, সেটারও একটা তদন্ত চলছে। আমরা কোনোভাবে কোনো জায়গায় কোনো গাফিলতিকে প্রশ্রয় দেব না। আমরা কোনো দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দেব না। আগামীতে দুর্নীতিমুক্ত জ্বালানি ব্যবস্থা তৈরি করতে চাই।’

প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে তদন্ত করা ছাড়াও এক্সপার্ট, শিক্ষক, এক্টিভিস্টরা আছেন যারা এগুলো নিয়ে কাজ করেন, তারা আমাদের সাথে আলোচনা করেছেন। তারা বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় বক্তব্য লিখেছেন। সেগুলোও আমরা বিবেচনায় নিয়ে আসছি। সবকিছু মিলে মনে করছি একটা ভালো ও সঠিক রিপোর্ট আমরা পেতে পারি। সেই অনুপাতে ব্যবস্থা নেব।’

নসরুল হামিদ বলেন, ‘এই কাজ ভবিষ্যতের জন্য এটা আমাদের পথ নির্দেশক হিসেবে কাজ করবে। ভবিষ্যতে যাতে এ রকম অঘটনা না ঘটে সেটারও একটা ব্যবস্থা নিচ্ছি।’

‘এটা তো হয়ে আসছে গত ১৩ বছর ধরে। শেখ হাসিনার সরকারের সময়েই কিন্তু এ দুর্নীতিগুলো ধরা পড়ছে। এ জায়গাটায় অন্তত কনসিডার করে আপনারা কিছুদিন অপেক্ষা করেন। দেখুন কী ব্যবস্থা নেয়া হয়।’

কয়লা গায়েব হওয়ার তদন্ত রিপোর্ট প্রকাশ করা হবে কি না জানতে চাইলে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘অবশ্যই। সবই ট্রান্সপারেন্ট থাকবে।’

‘মন্ত্রণালয়ের দায় নেই’

এর দায় মন্ত্রণালয় নেবে কি না, জানতে চাইলে জবাব আসে, ‘কয়লা একটা কোম্পানির অধীনে কাজ করে। তাদের দেখাশোনার বিষয়টি তাদের নিজস্ব ব্যাপার। মন্ত্রণালয় ওপর থেকে ওভারলুক করতে পারে। পলিসি মেকিংয়ে মন্ত্রণালয় সাপোর্ট দেয়। প্রতি দিনের হিসাব, গড় হিসাব, কত টাকা সেল হলো- এটা তো মন্ত্রণালয়ের দেখার বিষয় নয়, দায়িত্বও নয়। সুতরাং ওখানে টেনে-হিঁচড়ে মন্ত্রণালয়কে ঢুকিয়ে দিলে আরও কমপ্লেক্স তৈরি হবে।’

‘যারা দায়ী, বিগত দিনের কর্মকর্তারা আছেন ওই কোম্পানিতে তাদেরও যদি গাফিলতি থাকে, অডিট কোম্পানিরগুলোর গাফিলতি যদি থাকে সবাইকে জবাবদিহিতায় আনতে হবে।’

ঢাকাটাইমস/০৮আগস্ট/এমএম/ডব্লিউবি

সংবাদটি শেয়ার করুন

জাতীয় বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :